সংবাদ সম্মেলনে তথ্য প্রতিমন্ত্রী
সমঝোতার সব ধারা না পড়ে অপপ্রচারে নেমেছে বিএনপি
প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
কাগজ প্রতিবেদক : তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেছেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সমঝোতা স্মারকের সব ধারা না পড়ে, না বুঝেই অপপ্রচারে নেমেছে বিএনপি। দলটির নেতারা প্রতিনিয়তই মিথ্যাচার করছে। তারা ধারাগুলো খণ্ডিতভাবে তুলে ধরে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে। গতকাল সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারক নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সাম্প্রতিক বক্তব্যের বিষয়ে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সমঝোতা স্মারক কোনোভাবেই সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতি নয় বরং এটি উভয় দেশের জন্যই লাভজনক। বিএনপি অপপ্রচার করছে, বাংলার বুক চিরে ভারতের ট্রেন চললে বাংলাদেশের জন্য নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হবে। এটি মোটেই সঠিক নয়। সমঝোতা স্মারকের ৩ নম্বর ধারায় পরিষ্কার বলা হয়েছে, ‘রেড ট্রাফিক’ তথা অস্ত্র, গোলাবারুদ, বিস্ফোরকসহ বিপজ্জনক ও আপত্তিকর পণ্য পরিবহন করা যাবে না। সমঝোতা স্মারকের ৪ নম্বর ধারায় এটাও বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পণ্য ও মানুষের চলাচল সংশ্লিষ্ট দেশের জাতীয় আইন, প্রবিধান এবং প্রশাসনিক বিধানের অধীন হবে। বিএনপি এটা বলে না যে, ভারতের মধ্য দিয়েও বাংলাদেশের ট্রেন নেপাল ও ভুটান পর্যন্ত চলবে, নেপাল ও ভুটান থেকে ভারতের মধ্য দিয়ে ট্রেন বাংলাদেশে আসবে। কলকাতা বন্দর ব্যবহার না করে মোংলা ও চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করবে। তারা এটাও বলে না যে, ভারতের অভ্যন্তরীণ বিদ্যুৎ গ্রিডের মাধ্যমে তাদের ট্রান্সমিশন লাইন ব্যবহার করে ভারতের বুক চিরে বাংলাদেশ নেপাল থেকে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করবে।
তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমার বিরোধ আন্তর্জাতিক ফোরামে গিয়ে নিষ্পত্তি করে বাংলাদেশের পক্ষে রায় এনেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। তিনি অত্যাধুনিক চীনা সাবমেরিন যুক্ত করে বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে ত্রিমাত্রিক বাহিনীতে রূপান্তর করে দেশকে সামরিকভাবে শক্তিশালী করেছেন। বঙ্গবন্ধুকন্যা ভারতের সঙ্গে স্থলসীমান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি ও ছিটমহল সমস্যার সমাধানের মধ্য দিয়ে ১০ হাজার একর জমি বাংলাদেশের মধ্যে সংযুক্ত করেছেন। ভারতের মাটি ও গ্যাস ব্যবহার করে ভারতে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ত্রিপুরার পালাটানা থেকে কম খরচে আমদানি করে বাংলাদেশে নিয়ে এসেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার। গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তিতে ভারতকে রাজি করিয়ে, গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যা শেখ হাসিনাই আদায় করেছেন। আর বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া গঙ্গার পানির কথা বলতেই ভুলে গিয়েছিলেন- এ কথা দেশের সবাই জানে। তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তির জন্য ভারতকে চাপের মধ্যে শেখ হাসিনাই রেখেছেন। এই চুক্তি হলেও তার হাত ধরেই হবে। বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে তাদের কোনো চিন্তা ছিল বলে প্রমাণ পাওয়া যায় না।
বিএনপির রাজনীতিই নতজানু উল্লেখ করে আরাফাত বলেন, ২০১৪ সালে বিজেপি প্রথম ক্ষমতায় আসার সঙ্গে সঙ্গে বিএনপি মিষ্টি বিতরণ করেছিল। বিএনপি তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা নিয়ে ভারতের সঙ্গে কখনোই একটি কথাও বলেনি। ভারতকে গ্যাস দেয়ার মুচলেকা দিয়ে ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসেছিল তারা। বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, আপনাদের চিন্তাধারা নতজানু, যে কারণে আপনারা আঞ্চলিক যোগাযোগবিরোধী। এজন্য যখন সাবমেরিন ক্যাবল ফ্রি দেয়া হয়েছিল তখন তা নেননি। বাংলাদেশের জনগণকে হাজার কোটি টাকা আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন করেছেন। আপনারা মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশ হয়ে ভারতে গ্যাস রপ্তানি করতে দেননি এবং বাংলাদেশের মানুষকে স্বল্পমূল্যে গ্যাসপ্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত করেছিলেন। আপনাদের বিবেক নতজানু, যে কারণে আপনারা নিজেরা যা করতে পারেননি, এমনকি কোনো উদ্যোগও নেননি, সেগুলো নিয়ে আওয়ামী লীগের অর্জন থাকা সত্ত্বেও নির্লজ্জের মতো সমালোচনা করেন।