সরকারকে সহযোগিতার বার্তা
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৫ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
- পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে দেখা করেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারত, চীন, ব্রিটেন, সৌদি আরব ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) দূতরা
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাওয়ার আশা ব্যক্ত করেছে ভারত, চীন, ব্রিটেন, সৌদি আরব এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। গতকাল বুধবার পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে দূতরা এ কথা বলেন। অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে প্রথমবারের মতো সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এদিন সকালে মন্ত্রণালয়ে আসেন ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা। এসময় সীমান্ত হত্যা বন্ধ ও তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির ওপর জোর দিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এম তৌহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নে ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে চায়। তিনি আগামীতে আরো ‘গণকেন্দ্রিক সম্পৃক্ততার’ ওপর জোর দেন। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বাংলাদেশের ঘটনা সম্পর্কে অত্যন্ত অতিরঞ্জিত মিডিয়া প্রচারের কথাও উল্লেখ করেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক বক্তব্য সম্পর্কে তিনি বলেন, ভারত থেকে আসা এ ধরনের বক্তব্য দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নত করার জন্য সহায়ক নয়।
ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা পররাষ্ট্র উপদেষ্টাকে তার নতুন দায়িত্বের জন্য অভিনন্দন জানান। পরে তিনি সাংবাদিকদের জানান, এটি শুধুই সৌজন্য সাক্ষাৎ ছিল, কোনো এজেন্ডা নিয়ে নয়। বর্তমান সরকারের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যেতে দিল্লি আগ্রহী। দুই দেশের মানুষের পারস্পরিক যোগাযোগ ও স্বার্থকে সব সময় গুরুত্ব দেয় দিল্লি। ভারতে অবস্থানরত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রসঙ্গে সুনির্দিষ্ট কোনো আলাপ হয়নি বলেও জানান তিনি।
বৈঠকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বাংলাদেশে সংখ্যালঘুসহ বিভিন্ন স¤প্রদায়ের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিশ্রæতি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, সরকার সব ধর্মীয় ও জাতিগত গোষ্ঠীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অঙ্গীকারবদ্ধ এবং তাদের বিরুদ্ধে কোনো সহিংসতা বা ভয়ভীতি সহ্য করা হবে না। সব ধর্মীয় গোষ্ঠী এবং অন্য রাজনৈতিক দলগুলোও সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা নিশ্চিতে কাজ করছে। এরপর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আসেন যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার সারাহ কুক।
উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারকে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি অংশীদার হিসেবে যুক্তরাজ্য প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে নতুন অন্তর্বর্তী সরকারকে স্বাগত জানায়। শৃঙ্খলা ও জবাবদিহি ফেরাতে, এ সরকারকে সর্বাত্মক সহায়তা দেবে যুক্তরাজ্য। পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ আল দুহাইলান। সাক্ষাৎ শেষে তিনি সাংবাদিকদের জানান, বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য ভিসা দেয়া শুরু করেছে সৌদি দূতাবাস। পাশাপাশি দূতাবাসের কার্যক্রমও শুরু হয়েছে। বাংলাদেশে দ্রুত স্থিতিশীল অবস্থা ফিরে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করতে আগ্রহী চীন। চীনা রাষ্ট্রদূত জানান, অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার নীতি কঠোরভাবে অনুসরণ করে চীন। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি, পট পরিবর্তন এবং সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে চীন হস্তক্ষেপ করবে না। চীন আশা করে, বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনভাবে তাদের সিদ্ধান্ত নেবে।
ইয়াও ওয়েন বলেন, আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির মধ্যেও বাংলাদেশে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। চীন সবসময় বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কে রক্ষায় গুরুত্ব দিয়ে থাকে। তিনি বলেন, পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আগামী বছর দুই দেশের সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপন হবে। রোহিঙ্গা ইস্যুসহ আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ঢাকা মিশনের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ব্যান্ড স্প্যানিয়ার। সাংবাদিকরা তার কাছে প্রশ্ন করেন, রাজনৈতিক টালমাটাল অবস্থার মধ্যে বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতারা যদি আশ্রয় চান, সেক্ষেত্রে ইইউর অবস্থান কী হবে। জবাবে তিনি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের কনস্যুলার সার্ভিস নেই। কেউ যদি রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য সদস্য দেশগুলো কাছে আবেদন করে তাহলে সেই রাষ্ট্রগুলো সিদ্ধান্ত নেবে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, খুব ভালো আলোচনা হয়েছে। আমরা বাংলাদেশে সংকটকালে তাদের পাশে আছি। আমরা জানতে এসেছি, কীভাবে অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতা করতে পারি। ঢাকার বিদেশি কূটনৈতিক মিশনগুলোয় সশস্ত্র বাহিনীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করায় ধন্যবাদ জানান তিনি। বৈঠকে জিএসপি প্লাস ও শ্রমিক অধিকার নিয়ে আলোচনা হয়নি বলে জানান স্প্যানিয়ার।