নির্বাচনী প্রচারে রুশনারাকে হত্যার হুমকি মৌলবাদীদের
আজিজুল আম্বিয়া, লন্ডন (যুক্তরাজ্য) থেকে :
প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
যুক্তরাজ্যে নবনির্বাচিত হাউজ অব কমন্সের এমপিরা তাদের নির্বাচনী প্রচারে মৌলবাদীদের কাছ থেকে প্রাণনাশের হুমকি পেয়েছেন ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। বিবিসিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এসব নিয়ে মুখ খুলেছেন হাউজিং-কমিউনিটি অ্যান্ড লকেল গভর্নমেট মন্ত্রী ও প্রথম ব্রিটিশ বাংলাদেশি এমপি রুশনারা আলী।
বিবিসির রাজনৈতিক ভাষ্যকার লীলা নাথু ও স্যাম ফ্রান্সিককে দেয়া সাক্ষাৎকারে রুশনারা আলী জানিয়েছেন, ক্রমাগতভাবে প্রাণনাশের হুমকির কারণে নির্বাচনী প্রচারণার সময় তার পুলিশি সুরক্ষার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। সোশ্যাল মিডিয়ার কিছু ভুয়া ভিডিও দেখিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও লেবার বিরোধীরা রুশনারা আলীর সমর্থকদের নাজেহাল করার চেষ্টা করেছেন। রুশনারার কর্মীরা যেখানেই প্রচারে গেছেন সেখানেই বিরোধীরা গালিগালাজ করেছেন। এর পাশাপাশি একটি জাল লেবার লিফলেট প্রচার করে তাকে শয়তান হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে।
বিবিসির একান্ত সাক্ষাৎকারে রুশনারা আলি বলেছেন, সাধারণ মানুষকে লেবার পার্টিকে সমর্থন না করার জন্য ধর্মকে ব্যবহার করে তার প্রচারণাকে ‘অস্থিতিশীল’ করার চেষ্টা করা হয়েছে। তিনি ব্রিটিশ পার্লামেন্টে নির্বাচিত প্রথম ব্রিটিশ বাংলাদেশি এমপি। বাংলাদেশি অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটস এলাকার বেথনাল গ্রিন এবং স্টেপনি আসন থেকে বিভিন্ন অপপ্রচারের কারণে এবার সীমিত ভোটে জয়লাভ করেন।
নির্বাচনী প্রচারণায় বেশ কয়েকজন এমপি অপব্যবহার ও হয়রানির বিষয়ে অভিযোগ করায় একে একে সব বেরিয়ে আসছে। লেবার দলীয় সংসদ সদস্য জেস ফিলিপস এবং শাবানা মাহমুদও তাদের ভীতি ও হুমকির কথা তুলে ধরেছেন। তিনি একে ‘গণতন্ত্রের উপর আক্রমণ’ বলে অভিহিত করেছেন। স্টিভ রুবিজ, ট্রæরো এবং ফালমাউথের রিফর্ম ইউকের প্রার্থী, প্রচারণার সময় হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন।
রুশনারা আলী তার পুরো নির্বাচনী সময়টাই হয়রানি, অপপ্রচার ও হুমকির বিষয়ে সব ঘটনার বিবরণ সাক্ষাৎকারে তুলে ধরেছেন। তার অফিসে পাঠানো একটি চিঠি তিনি বিবিসিকে দেখিয়েছেন। চিঠিতে বলা হয়েছে যে লেবার এমপিকে কয়েকদিনের মধ্যে হত্যা করা হবে। তার অফিসের বাইরে বিক্ষোভ এবং ব্যক্তিগত হুমকি প্রায়ই ছিল। তিনি বলেন, বাধ্য হয়েই আমার নিরাপত্তার প্রয়োজন হয়েছিল।
কারণ লেবার দলের প্রচারের সমাবেশগুলোয় কিছু চিহ্নিত ব্যক্তি বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করেছে ও আমাকে প্রতিনিয়ত হুমকি দিয়েছে। নির্বাচনের দিন একটি ভোটকেন্দ্রের বাইরে পার্ক করা একটি গাড়ির লাউডস্পিকারে গালিগালাজ করে ভোটদের ভয় দেখানো হয় যেন ভোটাররা ভোটদানে বিরত থাকেন। এখানে কমিউনিটির মধ্যে শত্রæতার মাত্রা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যা সত্যিই উদ্বেগের কারণ, যা আমরা অতীতে দেখিনি।
তিনি বলেন, নির্বাচনী প্রচারে ভোটারদের সঙ্গে কথা বলার বদলে আমাকে বেশি সময় ব্যয় করতে হয়েছে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার, অপপ্রচার ও হুমকি নিয়ে পুলিশকে জানাতে। তিনি বলেন, ১৪ বছর ধরে বেথনাল গ্রিনের জনপ্রতিনিধি হিসেবে অনেক কিছু দেখেছি, কিন্তু এই স্তরের শত্রুতা আর কখনো দেখিনি। এই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ইউরোপীয় সংস্করণ দাওয়াতুল ইসলাম নেতা আজমল মাসরুর রুশনারা আলীর কাছে পরাজিত হয়েছেন। গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে পার্লামেন্ট বিতর্কে ভোট দানে বিরত থাকায় রুশনারা আলীর সমালোচনায় মুখর ছিলেন তিনি। আজমল মাসরুর ও তার
সমর্থক যারা ইসলামপন্থি হিসেবে পরিচিত, তারা গাজা ইস্যুকে পুঁজি করে শুধু অপবাদ অপপ্রচারই করেননি, ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে সাধারণ মুসলিম ভোটারদের বিভ্রান্ত করেছেন, এমন অসংখ্য ভিডিও ভাসছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। কিন্তু অপপ্রচারকারীরা গাজা ইস্যুকে ব্যবহার করে এলাকার বাংলাদেশি মুসলিম সম্প্রদায়কে রুশনারার বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলার চেষ্টা করেছে। এলাকার মসজিদগুলোয় মুসল্লিদের বলা হয়েছে, যদি আপনি লেবার বা অন্য মূলধারার দলগুলোর কাউকে ভোট দেন, তাহলে আপনি একজন খাঁটি মুসলিম নন। আজমল মাসরুর ছাড়া কোনো মেইন স্ট্রিম রাজনৈতিক দলের প্রার্থীকে ভোট দিলে ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে।
রুশনারা আলী বলেন, জনগণের প্রতিবাদ করার অধিকার আছে, কিন্তু হুমকি ও হয়রানি গ্রহণযোগ্য নয়। আজমল মাসরুর তার নির্বাচনী প্রচারণায় বার বার বলেছেন, লেবার ভোটাররা প্রকৃত মুসলিম নয়।
এদিকে আজমল মাসরুর দাবি করেছেন, কাউকে ভয় দেখানো উচিত নয়। আমি প্রচারণার শুরুতে বলেছিলাম, রুশনারার ওপর কেউ হামলা করলে আমি তার সামনে দাঁড়াব।
রুশনারা আলী বেশ কয়েকজন প্রার্থীর মধ্যে অন্যতম যারা এই বছরের সাধারণ নির্বাচনের সময় অতিরিক্ত হয়রানির শিকার হয়েছেন। রুশনারার এই নির্বাচনকে তার জন্য সবচেয়ে খারাপ সময় হিসেবে বর্ণনা করেছেন বার্মিংহাম ইয়ার্ডলির লেবার এমপি হিসেবে পুনর্নির্বাচিত মিসেস ফিলিপস। তিনি সাংসদদের বলেছেন কীভাবে তার দল হুমকির সম্মুখীন হয়েছে। এসবের মধ্যে রয়েছে গাড়ির টায়ার কেটে ফেলা, প্রচার করার সময় চিত্রগ্রহণ করা প্রভৃতি। বিচারমন্ত্রী শাবানা মাহমুদ বলেছেন, মুখোশ পরে আক্রমণ করা ব্যক্তিরা শুধু আমাদেরই আক্রমণ করেনি, এটি গণতন্ত্রের উপর আক্রমণ।