ওয়ারীতে ভাইসহ বিএনপি নেতা খুন
সায়েদাবাদে স্বেচ্ছাসেবক ৩ শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে হত্যা
প্রকাশ: ১৫ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
কাগজ প্রতিবেদক : রাজধানীতে মাত্র পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে পৃথক দুটি ঘটনায় তিন শিক্ষার্থী ও এক বিএনপি নেতাসহ পাঁচজন খুন হয়েছেন। এর মধ্যে সায়েদাবাদে সাইফ আরাফাত শরীফ (২০), সাইদুল ইসলাম ইয়াসিন (১৯) ও অজ্ঞাত (২৫) এক শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। তারা তিনজনই শিক্ষার্থী এবং সড়কে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করে আসছিলেন। গণধর্ষণের অভিযোগ এনে দুর্বৃত্তরা তাদের পিটিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। যদিও মৃত্যুর আগে তাদের একজন স্বজনদের জানিয়েছেন, মিথ্যা অভিযোগ তুলে তাদের পেটানো হয়েছে।
অন্যদিকে ওয়ারীতে ফ্ল্যাট নিয়ে দ্ব›েদ্ব আল আমিন ভূঁইয়া (৪২) ও নুরুল আমিন ভূঁইয়া (৩৫) নামে আপন দুই ভাইকে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে। এদের মধ্যে আল-আমিন ভূঁইয়া ওয়ারী থানার ৪১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
দুটি ঘটনাতেই মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট থানাপুলিশ।
সায়েদাবাদে নিহত তিন শিক্ষার্থীর বিষয়ে সম্রাট শেখ নামে এক স্কাউট সদস্য জানান, ব্যাপক মারধরের শিকার ৩ ছাত্রকে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে কয়েকজন মিলে যাত্রাবাড়ী থানায় নিয়ে যায়। থানায় তারা ছটফট করছিল। তখন জানা যায়, সায়েদাবাদ এলাকায় কোনো একটি হোটেলে তাদের শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। তাদের অবস্থার অবনতি দেখে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত ইয়াসিনের মা শিল্পী আক্তার জানান, ইয়াসিন ১৫ দিন ধরে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে বিভিন্ন জায়গায় কাজ করছিলেন। গত মঙ্গলবার সকালে সে যাত্রাবাড়ী ধলপুর বউবাজারের বাসা থেকে বের হন। এরপর বহুবার মায়ের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে তার। গতকাল বুধবার ভোর ৪টার দিকেও মায়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন তিনি। তখনো ইয়াসিন সুস্থ স্বাভাবিক আছেন বলে জানান মাকে। এরপর গতকাল সকালে কেউ একজন তার মাকে ফোন করে জানান- তার ছেলের অবস্থা ভালো না, দ্রুত যাত্রাবাড়ী থানায় যেতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে থানায় গিয়ে ছেলেকে মুমূর্ষু অবস্থায় দেখতে পান তিনি।
মা শিল্পী আক্তার বলেন, থানা থেকে গাড়িতে করে হাসপাতালে নেয়ার সময় আমার ছেলে কথা বলতে পারছিল। বলছিল, ওদের মিথ্যা অভিযোগে মারধর করা হয়েছে। ওরা কোনো অপরাধ করেনি। এরপর ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে যায় ইয়াসিন। ইয়াসিনের বাবার নাম সাখাওয়াত হোসেন। থাকেন ধলপুর বউ বাজার এলাকায়।
আর নিহত সাইফের মানিব্যাগে থাকা এনআইডি কার্ড থেকে পরিচয় জানা যায়। তার বাবার নাম কবির হোসেন ও মা মরিয়ম। বাড়ি নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার কদমিরচর গ্রামে। বর্তমানে যাত্রাবাড়ী টনি টাওয়ার এলাকায় থাকতেন।
এ বিষয়ে যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান বলেন, ওই শিক্ষার্থীদের কেন পেটানো হয়েছে- সেটি আমরা নিশ্চিত হতে পারিনি। তদন্ত চলছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে। নিহতদের মরদেহ ঢামেকের মর্গে রাখা হয়েছে।
এছাড়া গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ওয়ারীর হাটখোলা এলাকার ফকির বানু টাওয়ারের পাশের গলিতে আল আমিন ভূঁইয়া ও নুরুল আমিন ভূঁইয়া নামে আপন দুই ভাইকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। দুপুর দেড়টার দিকে রক্তাক্ত অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে নিলে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। নিহতরা ওয়ারীর ২ নং কে এম দাস লেনের শামসুদ্দিন ভূঁইয়ার ছেলে।
নিহতের বড় ভাই রুহুল আমিন বলেন, আমার ভাই আল আমিন ওয়ারী থানা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিল। আরেক ভাই নুরুল আমিন পাঠাও মোটরবাইক চালক ছিল। দুই ভাইকে কে বা কারা কুপিয়ে গুরুতর আহত করে ওয়ারীর হাটখোলা এলাকায় রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে রেখে গেছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে দ্রুত তাদের উদ্ধার করে ঢামেকে নিলে চিকিৎসক জানান- আমার দুই ভাই আর বেঁচে নেই।
আল আমিনের স্ত্রী মুনমুন বলেন, দেড় বছর আগে রিপন নামে এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে প্রায় দেড় কোটি টাকা দিয়ে একটি ফ্ল্যাট
কিনেছিলাম আমরা। ফ্ল্যাট রেডি হলেও তা বুঝিয়ে দেয়া হচ্ছিল না। এসব নিয়ে তাদের সঙ্গে আমাদের বিরোধ চলছিল। সেই বিরোধের জেরে রিপন তার লোকজন নিয়ে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।
ওয়ারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জানে আলম মুন্সি বলেন, ফ্ল্যাট সম্পর্কিত ঝামেলায় এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে জানতে পেরেছি। এ ঘটনায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করবেন বলে জানিয়েছেন স্বজনরা। হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হবে বলেও জানান ওসি।