আমার হৃদয় ভেঙে যাচ্ছে : সায়মা ওয়াজেদ পুতুল
দিল্লিতে থেকেও শেখ হাসিনার সঙ্গে তার মেয়ের দেখা হয়নি
প্রকাশ: ০৯ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
কাগজ ডেস্ক : শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের এক্স হ্যান্ডলে করা একটি পোস্ট রীতিমতো চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে করা ওই পোস্ট থেকে বোঝা যাচ্ছে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নাটকীয় মোড় নেয়ার পর থেকে মা ও মেয়ের মধ্যে এখনো দেখাই হয়ে ওঠেনি। টুইটে সায়মা ওয়াজেদ লিখেছেন, এই কঠিন সময়েও আমার মাকে দেখতে পারছি না, তাকে জড়িয়ে ধরতে পারছি না... আমার হৃদয় ভেঙে যাচ্ছে।
বিবিসি জানিয়েছে, সায়মা ওয়াজেদ মঙ্গলবারই দিল্লি এসে পৌঁছেছেন। সেক্ষেত্রে দিল্লি আসার পরেও কেন তিনি শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে পারেননি, না কি তাকে ভারতীয় কর্তৃ?পক্ষ দেখা করার অনুমতি দেয়নি- সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। গত সোমবার যখন নাটকীয় ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করে হেলিকপ্টারে দেশ ছাড়তে হয়, তখন সায়মা ওয়াজেদ থাইল্যান্ডে ছিলেন। সায়মা ওয়াজেদ বর্তমানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালকের পদে রয়েছেন, যার প্রধান কার্যালয় দিল্লিতে এবং সেই সুবাদে তিনি ইদানীং বেশির ভাগ সময় দিল্লিতে অবস্থান করেন।
জানা গেছে, মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক সেমিনার ও আলোচনা সভায় যোগ দিতে সায়মা ওয়াজেদ ব্যাংককে গিয়েছিলেন। এছাড়া তার সেই দেশে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আরো কিছু কাজ ছিল। কিন্তু শেখ হাসিনা দিল্লির কাছে হিন্ডনে অবতরণ করার কয়েক ঘণ্টা পরেই তিনিও দিল্লির উদ্দেশে রওনা দেন।
দিল্লিতে ভারতের একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেন, সায়মা ওয়াজেদ যেহেতু হু-র আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে জাতিসংঘ বা আন্তর্জাতিক সংস্থার একজন কর্মকর্তা- সে কারণেই হয়তো বিশেষ পরিস্থিতিতে ভারতে আসা শেখ হাসিনার সঙ্গে তার দেখা হয়ে ওঠেনি। ওই কর্মকর্তা বলেন, প্রথম কথা হলো তিনি দিল্লিতে কি না- তা আমি জানি না। আর যদি থেকেও থাকেন, তিনি শেখ হাসিনার মেয়ে তো বটেই, কিন্তু আন্তর্জাতিক একটি সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তা হিসেবে সায়মা ওয়াজেদের আরো একটি পরিচয়ও আছে- আর সেটাই হয়তো এখানে দেখা করার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে উঠেছে বলে ধারণা করছি।
ভারত সরকার অবশ্য আনুষ্ঠানিকভাবে শেখ হাসিনার ‘স্ট্যাটাস’ নিয়ে মঙ্গলবার বিকালে দেশটির পার্লামেন্টে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের বিবৃতির পর থেকে আর কোনো মন্তব্য করেনি। তবে গতকাল সকালের টুইটে সায়মা ওয়াজেদ আরো লিখেছেন, হু-র আঞ্চলিক পরিচালকের ভূমিকায় তিনি অঙ্গীকারবদ্ধ থাকছেন- যার মানে হলো ওই দায়িত্ব তিনি ছাড়ছেন না এবং দিল্লিতে থেকেই কাজ চালিয়ে যাবেন। ওই একই পোস্টে তিনি ‘প্রিয় বাংলাদেশে’ অজস্র প্রাণহানির জন্য তার হৃদয় ভেঙে যাচ্ছে বলেও লিখেছেন।
প্রসঙ্গত, দেশত্যাগ করতে বাধ্য হওয়ার পর শেখ হাসিনার সঙ্গে এখনো তার ছেলে বা মেয়ে- কারোই দেখা হয়ে ওঠেনি। জানা গেছে, শেখ হাসিনা এই মুহূর্তে রয়েছেন দিল্লির
কাছে গাজিয়াবাদে ভারত সরকারের আধা-সামরিক বাহিনীর একটি অতিথিনিবাসে। তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসির কাছে ভার্জিনিয়ায়। সেখান থেকেই গত তিন-চার দিনে তিনি বিবিসিসহ অনেক সংবাদমাধ্যমকে অজস্র সাক্ষাৎকার দিয়েছেন, গত বুধবার নিজের ফেসবুক ওয়ালে একটি ভিডিও বার্তাও পোস্ট করেছেন।
শেখ হাসিনাকে আপাতত কতটা সময় দিল্লিতে থাকতে হবে বা ভারত থেকে তিনি তৃতীয় কোনো দেশের উদ্দেশে রওনা দেবেন, তা নিয়ে এখনো চূড়ান্ত অনিশ্চয়তা রয়েছে। পশ্চিমা কোনো দেশ কিংবা মধ্যপ্রাচ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো কোনো দেশ তাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেবে কি না- সেটা এখনো স্পষ্ট নয়। এরই মধ্যে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর দেশের পার্লামেন্টে জানিয়েছেন, শেখ হাসিনা গত সোমবার যখন ভারতে আসার অনুমোদন (অ্যাপ্রæভাল) চেয়ে দিল্লিতে যোগাযোগ করেন, তখন সেই আসাটা ‘সাময়িক’ বলে বলা হয়েছিল। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, ভারতে তার এই থাকাটা দীর্ঘায়িত হতে পারে।