গাজীপুর
ছয় প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনার ক্ষতি ৫০ কোটি টাকা
এম নজরুল ইসলাম, গাজীপুর থেকে
প্রকাশ: ২৯ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছবি: ভোরের কাগজ
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে গাজীপুরের বিভিন্ন স্থানে নাশকতার ঘটনা ঘটে। নাশকতাকারীরা সরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও যানবাহনে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করেছে। কয়েকদিনের নাশকতায় গাজীপুরের ৬টি প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনায় ৫০ কোটি ৫৮ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, গত ১৮ জুলাই থেকে কয়েকদিন ধরে চলা আন্দোলনে নাশকতাকারীরা মহানগরের টঙ্গী থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত এলাকায় সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। হামলাকারীরা সরকারি অফিসকে কেন্দ্র করে এ নাশকতা চালায়। নাশকতাকারীদের আগুনে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকার পুলিশ বক্সের টিনের চাল, চেয়ার-টেবিল ও আসবাব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
এর পাশে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের কার্যালয়ের ভেতরে গিয়ে চারটি পোড়া গাড়ি পড়ে থাকতে দেখা গেছে। আশপাশের ঘরবাড়ি ও দালানের ভাঙা গ্লাসগুলো এখনো দেখা যাচ্ছে। গাজীপুর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত বিআরটি প্রকল্পের স্টেশনগুলোয় রাখা এসকেলেটরগুলোর আংশিক পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। কোনাবাড়ী এলাকায় পুলিশের একটি বক্স পুড়িয়ে দেয় হামলাকারীরা।
টঙ্গীর কলেজ গেট এলাকায় সিটি করপোরেশনের অঞ্চল-৪ এর কার্যালয়ে সহকারী প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ও যন্ত্র বিভাগের উপসহকারী কর্মকর্তার দুটি কক্ষে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এখনো কক্ষের ভেতরে পড়ে আছে পোড়া আসবাব ও কাগজপত্র। কক্ষ দুটির সামনে একটি ফাঁকা জায়গায় সারিবদ্ধ ২০-২৫টি গাড়ি। কার্যালয়টির সামনে দক্ষিণ পাশে একটি টিনের ছাউনির নিচে সারিবদ্ধভাবে রাখা ৬টি গাড়ির সব কটিই আগুনে পুড়ে গেছে।
হামলাকারীরা চান্দনা চৌরাস্তায় সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের ৩টি গাড়ি পুড়িয়ে দেয়। এছাড়া ৪টি ট্রাক, হাইড্রোলিক হ্যামার, বিআরটি প্রজেক্টের অফিস গেট ও ভবনসহ অন্যান্য মালামাল ভাঙচুর করা হয়। এতে আনুমানিক ২ কোটি ১৯ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে।
সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী খ. মো. শরিফুল আলম বলেন, গাজীপুরে যে সহিংসতা হয়েছে তাতে আমাদের আনুমানিক ৩ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। নাশকতায় বিআরটি প্রকল্পের ২৫টি এসকেলেটর, ২ হাজার বর্গমিটার এস এস রেলিং, একটি এস্ককাভেটর, ৬টি ইলেকট্রিক হ্যামার, ২টি রোডকাটিং মেশিন, ৩৬০ মিটার ফেন্সিং ও প্লাস্টিক ট্রাফিক ব্যারিয়ার, ৭টি স্টেশনে জেনারেটরসহ ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, যার পরিমাণ প্রায় ৩০ কোটি টাকা।
উত্তরা থেকে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত নাশকতায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া বিআরটি প্রকল্পের নির্মাণাধীন স্টেশনসহ বিভিন্ন স্থাপনা পরিদর্শন করেছেন ঢাকা বিআরটি কোম্পানি লিমিটেডের এমডি ড. মো. মনিরুজ্জামান।
তিনি জানান, প্রাথমিক হিসেবে প্রকল্পের ৫০-৬০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। এর পরিমাণ আরো বাড়তে পারে। টঙ্গীতে ডেসকোর কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে সাতটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ, উপকেন্দ্রের অফিস ভবন, ১০টি কম্পিউটার, ৭টি প্রিন্টার, এসি কমপ্রেসারসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র ও সামগ্রী ব্যাপক ভাঙচুর করে তিন কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি করা হয়েছে। হামলাকারীরা টঙ্গীর বেক্সিমকো ফার্মার ভিতরে ৪টি গাড়ি পুড়িয়েছে। তারা ৬টি সিসি ক্যামেরা, ৬টি কাভার্ড ভ্যান, ২টি মাইক্রোবাস ভাঙচুর ও বিল্ডিংয়ের ক্ষতিসহ মোট ৩ কোটি টাকার ক্ষতি সাধন করেছে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের গাজীপুরা, বোর্ড বাজার, গাছা, কোনাবাড়ি ও চান্দনা চৌরাস্তায় ৫টি পুলিশ বক্সে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয়েছে। ভেঙে ফেলা হয়েছে এপিসির গ্লাস। এতে প্রায় ৩৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।এছাড়া গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ১৯টি গাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ভাঙচুর করা হয়েছে আরো ১৩টি যানবাহন।
গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের হিসেবে ৬টি প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ৫০ কোটি ৫৮ লাখ টাকার ক্ষতি নিরূপণ করা হয়েছে। তবে এই ক্ষতির পরিমাণ আরো বাড়তে পারে।