×

শেষের পাতা

পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি বন্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে : প্রধানমন্ত্রী

মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রভাব আসতে পারে

Icon

প্রকাশ: ০৯ মে ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

কাগজ প্রতিবেদক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন- বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতি সৃষ্টির যে আভাস দেখা যাচ্ছে- তা সারা বিশ্বের পাশাপাশি বাংলাদেশের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা যায়। দেশের অর্থনীতিতে এই সংঘাতের কিছুটা প্রভাব আসতে পারে। এ সময় তিনি বলেন, পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি বন্ধে সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে। গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদে এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুলের এক লিখিত প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ববাজারে অস্থিতিশীলতা, বাজার ব্যবস্থাপনায় অসামঞ্জস্যতা ও বিশ্বব্যাপী জ¦ালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশের মূল্যস্ফীতি কিছুটা বাড়ার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া, সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতির কারণে পণ্য সরবরাহের সাপ্লাই-চেইন ক্ষতিগ্রস্ত হলে মূলত ইরান বা পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে রপ্তানি সংশ্লিষ্ট পরিবহন খরচ বেড়ে যেতে পারে। এতে পণ্য তৈরি ও সরবরাহের ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় রপ্তানিকারকরা কঠিন প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হতে পারে। এ অবস্থায় আমার সরকারের সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে আমি নির্দেশ দিয়েছি- যাতে প্রত্যেকে মধ্যপ্রাচ্যের চলমান ঘটনাপ্রবাহের ওপর নজর রাখে এবং এ বিষয়ে নিজ নিজ করণীয় নির্ধারণ করে। বিশেষ করে এ সংঘাত দীর্ঘ হলে কোন কোন সেক্টরে প্রভাব পড়তে পারে তা বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেয়ার জন্য আমি নির্দেশনা দিয়েছি। এ কথা ঠিক, এ সংঘাত কী মাত্রায় রূপ নেবে এবং এর অর্থনৈতিক প্রভাব কী হতে পারে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। এই পরিস্থিতি সামাল দিতে রপ্তানি বাণিজ্যের প্রতি গুরুত্ব আরোপসহ উক্ত খাতকে সহযোগিতা করার আবশ্যকতা তৈরি হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই পরিস্থিতিতে অর্থনীতিতে সম্ভাব্য বিরূপ প্রভাব প্রশমনের লক্ষ্যে সরকার অগ্রিম পদক্ষেপ নিয়েছে। এগুলো হলো- চাহিদা-জোগানের ভারসাম্য ঠিক রাখা। প্রবাসীদের রেমিট্যান্স দিতে যেন কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতে না হয়, সেই উদ্দেশ্যে রেমিট্যান্স পাঠানো সহজ করা হয়েছে এবং রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে ২ দশমিক ৫০ শতাংশ নগদ প্রণোদনা ও ২২ অক্টোবর, ২০২৩ হতে কার্যকর ব্যাংকগুলোর দ্বারা অতিরিক্ত ২? দশমিক ৫০ শতাংশের যে প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে তা অব্যাহত রাখা। রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানগুলোকে অধিকতর অভিঘাত সহনশীল করার পাশাপাশি দেশের রপ্তানিমুখী শিল্পের বিকাশ ও প্রসারের চলমান ধারা অব্যাহত রাখা। নিকট ভবিষ্যতে সরবরাহ সংকটের ফলে সৃষ্ট মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে অর্থনীতির অগ্রাধিকারমূলক খাতসমূহ যেমন, কৃষি, সিএমএসএমই, বৃহৎ শিল্প ও সেবা খাতের জন্য গৃহীত স্বল্প সুদভিত্তিক পুনঃঅর্থায়ন স্কিমসমূহ অব্যাহত রাখা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের সম্পূর্ণ পরিস্থিতিতে ইরানের পার্শ্ববর্তী হরমুজ প্রণালিতে জাহাজ চলাচল বিঘিœত হলে স্পট মার্কেটের এলএনজি সরবরাহে কিছুটা বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে। পাশাপাশি জ¦ালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়া ও এলএনজির দাম বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় কাতারের প্রতিষ্ঠান থেকে কাক্সিক্ষত পরিমাণ এলএনজি আমদানি সম্ভব না হলে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় ওমানের প্রতিষ্ঠান ও স্পট মার্কেট থেকে অতিরিক্ত এলএনজি আমদানির সুযোগ রয়েছে। শেখ হাসিনা আরো বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের যে কোনো সংঘাত বা সংঘাতের খবর জ¦ালানি তেলের বাজারকে প্রভাবিত করে। ফলে পণ্যের জাহাজ ভাড়া বেড়ে যায়। যা সার্বিকভাবে আমদানি ব্যয়ের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। সার আমদানি ব্যয়েও এর প্রভাব পড়তে পারে। বিশেষ করে সারের ক্ষেত্রে বিকল্প উৎস হিসেবে চীন, মরক্কো, তিউনিশিয়া, কানাডা ও রাশিয়ার সঙ্গে বিদ্যমান সম্পর্ক আরো জোরদার করা হবে। পরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে : গাবতলী বাসস্ট্যান্ডসহ সব গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঢাকা-১৪ আসনের সংসদ সদস্য মাইনুল হোসেন খান নিখিলের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, শহরের প্রতিটি জায়গায় আমরা পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করব। বাস ও ট্রাক যেন নির্দিষ্ট জায়গায় থাকে, সেজন্য পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে। যানজট যেন সড়কে না হয় কিংবা সড়ক যেন যানবাহনের দখলে না থাকে সেই পদক্ষেপ আমরা নিচ্ছি। আগামীতে এটা অব্যাহত থাকবে। আমরা আরো দেখব কোন কোন এলাকায় এই সমস্যা আছে; সেগুলো চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মুজিবুল হক চুন্নুর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশ ঘনবসতিপূর্ণ। ব্যবস্থাপনায় আমাদের পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যারা কাজ করেন, তারা দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করেন। তাদের ঈদ ছুটি বলে কিছু নেই। ঝড়-বৃষ্টি-রোদ বলে কিছু নেই। তারা তাদের কর্তব্য পালন করে যান। কিন্তু আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে সচেতনতা আসা দরকার। হেলপার কিংবা যাদের লাইসেন্স নেই তারা যে কখন কোন গাড়িতে উঠে পড়ে সেটা বলা মুশকিল হয়ে যায়। এভাবে গাড়ি চালাতে গিয়েই দুর্ঘটনাগুলো ঘটে। তারা নিজেরাও মারা যায়, মানুষকেও মারে। এজন্য নিজেকে সচেতন থাকতে হবে। তিনি বলেন, আমরা সুযোগ দিয়েছি গাড়ি কেনার। এখন গাড়ির সংখ্যা এত বেশি। সেই তুলনায় চালকের সংখ্যা অনেক কম। আমরা চালকদের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা নিচ্ছি। শুধু হাতে-কলমে ট্রেনিং নয়; ডিজিটাল সিস্টেমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আমরা লাইসেন্স দিচ্ছি। যাদের ভারী গাড়ি চালানোর কোনো যোগ্যতা নেই, তারা যেন এই গাড়ি চালাতে না যায়। তিনি বলেন, আমরা চাই না দুর্ঘটনায় কোনো মানুষের মৃত্যু হোক। ? এর আগে যেসব জায়গায় দুর্ঘটনা হয়েছে, মানুষ মারা গেছে। সে জায়গাগুলো সুনির্দিষ্ট করে দুর্ঘটনা মুক্ত করার পদক্ষেপ আমরা নিয়েছি। ফলে এসব এলাকায় এখন দুর্ঘটনা খুব একটা হয় না। তবে এখন আমাদের ড্রাইভারদের সমস্যা। ড্রাইভারদের একটানা যাতে গাড়ি চালাতে না হয় সেজন্য কয়েক কিলোমিটার পর আমরা তাদের জন্য বিশ্রামের ব্যবস্থা নিচ্ছি। সংসদ সদস্যসহ সবাইকে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনাদের ড্রাইভার সময়মতো খাচ্ছে কিনা ঠিকমতো বিশ্রাম নিচ্ছে কিনা সেদিকে খেয়াল রাখবেন। অনেকেই তা করেন না। এদিকে সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে। ঢাকা-৪ আসনের সংসদ সদস্য ড. আওলাদ হোসেনের এক সম্পূরক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যানজট নিরসনে আমরা ইতোমধ্যে অনেক কাজ করেছি। একনেকে প্রকল্প নিয়েছি। এবারের ঈদে যাত্রাবাড়ী এলাকায় যানজট নিরসনে সংসদ সদস্য সবাইকে নিয়ে যে কাজ করেছেন এটা যদি সব সময় করা হয়, আমি আশা করব যানজট আর থাকবে না। তাছাড়া যাত্রাবাড়ী এলাকায় যেন আর যানজট না হয় সে ব্যাপারে আমাদের প্রকল্প নেয়া হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন হতে একটু সময় লাগে। উন্নত দেশের রাস্তা করতে যে খরচ লাগে আমাদের দেশে তার চেয়ে বেশি খরচ হয়। তার একটাই কারণ- আমাদের দেশের মাটি অনেক নরম। এখানে কাজ করতে হলে মাটিও তৈরি করতে হয়। তবে আমরা আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগ করছি। যার জন্য রাস্তাগুলো টেকসই হচ্ছে। তবে যানজট যেন কম হয় সে সঙ্গে দুর্ঘটনাও যেন না ঘটে, সে ব্যাপারে আমরা যথেষ্ট সচেতন এবং আরো পদক্ষেপ নিচ্ছি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App