ফের ভারি বর্ষণের আভাস, বন্যা পরিস্থিতির অবনতির শঙ্কা
ব্রহ্মপুত্র-যমুনার পানি দ্রুত বাড়ছে
প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
কাগজ প্রতিবেদক : দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ব্রহ্মপুত্র-যমুনাসহ সব নদীতে হু হু করে বাড়ছে পানি। নদীগুলোর কিছু পয়েন্টে পানি প্রবাহিত হচ্ছে বিপৎসীমার উপর দিয়ে। এই পরিস্থিতিতে কিছু এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হওয়ার আভাস দিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। গতকাল শুক্রবার সকালে কেন্দ্রের নিয়মিত বুলেটিনে বলা হয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় কুড়িগ্রাম, জামালপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া, টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জ জেলার ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীসংলগ্ন নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা অবনতি হতে পারে। বানের পানিতে ইতোমধ্যে এসব এলাকার লোকালয় প্লাবিত হয়েছে, পানিবন্দি হয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন বাসিন্দারা। পাশাপাশি আবার ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টি হতে পারে এবং বিভিন্ন নদনদীর পানি বেড়ে বন্যা পরিস্থিতির অবনতির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তরও। এদিকে এ সময়ে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন নিম্নাঞ্চলের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হতে পারে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বুলেটিনে বলা হয়, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি বাড়ছে, যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত ধীর গতিতে বাড়তে পারে। গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানিও বাড়ছে, এ পরিস্থিতি আগামী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় পদ্মা নদীর গোয়ালন্দ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার ও ঘাঘট নদীর পানি আগামী ২৪ ঘণ্টায় সময় বিশেষে দ্রুত বাড়তে পারে। তাতে তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি কিছু পয়েন্টে স্বল্পমেয়াদে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার পাশাপাশি ঘাঘট নদীসংলগ্ন গাইবান্ধা জেলার কিছু নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা অবনতি হতে পারে।
আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চল ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের যমুনাশ্বরী, করতোয়া, বাঙ্গালী, আপার করতোয়া, পুর্নভবা, টাঙ্গন, ইছামতি-যমুনা, আত্রাই, মহানন্দা এবং ছোট যমুনা নদীর পানিও সময় বিশেষে দ্রুত বাড়তে পারে বলে বুলেটিনে বলা হয়েছে। তবে সিলেটসহ দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদীগুলোর পানি সার্বিকভাবে কমছে, এ অবস্থা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।
এবার জুনের শুরুতে প্রবল বর্ষণ আর উজানের ঢলে সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়। কয়েক দিন পর পরিস্থিতির উন্নতি হলেও গত ১৭ জুন কুরবানির ঈদের আগের দুই দিন থেকে টানা বৃষ্টিতে সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনাসহ আশপাশের জেলার অনেক এলাকা ডুবে যায়। উজানের ঢলে জুলাইয়ের শুরুতে নতুন করে বন্যা দেখা দেয় ওই তিন জেলায়।
আবহাওয়া সংস্থাগুলোর বরাত দিয়ে বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র বলছে, দেশের উত্তরাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে আগামী ২৪ ঘণ্টায় ভারি
থেকে অতিভারি এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে।
আগামী ১০ দিনের সম্ভাব্য পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি আগামী ৫ দিন স্থিতিশীলভাবে বাড়তে পারে এবং বিপৎসীমার উপরে অবস্থান করতে পারে। গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি আগামী ৭ দিন স্থিতিশীলভাবে বাড়তে পারে। তবে আগামী ১০ দিনের মধ্যে গঙ্গা-পদ্মা অববাহিকায় পানি বিপৎসীমা অতিক্রমের শঙ্কা নেই।
ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর পানি সমতল আগামী ৫ দিন স্থিতিশীলভাবে বাড়তে পারে। আগামী ১০ দিনের মধ্যে ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর অববাহিকায় বিপৎসীমা অতিক্রমের শঙ্কা নেই।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. শাহীনুর ইসলাম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মৌসুমি বায়ুর অক্ষ পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে।
পূর্বাভাসে বলা হয়, গতকাল শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে পরের ২৪ ঘণ্টায় রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেসঙ্গে কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে অতিভারি বর্ষণ হতে পারে। এ সময় সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
আজ শনিবার সকাল ৯টা থেকে পরের ২৪ ঘণ্টায়ও বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। রংপুর বিভাগের অধিকাংশ জায়গায়- রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেসঙ্গে রংপুর ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ভারি বর্ষণ হতে পারে।
আগামীকাল রবিবার সকাল ৯টা থেকে পরের ২৪ ঘণ্টায় রংপুর বিভাগের অনেক জায়গায়; রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেসঙ্গে রংপুর ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ভারি বর্ষণ হতে পারে। এ সময় সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
আগামী পাঁচ দিনের আবহাওয়ার অবস্থা সম্পর্কে বলা হয়েছে, এ সময়ের শেষের দিকে বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়তে পারে।