×

শেষের পাতা

আওয়ামী লীগ

আটকে গেছে ঢাকা মহানগরের কমিটি!

Icon

প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

আটকে গেছে ঢাকা মহানগরের কমিটি!

মুহাম্মদ রুহুল আমিন : প্রায় ৮ বছর পর নতুন কমিটি পেতে যাচ্ছে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ৫০টি থানা ও ১৩৯টি ওয়ার্ড। ঢাকা মহানগর উত্তরে ২৬টি থানা ও ৬৪টি ওয়ার্ড আর দক্ষিণে ২৪টি থানা ও ৭৫টি ওয়ার্ড রয়েছে। এসব থানা ও ওয়ার্ডের জন্য সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে প্রস্তাবিত নামের তালিকা দলের ধানমন্ডি কার্যালয়ে জমা দিয়েছেন ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। তবে কমিটি জমার ১ মাস হলেও এখন পর্যন্ত অনুমোদন দেয়নি দলের হাইকমান্ড। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে; প্রস্তাবিত কমিটিতে বিতর্কিতদেরই আধিপত্য সবচেয়ে বেশি। কমিটিতে তাদের ঠাঁই পাওয়ার পেছনে বড় অঙ্কের আর্থিক লেনদেন কাজ করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। যারা কাক্সিক্ষত টাকা বা উপহার দিতে পারেননি তাদের নাম বাদ দেয়া হয়েছে- এরকম অসংখ্য লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে ধানমন্ডি কার্যালয়ে। আর এসব কারণেই ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের প্রস্তাবিত কমিটি আটকে গেছে বলে জানা গেছে।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও মহানগরীর বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রস্তাবিত কমিটিতে বিতর্কিতদের নাম ও আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাসহ দলের কেন্দ্রীয় দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন অনেক পদপ্রত্যাশী নেতা। তাদের অভিযোগ কমিটিতে কারা আছেন, তা প্রকাশ্যে জানা না গেলেও নানা মাধ্যমে কমিটিতে নাম জানা গেছে। কমিটিতে বিতর্কিতদের নাম আসায় ক্ষুব্ধ ত্যাগী নেতাদের অনেকেই। নগর নেতারা কমিটি করার ক্ষেত্রে নিজেদের স্বার্থ ও পছন্দকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। ঢাকার প্রভাবশালী এমপি ও কেন্দ্রীয় নেতাদেরও সুপারিশ বা পরামর্শ নেননি তারা। ফলে ঢাকার কয়েকজন সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় নেতাও দলীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে তাদের অভিযোগ জানিয়েছেন। ফলে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দলের সাধারণ সম্পাদককে বিষয়গুলো খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন। অভিযোগ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কমিটি অনুমোদন না দেয়ার বিষয়েও নির্দেশ দেন দলীয় সভাপতি। এরপর থেকে ওবায়দুল কাদের সেগুলো যাচাই-বাছাইয়ের কাজ শুরু করেন।

এদিকে মহানগরীর বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এত অভিযোগ ও দলীয় সভাপতির নির্দেশে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের শীর্ষ

নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। প্রস্তাবিত কমিটিতে বিতর্কিতদের নাম আসার বিষয়ে নগর নেতাদের কাছে জানতে চেয়েছেন তিনি। দলের সাধারণ সম্পাদক নগরের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বেশ রাগারাগিও করেছেন। অভিযোগ যাচাই-বাছাইয়ের পর কমিটি অনুমোদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা জানান তিনি।

দলীয় কার্যালয়ে জমা দেয়া সম্ভাব্য পদ বঞ্চিত কয়েকজন নেতার লিখিত অভিযোগ থেকে জানা গেছে, বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে কদমতলী থানার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নাম প্রস্তাব এসেছে ৫৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিতর্কিত কাউন্সিলর আকাশ কুমার ভৌমিকের। তিনি ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফীকে বড় অঙ্কের টাকা দিয়েছেন বলে জানা গেছে। আকাশের বিরুদ্ধে ক্যাসিনোকাণ্ড থেকে শুরু করে জমি দখল ও চাঁদাবাজির নানা অভিযোগ রয়েছে। ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সভাপতি গিয়াস উদ্দিন গেসুর অভিযোগ থেকে জানা গেছে, তিনি আবারো একই পদে আসতে দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবিরকে ১৫ লাখ টাকা ও দুইটি দলীয় কর্মসূচিতে মাছ সরবরাহসহ আরো পাঁচ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। কিন্তু বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে আরেকজনের নাম গেছে কেন্দ্রে। সেজন্য গেসু তার দেয়া ২০ লাখ টাকা ফেরত চেয়েছেন বলে জানা গেছে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণের শাহবাগ থানা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটি নিয়ে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। সাবেক সভাপতি জি এম আতিকুর রহমানের কাছ থেকে ৫০ লাখ আর সাধারণ সম্পাদক পদে আরেকজনের কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা নিয়ে মহানগর দক্ষিণের সভাপতি মন্নাফী তাদের নাম প্রস্তাব করেছেন। সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির একই থানার সভাপতি পদের জন্য বিদায়ী সহসভাপতি সহিদুল ইসলাম সহিদের কাছ থেকে ৪০ লাখ ও সাধারণ সম্পাদক পদে আরেক নেতার কাছ থেকে ৩০ লাখ টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া আরো বেশ কয়েকটি থানা ও ওয়ার্ডেরও একই অভিযোগ জমা পড়েছে কেন্দ্রে। তবে পদবাণিজ্যের অভিযোগ ভিত্তিহীন ও অসত্য বলে ঢাকা দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক গণমাধ্যমকে জানান। তারা বলেন যারা বাদ পড়েন বা বাদ পড়ার শঙ্কা থাকে, তারাই এমন মিথ্যা অভিযোগ করেন। কারো কাছ থেকে কোনো টাকা বা উপহারের কথাও অস্বীকার করেন তারা।

এদিকে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড কমিটি নিয়েও জোরালো অভিযোগ রয়েছে। প্রস্তাবিত কমিটি নিয়ে পদবাণিজ্যের একটি অডিও রেকর্ড এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। অডিওতে শোনা গেছে, মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানকে ফোন করে দক্ষিণখান থানার ৪৭ নম্বর ওয়ার্ড নেতা আকবর আলী পদ পেতে ১০ লাখ টাকা দেয়ার বিষয়ে কথা বলছেন। কথোপকথনে বজলুর রহমান টাকা নেয়ার কথা স্বীকার করলেও এসব ফোনে না বলে সাক্ষাতে বলার পরামর্শ দিয়েছেন তাকে। তবে শেখ বজলুর রহমানের দাবি, ভাইরাল হওয়া অডিও রেকর্ডটি খণ্ডিত। দুই সেকেন্ডের মতো কথা বাদ দিয়ে এডিট করা হয়েছে। এ নিয়ে তিনি সাইবার সিকিউরিটি আইনে মামলা করবেন।

ঢাকা উত্তরের ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডে সভাপতি পদে শফিকুল ইসলাম শামীমের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে শামীম বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। গাড়ি ভাঙচুর, পুলিশের ওপর হামলাসহ সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে ছয়টি মামলা রয়েছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার আসামি ও পুলিশের সাবেক উপকমিশনার ওবায়দুর রহমান খানের বোনজামাই সফিউদ্দিন মোল্লা পনুর নাম প্রস্তাব করা হয়েছে ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি হিসেবে। পনু নিজেও জমি দখলসহ কয়েকটি মামলার আসামি। নিজের বোন হত্যায় অভিযুক্ত হয়ে ছয় মাস জেল খেটে জামিনে থাকা শফিউল আজম ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের প্রস্তাবিত সাধারণ সম্পাদক। ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি পদে বিতর্কিত কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর হোসেন যুবরাজের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। বিএনপি নেতা জুম্মন খানের ছেলে যুবরাজের বিরুদ্ধে মাদক কারবার, সোনা চোরাচালান, জমি দখল, ফুটপাতে চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। ৫১ নম্বর ওয়ার্ডে প্রস্তাবিত সাধারণ সম্পাদক আরেফিন সিদ্দিকী যুবদল থেকে আওয়ামী লীগে এসেই পদ পেতে যাচ্ছেন।

ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের প্রস্তাবিত কমিটিতে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ভোরের কাগজকে বলেন, অভিযোগ তো অনেক আসে। সেটির সত্যটা কতটুকু, সেটা যাছাই-বাছাই করাও দরকার আছে। তবে কমিটি গঠন নিয়ে এত অভিযোগ কেন বারবার আসে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটাও ঠিক কমিটি যার পক্ষে যায়, তিনি খুশি থাকেন আর যার বিপক্ষে যায় তিনি অখুশি থাকেন। যারা বিতর্কিত, অযোগ্য তাদের নাম কমিটিতে আসবে কেন- সেটাও একটা প্রশ্ন। এসব বিষয় অবশ্যই খতিয়ে দেখা হবে। এতে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হবে, দলের শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। তাকে তো কমিটিতে রাখার সুযোগ দেখছি না।

প্রসঙ্গত ২০২২ সালের অক্টোবরে মহানগরীর থানা ও ওয়ার্ড সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় ১ বছর ৮ মাস পর কমিটিগুলো জমা দেন মহানগর নেতারা। এর আগে দুই মহানগরীতে ইউনিট কমিটি সম্মেলনের মাধ্যমে ঘোষণা করেন নেতারা। সর্বশেষ ২০১৬ সালে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের কমিটি গঠন করা হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

১৩ সেপ্টেম্বর: সারাদিন যা যা ঘটলো

১৩ সেপ্টেম্বর: সারাদিন যা যা ঘটলো

ডোনাল্ড লু’র নেতৃত্বে আজ ঢাকায় আসছে মার্কিন প্রতিনিধিদল

ডোনাল্ড লু’র নেতৃত্বে আজ ঢাকায় আসছে মার্কিন প্রতিনিধিদল

রাজধানীতে ট্রাফিক পুলিশকে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাত

রাজধানীতে ট্রাফিক পুলিশকে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাত

বিএনপি নেতা আশফাকের নেতৃত্বে বায়রার ইসি বৈঠকে হামলা-ভাঙচুর

বিএনপি নেতা আশফাকের নেতৃত্বে বায়রার ইসি বৈঠকে হামলা-ভাঙচুর

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App