×

শেষের পাতা

শিক্ষা উপদেষ্টা

পরীক্ষা বাতিল অনভিপ্রেত সিদ্ধান্ত নেবেন বিশেষজ্ঞরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

পরীক্ষা বাতিল অনভিপ্রেত সিদ্ধান্ত নেবেন বিশেষজ্ঞরা

 ‘অনভিপ্রেত’ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে স্থগিত থাকা এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ। স্থগিত হওয়া এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত ‘রিভিউ’ হবে কিনা- সে সিদ্ধান্ত নেবে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড। পরীক্ষা বাতিল হলে তাদের মূল্যায়ন কীভাবে হবে তা-ও বোর্ড সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, এটা দুঃখজনক। বাকি পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এই বিষয়ে আরো যৌক্তিক চিন্তাভাবনার অবকাশ ছিল। ১২-১৩ লাখ শিক্ষার্থী পরীক্ষা দেবে। আমাদের এ বিষয়ে বিচার বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা ছিল। তবে মঙ্গলবার একটি অনভিপ্রেত ঘটনার কারণে এইচএসসির স্থগিত পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। গতকাল বুধবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। এইচএসসির ফল প্রকাশের বিষয়টি বিশেষজ্ঞদের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন তিনি।

এদিকে গতকাল মঙ্গলবার পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও সিস্টেম এনালিস্টদের নিয়ে বৈঠকে বসেন আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি এবং ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার। তিনি বলেন, যে পরীক্ষাগুলো হয়েছে, সেগুলোর নম্বর এবং যে পরীক্ষাগুলো হয়নি সেগুলোর সাবজেক্ট ম্যাপিং বা কোন উপায়ে ফল প্রকাশ করা যায়; সে বিষয়ে খসড়া প্রস্তাবনা পাঠাতে বোর্ডগুলোর পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও সিস্টেম অ্যানালিস্টদের বলা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে খসড়া প্রস্তাবনা পেলে, আমরা তা যাচাই-বাছাই করে মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়ার পর ফল প্রকাশ করা হবে।

অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, যে পরীক্ষাগুলো হয়েছে, সেগুলোর নম্বর তো আমাদের হাতে আছে। যেগুলো হয়নি, সেগুলোর জন্য সাবজেক্ট ম্যাপিং করা যেতে পারে। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও সিস্টেম অ্যানালিস্টদের প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পাওয়ার পর এ বিষয়ে মন্তব্য করা সম্ভব হবে। ব্যবহারিক পরীক্ষার নম্বর কীভাবে যুক্ত হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যে বিষয়ের পরীক্ষাগুলো হয়েছে কিন্তু ব্যবহারিক পরীক্ষা হয়নি; ওই বিষয়গুলোর ব্যবহারিকের নম্বর সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে হতে পারে। আসলে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও সিস্টেম অ্যানালিস্টদের প্রস্তাবনা বা তাতে অনুমোদন পাওয়ার আগে এ বিষয়ে চূড়ান্ত কিছুই বলা যাচ্ছে না।

সভায় অংশ নেয়া একাধিক পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক জানান, ২০২০ সালের এইচএসসি পরীক্ষার ফল সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে দেয়া হয়েছিল। ২০২১ সালেও তিনটি বিষয়ের পরীক্ষা নিয়ে অন্য বিষয়গুলোর ফল সাবজেক্ট ম্যাপিং করে দেয়া হয়েছিল। আমাদের সামনে দুটি উদাহরণ রয়েছে। সে অভিজ্ঞতার আলোকে একটি প্রস্তাবনা তৈরি করতে সব পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকদের বলা হয়েছে। আমরা তা প্রস্তুত করে জমা দেব।

প্রসঙ্গত, গত ৩০ জুন শুরু হওয়া এইচএসি পরীক্ষা অর্ধেকের মতো শেষ হওয়ার পর তাতে ছেদ পরে। কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংস পরিস্থিতিতে বাকি পরীক্ষাগুলো কয়েক দফা স্থগিতের পর ১১ সেপ্টেম্বর থেকে শুরুর কথা ছিল। কিন্ত পরীক্ষায় বসতে অনাগ্রহী পরীক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমে গত মঙ্গলবার সচিবালয়ে ঢুকে বিক্ষোভ দেখালে অবশিষ্ট পারীক্ষাগুলো বাতিল করে অন্তর্বর্তী সরকার। ফলাফল কীভাবে দেয়া হবে সে সিদ্ধান্ত পরে জানানো হওয়ার কথা জানিয়েছিলেন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার।

এ বিষয়ে গতকাল বুধবার শিক্ষা উপদেষ্টার বক্তব্য জানতে চাইলে ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, এইচএসসি পরীক্ষার বিষয়ে আমার একার সিদ্ধান্ত নেয়ার কিছু নেই, জানিও না। বোর্ডগুলো সিদ্ধান্ত নেবে। এর আগে মঙ্গলবার রাতে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্তের সমালোচনা এসেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলমের কাছ থেকেও। এই সিদ্ধান্তকে ‘অযৌক্তিক’ বলেছেন তিনি। পাশাপাশি নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থীরা লিখিত বিবৃতি দিয়ে পরীক্ষা বাতিলের সমালোচনা করেছে।

এ অবস্থায় পরীক্ষা বাতিলের বিষয়টি কীভাবে দেখছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, কালকে (মঙ্গলবার) অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটেছে। এ সম্পর্কে আমি এখনো চিন্তাও করিনি। আমার মাথায় এটা ঢুকছে না এখন। তিনি বলেন, এটা নিয়ে আমি এককভাবে কিছু করব না। বোর্ডগুলো বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে। এইচএসসির এবার অর্ধেক পরীক্ষা হয়ে গেছে, সব মিলিয়ে তারা কী করবেন, তারা সিদ্ধান্ত নেবেন। এই পরীক্ষার যে কোনো ঘোষণা ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের দেয়ার কথা। তিনি যে ঘোষণা দিয়েছেন সেটাই ঘোষণা। এ সময় এসব শিক্ষার্থীর পরবর্তী পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেয়া নিয়েও কথা বলেন শিক্ষা উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কীভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেবে, সেটা আমাদের আওয়তায় নেই। তবে তারা যদি ভর্তি পরীক্ষার জন্য আরো যাচাই-বাছাই করতে চায়, সে সুযোগ তো রয়ে গেছে। যেহেতু এইচএসসির বাকি পরীক্ষাগুলো হচ্ছে না। এ সময় বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের দায়িত্ব ছাড়ার প্রেক্ষাপটে ওইসব প্রতিষ্ঠানে যোগ্য ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য শিক্ষকদের থেকে উপাচার্য নিয়োগের চেষ্টা চলছে বলে জানান উপদেষ্টা। দেশে প্রায় অর্ধশত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৪২টিতেই এখন উপাচার্য ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদ শূন্য রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ক্লাস পরীক্ষাও ব্যাহত হচ্ছে। একই অবস্থা বিরাজ করছে অন্যান্য বেসরকারি কলেজ ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে।

উপাচার্য নিয়োগ প্রসঙ্গে ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, আগে যে সুবিধা ছিল, বিশেষ করে যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে, তাদের শিক্ষকদের একটা সংগঠন থাকে। সেখান থেকে টেনে একজনকে ভিসি বানিয়ে দেয়া হতো। আমাদের ক্ষেত্রে তো সেই সুযোগ পাচ্ছি না। এখন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব শিক্ষককে আমরা চিনি, তাদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। শিক্ষাগত যোগ্যতা, ব্যক্তিত্ব ও প্রশাসনিক দক্ষতার দিক থেকে যারা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য এরকম শিক্ষকদের তালিকা তৈরি করছি। যত দ্রুত সম্ভব আমরা প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নিয়োগ দেব। প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একত্রে নিয়োগ দিয়ে দেব ভাবছি। মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলো থেকেও অনেক শিক্ষককে পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে।

অনেকে আবার রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে নিজে থেকে সরে যাচ্ছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, দেশের বেসরকারি কলেজ ও অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে রাজনীতিকীকরণ করা হয়েছিল। তাতে শিক্ষক নিয়োগে যে অনিয়ম হয়েছে সেটা ছিল পুঞ্জীভূত অনিয়ম। অত্যন্ত অসঙ্গত কারণে অনেককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। এরকম হাজার হাজার অভিযোগ আমার কাছে এসেছে। এগুলো নীতিগত সিদ্ধান্ত ছাড়া তো ঠিক করা যাবে না। তবে কথা হচ্ছে- শিক্ষাঙ্গনে ভদ্রতা বজায় রাখতে হবে, বল প্রয়োগ করা যাবে না, ব্যক্তিগতভাবে অপমানিত করা যাবে না। সারাদেশে শিক্ষাঙ্গনে নানা ধরনের বিশৃঙ্খলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যত ধরনের অন্যায় আছে আমরা সেগুলো চিহ্নিত করব। এখন তো শুরু করেছি প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায় থেকে, কিন্তু আমি বলব বিশৃঙ্খলা করা যাবে না। রাতারাতি সবকিছু পরিবর্তন করা যাবে না।

পাঠ্যপুস্তক ছাপাতে এবার কোনো ধরনের দুর্নীতি হবে না বলেও আশ্বাস দিয়েছেন ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে যেসব বই ছাপার দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল তা বাতিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এবার বই ছাপার মান ও কাগজের মান ভালো হবে। কারণ, এবার দুর্নীতি হবে না। পাশাপাশি ১ জানুয়ারি আগামী শিক্ষাবর্ষের বিনামূল্যের পাঠ্যবই দেয়ার চেষ্টা করবে সরকার।

নবম শ্রেণির কারিকুলাম ও পাঠ্যবই বদলের বার্তা শিক্ষা উপদেষ্টার : নবম শ্রেণি থেকে আবারো বিভাগভিত্তিক কারিকুলাম এবং বইয়ের পরিবর্তন আসবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ। গতকাল বুধবার সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, নবম শ্রেণি থেকে আবারো বিষয় ও বিভাগভিত্তিক অর্থাৎ মানবিক, বিজ্ঞান এবং বাণিজ্য বিভাগ আলাদা থাকবে। এছাড়া পাঠ্যবইয়েও আসবে পরিবর্তন। ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, নতুন বছরের পাঠ্যপুস্তকের মলাটসহ ভেতরের বিষয়বস্তুতেও পরিবর্তন আসবে। শিক্ষাক্রম সংস্কারের প্রাথমিক পদক্ষেপ নিতে হবে। যতটুকু সময় পাওয়া যায় আমরা এই শিক্ষাক্রম সংস্কারে পদক্ষেপ নেব।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

‘অন্তর থেকে ভুল বুঝতে পারলে সুযোগ পেতে পারে আ.লীগ’

‘অন্তর থেকে ভুল বুঝতে পারলে সুযোগ পেতে পারে আ.লীগ’

সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন গ্রেপ্তার

সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন গ্রেপ্তার

ইউএইয়ের মধ্যস্থতায় রাশিয়া-ইউক্রেনের ২০৬ যুদ্ধবন্দী বিনিময়

ইউএইয়ের মধ্যস্থতায় রাশিয়া-ইউক্রেনের ২০৬ যুদ্ধবন্দী বিনিময়

১৪ সেপ্টেম্বর: সারাদিন যা যা ঘটলো

১৪ সেপ্টেম্বর: সারাদিন যা যা ঘটলো

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App