কাগজ প্রতিবেদক : স্বার্থের দ্ব›দ্ব থেকে মুক্ত হয়ে সংসদ বা নির্বাহী বিভাগের কার্যক্রম পরিচালনা করার বিষয়ে কয়েকটি প্রস্তাব দিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। এতে বলা হয়েছে, একই ব্যক্তি একই সঙ্গে সরকারপ্রধান (প্রধানমন্ত্রী), দলীয়প্রধান ও সংসদ নেতা থাকতে পারবেন না। এক ব্যক্তি দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হিসেবে অর্থ পাচার প্রতিরোধে টাস্কফোর্স গঠনসহ ৫৫টি সুপারিশও দিয়েছে সংগঠনটি।

গতকাল বুধবার টিআইবির ধানমন্ডির কার্যালয়ে ‘নতুন বাংলাদেশ : গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধে অন্তবর্তীকালীন সরকারের করণীয়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী সংগঠনটির বাংলাদেশ শাখার নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। এ সময় টিআইবির উপদেষ্টা ড. সুমাইয়া খায়ের উপস্থিত ছিলেন।

টিআইবির ৫৫ দফা সুপারিশের মধ্যে অন্যতম হলো- ব্যাংকিং খাতে ঋণ জালিয়াতি, সব ধরনের প্রতারণা এবং অনিয়ম দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বাণিজ্যিক ব্যাংকের পরিচালক ও কর্মকর্তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা। ব্যাংকিং খাতের সমস্যা সমাধানে ব্যাংক কমিশন গঠন করা এবং বিদ্যুৎ খাতে ক্যাপাসিটি চার্জ বাতিল করা। জাতীয় সংসদে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের সংসদীয় ব্যবস্থা প্রবর্তন করা। নির্বাচিত সংসদ সদস্যসহ জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে গণঅনাস্থা প্রকাশের মাধ্যমে অপসারণ এবং ওই এলাকায় নতুন নির্বাচনের ব্যবস্থা করা।

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন দল নিরপেক্ষ করতে নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে হবে। এছাড়া নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা খর্বকারী গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে এর আগে আনা সব সংশোধনী বাতিল করতে হবে। সংসদীয় স্থায়ী কমিটি শক্তিশালী করে নির্বাহী বিভাগের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং রাজনৈতিক দলগুলো সংস্কারে অভ্যন্তরীণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে একটি রূপরেখা প্রণয়ন করার সুপারিশ করা হয়েছে।

সুপারিশমালায় আরো রয়েছে, উচ্চ আদালতে বিচারপতি নিয়োগে সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ সাপেক্ষে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা বা আইন প্রণয়ন করতে হবে। সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে বিচারপতি অপসারণের এখতিয়ার সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের ওপর ন্যস্ত করতে হবে। সব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনকে দলীয় প্রভাবমুক্ত করতে ঢেলে সাজাতে হবে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য পুলিশের বাইরে একটি স্বাধীন কর্তৃপক্ষ গঠন করা প্রয়োজন। সরকারি চাকরি আইন-২০১৮ এবং সরকারি কর্মচারী (আচরণ বিধি) ১৯৭৯ হালনাগাদ করতে হবে।

বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বন্ধ করার সুপারিশ করেছে টিআইবি। এছাড়া অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা, সরকারি কর্মচারীদের ফৌজদারি আইনে গ্রেপ্তারে সরকারের অনুমতির বিধান বাতিল করা, সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে সংস্কার করা, জাতীয় নিরাপত্তার অজুহাতে গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজের কার্যক্রমের ওপর গোয়েন্দা সংস্থার হস্তক্ষেপ ও নজরদারি বন্ধ করতে হবে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও সংবাদ মাধ্যমে বস্তুনিষ্ট তথ্য পরিবেশনে বাধা সৃষ্টিকারী ধারা আইন থেকে বাতিল করতে হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, এসব সংস্কার করতে কিছুটা সময় লাগবে। তবে কতটা লাগবে তা নির্ধারণ করবে অন্তর্বর্তী সরকার। কারণ এই সরকার জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে এসেছে।