অর্থ-বাণিজ্য উপদেষ্টা
বাজার সিন্ডিকেট বন্ধে ব্যবস্থার নির্দেশ
প্রকাশ: ১৯ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
কাগজ প্রতিবেদক : দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে বাজার সিন্ডিকেট বন্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছেন অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, নিত্যপণ্যের দাম স্বাভাবিক রাখার বিষয়ে কী কী করা দরকার, সরকার সে বিষয়ে সজাগ আছে। চাঁদাবাজ ও অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। টিসিবি কার্ডধারী কোটি পরিবার আগের মতোই ভর্তুকি মূল্যের খাদ্য সহায়তা পাবেন। তবে টিসিবির কার্ড নিয়ে কোনো ধরনের জালিয়াতি হয়েছে কিনা সেগুলো যাচাই-বাছাই করা হবে। তিনি জানান, উন্নয়ন সহযোগীরা দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন বিভিন্ন প্রকল্পে তাদের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে।
গতকাল রবিবার দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। এর আগে সকালে তিনি আগারগাঁওয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের ঢাকা অফিসের প্রধান এডিমন গিনটিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন। এরপরই সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে অফিস করেন। এছাড়া এদিন দুপুরে প্রথমবারের মতো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অফিস করেন তিনি। এ সময় তিনি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে বৈঠক করেন ও সবার খোঁজখবর নেন। তিনি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, দ্রব্যমূল্যের বিষয়টি উৎপাদন ও সরবরাহের সঙ্গে সম্পর্কিত। দেশে কোনো পণ্যের উৎপাদন কম হলে যতটা সম্ভব আমদানি করতে হবে। সাধারণ মানুষ যেন চাপে না পড়ে, তা নিশ্চিত করা হবে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার বিষয়ে কী কী করা দরকার, সে বিষয়ে বর্তমান সরকার সজাগ আছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে সরকারি কর্মচারীরা রেশন চাইলে কী করা হবে এবং এক্ষেত্রে বেসরকারি চাকরিজীবীদের কী হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, তার কাছে সবাই সমান। সবাই যেন শোভনভাবে জীবন-যাপন করতে পারেন, তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হবে। সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, অর্থনীতির বড় স্তম্ভ হচ্ছে বাণিজ্য। দেশীয় ও বৈদেশিক বাণিজ্য- দুটি মিলেই তা হয়ে থাকে।। যতটা সম্ভব, দেশে ব্যবসাবাণিজ্যের সহায়ক পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করা হবে। দুর্নীতি যেন না হয়, তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হবে। মূল্যস্ফীতির ক্ষেত্রে বাণিজ্যের বড় ভূমিকা আছে। ফলে এসব ক্ষেত্রে যেসব প্রতিবন্ধকতা রয়েছে তা দূর করার উদ্যোগ নিয়েছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। মন্ত্রণালয় ও বাণিজ্য সংগঠনগুলোর সঙ্গে শিগগিরই বৈঠক করে বিদ্যমান সমস্যা দূর করার চেষ্টা করা হবে।
বাণিজ্য সংগঠনগুলোর বড় ভূমিকা আছে উল্লেখ করে সাংবাদিকদের তিনি আশ্বস্ত করেন, বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কী হয়, সে বিষয়ে আমার ধারণা আছে। আপনারা নিশ্চিন্ত থাকেন, এ বিষয়ে যা করা দরকার, আমরা তা করব। বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) কোটি পরিবারের ভর্তুকি মূল্যের খাদ্য সহায়তা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হবে। তবে কার্ড বিতরণে কোনো অনিয়ম হয়েছে কিনা, সে বিষয়গুলো যাচাই-বাছাই করা হবে। এছাড়া কার্ডধারীদের পাশাপাশি ট্রাকসেল কার্যক্রম চালু করা যায় কিনা সে বিষয়টিও ভেবে দেখার জন্য তিনি টিসিবি কর্মকর্তাদের পরামর্শ দেন।
সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে কী ভূমিকা রাখবেন জানতে চাইলে অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, রাজধানীর কারওয়ান বাজারেই একটা পণ্য চারবার হাতবদল হয়। এখানে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার কারসাজি হয়। নিয়মিত চাঁদাবাজি হয়। এগুলো বন্ধ করতে হবে। তিনি জানান, পথে পথে, বাজারে বাজারে চাঁদাবাজি বন্ধ করা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাজ নয়, কিন্তু আমরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছি। আশা করছি, চাঁদাবাজি বন্ধ হবে। নতুন করে কোনো গ্রুপ যেন সক্রিয় না হতে পারে সে বিষয়ে দৃষ্টি রাখা হচ্ছে। তিনি বলেন, এখন কারা চাঁদাবাজি করছে, কারা চাঁদা চায়- এ বিষয়গুলোর দিকে সরকার নজরদারি বাড়িয়েছে। যারা এসব অপকর্মে জড়িত হবে তারা আইনের আওতায় আসবে।
তিনি বলেন, দেশে কোনো পণ্যের উৎপাদন কম হলে যতটা সম্ভব আমদানি করতে হবে। সাধারণ মানুষ যেন চাপে না পড়ে, তা নিশ্চিত করা হবে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে সব ধরনের উদ্যোগ নেবে সরকার।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠকের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চলমান যেসব প্রকল্প যৌক্তিক, সেগুলো চালিয়ে নেয়ার বিষয়ে কথা হয়েছে। সেই সঙ্গে পাইপলাইনে যেসব প্রকল্প আছে বা ভবিষ্যতে আরো যেসব প্রকল্প নেয়া হবে, সেখানে তারা সহায়তা করবে। তারা ইতিবাচক। এডিবি ও বিশ্বব্যাংক আমাদের সহায়তা করবে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে যিনি এসেছেন, তাকে আমরা জানি, আমরা জানি কী করতে হবে।
রিজার্ভের বিষয়ে কথা হয়েছে কিনা, সে বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এ বিষয়ে বিস্তারিত কথা হয়নি। রিজার্ভের বিষয়ে কথা বলার জন্য গভর্নর আছেন, তিনি এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেবেন। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রতিনিধি দল আসবে। তাদের সঙ্গে রিজার্ভ ও মুদ্রার বিনিময় হার নিয়ে আলোচনা হবে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শপথ নিয়েছেন। তিনি এখন এসব দেখভাল করবেন। তিনি যে পরিকল্পনা করবেন, অর্থ মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী বরাদ্দ দেবে।
এলডিসি উত্তরণের ক্ষেত্রে সময় চাওয়া হবে কিনা, সে বিষয়ে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এটি অনেক বড় বিষয়, এখনই এ নিয়ে কিছু বলা যাবে না। উত্তরণের ক্ষেত্রে অনেক শর্ত আছে। বিষয়টি শুধু অর্থ-বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নয়, এর সঙ্গে অন্যান্য সংস্থার সম্পর্ক আছে। সরকারের পক্ষ থেকে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।