কাগজ প্রতিবেদক : সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের বিষয়ে সর্বোচ্চ আদালতকে পাশ কাটিয়ে সরকার কিছুই করবে না বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেন, আমরা সর্বোচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা করব। যেহেতু বিষয়টি আদালতের কাছে গেছে, সরকার স্বভাবতই অপেক্ষা করবে। আদালতের রায়ের পর সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ‘বিচারহীনতায় বাংলাদেশ : বেআইনি আইন ইনডেমনিটি ও কারারুদ্ধ জননেত্রী’ শীর্ষক এ সেমিনারের আয়োজন করে বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরাম।

প্রশ্ন উঠেছে, কোটা আদালতের বিষয় নয়, সরকারের বিষয়- এ কথা উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী বলেন, আদালতে যখন একটি বিষয় যায়, তখন সরকার অপেক্ষা করে আদালত কী বলেন, তারপর সরকারের পদক্ষেপ নেয়ার সময় হয়। তাই কোটার বিষয়ে সরকার আদালতের রায় পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। সরকার বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতকে সম্মান করবে। কোটার বিষয়ে সর্বোচ্চ আদালত যে রায় দেবেন, সরকার সেটা বিবেচনা করবে। সেটি প্রতিপালন করার চেষ্টা করবে। সরকার কোটার বিষয়ে সর্বোচ্চ আদালতকে পাশ কাটিয়ে কিছুই করবে না। কিন্তু শিক্ষার্থীরা আদালতের রায় পর্যন্ত অপেক্ষা করেনি। তিনি বলেন, সর্বোচ্চ আদালত আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে ফিরে যেতে বলেছেন। দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উপাচার্য, প্রক্টরদের তাদের শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরিয়ে নিয়ে শিক্ষায় মনোনিবেশ করতে বলা হয়েছে। স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদকারী ছাত্র-ছাত্রীরা চাইলে আইনজীবীর মাধ্যমে তাদের বক্তব্য এই আদালতের সামনে তুলে ধরতে পারেন। আদালত মূল দরখাস্তটি বিবেচনা, নিষ্পত্তিকালে তাদের বক্তব্য বিবেচনায় নেবেন। সর্বোচ্চ আদালত তাদের এই আশ্বাস পর্যন্ত দিয়েছেন। তারপরেও এই আন্দোলন করার কোনো প্রয়োজনীয়তা আছে? আন্দোলনে যে সেøাগান দেয়া হয়েছে, সে সেøাগান দেয়ার কোনো প্রয়োজনীয়তা থাকে?

আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে ইনডেমনিটি আইনের ধারাবাহিকতায় আমরা কিন্তু এখন ছাত্রদের মুখে সেøাগানের কথা শুনছি। যারা আন্দোলন করছেন, তারা যদি আমি কে, তুমি কে, আমরা বাঙালি, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বলতেন, তাহলে আমি অবশ্যই বলতাম, তারা সঠিক পথে আছেন।’

তিনি বলেন, আমার মনে হয়, একটা বিষয় পরিষ্কার করা উচিত। সেটা হলো, যৌক্তিক কথা জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার অবশ্যই শুনবে। জনগণের জন্য যেটা ভালো হয়, সেটা শেখ হাসিনার সরকার অবশ্যই করবে। তবে এটা মনে রাখবেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার আদর্শ থেকে বিচ্যুত হবে না। সেই আদর্শটা কী? বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে কেউ নষ্ট করতে পারবে না। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কেউ অসম্মান করতে পারবে না।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমানের সভাপতিত্বে সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন সংসদ সদস্য তারানা হালিম, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মিল্টন বিশ্বাস। সেমিনারে আরো বক্তব্য রাখেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মশিউর রহমান, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. রাশিদ আসকারী, রাষ্ট্রপতির সহকারী একান্ত সচিব ও কলামিস্ট হায়দার মোহাম্মদ জিতু প্রমুখ।