×

শেষের পাতা

দেশজুড়ে রবীন্দ্রজয়ন্তীর উৎসব

রবীন্দ্রনাথ বাঙালির জীবনঘনিষ্ঠ

Icon

প্রকাশ: ০৯ মে ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

 রবীন্দ্রনাথ বাঙালির জীবনঘনিষ্ঠ
কাগজ প্রতিবেদক : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাঙালির মনে ও মননে চির জাগরুক। তার গান বাঙালির নিত্যসঙ্গী। চলতে-ফিরতে, বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, উৎসব-অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রসংগীতের সুর বাজে। সংকটে তার বাণী এখনো প্রেরণার উৎস। সত্যের পথে চলতে, অন্যায়ের প্রতিবাদে কেউ পাশে না থাকলেও অভীষ্ট লক্ষ্যে দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে একাই এগিয়ে যাওয়ার সাহস জোগান তিনি। এমনই নিবিড়ভাবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাঙালির জীবনঘনিষ্ঠ হয়ে আছেন। তার গান জাতীয় সংগীত হিসেবে পেয়ে ধন্য হয়েছেন এ দেশের মানুষ। গতকাল বুধবার ২৫ বৈশাখ কবিগুরুর ১৬৩তম জন্মবার্ষিকীর দিনটি ‘রবীন্দ্রজয়ন্তী’ উৎসব হিসেবে উদযাপিত হয়েছে দেশজুড়ে। বরাবরের মতোই রাজধানীসহ কুষ্টিয়ার শিলাইদহ, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, নওগাঁর পতিসরে কবির স্মৃতিবিজড়িত স্থানে সরকারি উদ্যোগে রবীন্দ্রজয়ন্তীর কর্মসূচি পালিত হয়। এছাড়া বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন এ উপলক্ষে পালন করেছে নানা কর্মসূচি। রবিঠাকুরের জন্মদিন উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তারা কবির স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন তার বাণীতে বলেন, মনুষ্যত্বের বিকাশ, মানবমুক্তি ও মানবপ্রেম ছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনবোধের প্রধান পাথেয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, রবীন্দ্র দর্শনের প্রধান বিষয় হচ্ছে অসাম্প্রদায়িক চেতনা, বিশ্বমানবতাবোধ ও মানুষে মানুষে মিলন। তাকে জীবনমুখী শিক্ষা দর্শনের পথপ্রদর্শকও বলা যায়। কবিগুরুর জন্মদিনে নানা কর্মসূচি : বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে গতকাল বুধবার থেকে শুরু হয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন। জাতীয় পর্যায়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানমালা এদিন সকাল ১১টায় জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। প্রদীপ প্রজ্জ্বলন ও জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে শুরু হয় প্রথম দিনের আয়োজন। এরপর ‘সোনার বাংলার স্বপ্ন ও বাস্তবতা : রবীন্দ্রনাথ থেকে বঙ্গবন্ধু’ প্রতিপাদ্যে অনুষ্ঠিত আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এমপি বলেন, রবীন্দ্রনাথ এবং বঙ্গবন্ধুর দর্শন একসঙ্গে দেখলে তার কেন্দ্রে বাঙালি জাতিসত্তা, আত্মপরিচয় এবং আত্মমর্যাদা খুঁজে পাই। বাঙালির আত্মপরিচয় ও আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠাই ছিল রবীন্দ্রনাথ ও বঙ্গবন্ধুর মধ্যকার নিবিড় যোগসূত্র। রবীন্দ্রনাথ বাঙালিকে নিয়ে গেছেন বিশ্বসভায়, বঙ্গবন্ধুও ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘের সভায় প্রথম বাংলায় ভাষণ দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু আমাদের জাতীয় সংগীত হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ রচিত ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’। আলোচনা পর্ব শেষে পরিবেশিত হয় রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীর সাংস্কৃতিক আয়োজন। কবিগুরুর জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে এদিন কুষ্টিয়ার শিলাইদহ কুঠিবাড়িতে দুদিনব্যাপী অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয়। বেলা সাড়ে ১১টায় কুষ্টিয়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ এ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রউফ, পুলিশ সুপার এ এইচ এম আব্দুর রকিব। কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো. এহতেশাম রেজার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় রবীন্দ্রনাথের গান, কবিতা ও সাহিত্যজীবন নিয়ে আলোচনা করেন কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. সরোয়ার মুর্শেদ রতন। আলোচনা শেষে বিকালে কুষ্টিয়া শিল্পকলা একাডেমি, রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে রবীন্দ্রসংগীত, কবিতা আবৃত্তি ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়। উৎসবে দেশ ও দেশের বাইরের প্রায় ৫৯টি রবীন্দ্রসংগীতের দল অংশ নেয়। রবীন্দ্রজয়ন্তী উপলক্ষে কুঠিবাড়ির আঙিনায় বৃষ্টি ভেজা পরিবেশে নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোরসহ নানা বয়সি মানুষের সমাগম ঘটে। তবে দুটি উপজেলায় নির্বাচন থাকায় মানুষের উপস্থিতি ছিল কিছুটা কম। শাহজাদপুরে অবস্থিত কাছারিবাড়িতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের তিন দিনব্যাপী জন্মজয়ন্তী অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, এমপি। এ সময় তিনি বলেন, রবীন্দ্রনাথ প্রদত্ত বাথানে যদি কোনো অবৈধ দখল থেকে থাকে তাহলে তা পুনরুদ্ধারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। ভূমিমন্ত্রী বলেন, আমাদের জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা’ এখন পরিণত হয়েছে বাংলাদেশের জাতীয় ঐক্যের অন্যতম প্রতীকে। রবীন্দ্র চিন্তায় উজ্জীবিত হয়ে তরুণ প্রজন্ম বিশ্বের দরবারে স্মার্ট ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে উঁচু করে তুলে ধরবে। এর আগে ভূমিমন্ত্রী রবীন্দ্র কাছারিবাড়িতে এসে পৌঁছলে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা তাকে স্বাগত জানান। এরপর বেলুন উড়িয়ে বিশ্বকবির ১৬৩তম জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন ঘোষণা করেন ভূমিমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের সংসদ সদস্য চয়ন ইসলাম, সিরাজগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য জান্নাত আরা হেনরী, শাহজাদপুর উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আজাদ রহমান, শাহজাদপুরের উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. কামরুজ্জামান প্রমুখ। এছাড়াও ‘বাজুক প্রাণে বজ্রভেরী/ অকূল প্রাণের সে উৎসবে’ সেøাগান ধারণ করে তিন দিনের জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত উৎসবের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থা। সেখানে ঘটবে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে রবীন্দ্রশিল্পীদের মহা মিলনমেলা। আজ ৯ মে (বৃহস্পতিবার) আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের লবিতে উদ্বোধনী নৃত্য পরিবেশনের মধ্য দিয়ে পর্দা উঠবে এবারের আয়োজনের। এবারের আয়োজনে শতাধিক শিল্পী উৎসবে অংশ নেবেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App