×

ইষ্টিকুটুম

ব্যাঙদের সাগরযাত্রা

Icon

মহিউদ্দীন আহমেদ

প্রকাশ: ০৭ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

 ব্যাঙদের সাগরযাত্রা

অনেকগুলো কোলা ব্যাঙ ছোট্ট একটা ডোবায় গাদাগাদি হয়ে বাস করত। সে ডোবার পানি ছিল দূষিত। ছিল পরিমিত খাবারের অভাব। এক কথায় ডোবাটি ছিল বসবাসের অনুপযোগী। অন্য কোনো উপায় না থাকায় ব্যাঙরা সেখানেই বাস করত।

একদিন একটা সাহসী ব্যাঙ এসে বলল, ‘শোনো বন্ধুরা! আমি তোমাদের জন্য একটা সুখবর নিয়ে এসেছি।’

সব ব্যাঙ আগ্রহী হয়ে সাহসী ব্যাঙটির দিকে তাকাল।

একটা ব্যাঙ জানতে চাইল, ‘কী সুখবর ভাই?’

‘আমরা আর এই ডোবায় থাকব না।’

‘তাহলে কোথায় যাব?’

‘বড় একটা জায়গার সন্ধান পেয়েছি। সেখানে চলে যাব।’

একটা বুড়ো ব্যাঙ শাপলা পাতার উপর আরাম করে বসে রোদ পোহাচ্ছিল। সে আড়মোড়া ভেঙে বলল, ‘তা জায়গাটার নামটা কী বলো তো শুনি?’

‘দাদু, জায়গাটার নাম হলো- সাগর।’-সাহসী ব্যাঙটা বলল।

‘সাগর!’-বুড়ো ব্যাঙ অবাক হয়ে বলল, ‘সাগর আবার কী জিনিস?’

‘সাগর হলো মস্ত বড় একটা জায়গা। সেখানে আমাদের গাদাগাদি করে বাস করতে হবে না। আমাদের জীবন হবে অনেক সুখের।’

‘কিন্তু আমরা তো এখানেও সুখেই আছি। খাচ্ছি-দাচ্ছি, ঘুমাচ্ছি। মনের আনন্দে ঘ্যা-গু করে ডাকাডাকিও করছি।’

‘আরে দাদু, সাগরে গেলে আমাদের এই সুখ দশ গুণ বেড়ে যাবে।’

‘কেন, বাড়বে কেন?’

‘এখানে সাপ আমাদের তাড়া করলে আমরা পালানোর জায়গা খুঁজে পাই না। চড়কির মতো ঘুরতে থাকি। শেষে সাপ আমাদের ধরে খেয়ে ফেলে। কিন্তু সাগরে এমনটা হবে না। আমরা পালাতে পারব। এখানে আমরা কখনো ডাঙায় উঠলে দুষ্টু ছেলেপেলেরা আমাদের ধরতে আসে। ঢিল ছুড়ে মারে। আছে গুই সাপ এবং শেয়াল-কুকুরের ভয়। কিন্তু সাগরে এ ধরনের ঝামেলা থাকবে না। আমরা একটা মুক্ত জীবন পাব। তাছাড়া বড় জায়গায় থাকলে মনটাও বড় হয়, আপনি নিশ্চয় এ কথা মানেন?’

‘সবই বুঝলাম কিন্তু তুমি কি কখনো সাগরে গিয়েছ?’

‘না, আমি যাইনি। তবে আমার বন্ধু গিয়েছিল। ওর কাছেই শুনেছি।’

‘শোনা কথায় এত বিশ্বাস করছ?’

‘অবশ্যই। কেননা, সে আমার খুবই কাছের একজন বন্ধু।’

‘হুম, বুঝতে পেরেছি।’ বুড়ো ব্যাঙটা অন্যদের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘তোমরা সব তো শুনলে। এবার তোমরাই বলো, তোমরা সাগরে যেতে চাও কি না?’

সবাই এক বাক্যে বলে উঠল, ‘যেতে চাই, যেতে চাই।’

২.

ব্যাঙরা সাগরের উদ্দেশে রওনা দিল।

নদী-নালা, খাল-বিল, পাহাড়-পর্বত-জঙ্গল পেরিয়ে তারা সাগরের দিকে যেতে লাগল।

হঠাৎ একটা ইয়া বড় সাপ তাদের পথ আটকে দিল। সাপটা তার লম্বা জিহ্বা বের করে হিসহিস শব্দ করতে লাগল। বলল, ‘আরেব্বাহ! এ যে দেখছি মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি। আমি এক্ষুণি তোমাদের সবগুলোকে খাব।’

ব্যাঙগুলো ভয় পেয়ে একে অপরের গায়ের নিচে লুকাতে লাগল। পিনপতন নীরবতা নেমে এলো সেখানে।

ভয়ংকর সাপটা বীরোচিত ভঙ্গিতে বলল, ‘লুকিয়ে লাভ নেই। আমি তোমাদের সবগুলোকে খেয়ে ফেলব।’

একটা মজার ব্যাঙ ছিল দলে। সে কথা বলে উঠল, ‘হে সাপ মহাশয়! সংখ্যায় আমরা শত শত। হাজার হাজার। এতগুলো ব্যাঙ তো আপনার পেটে জায়গা হবে না।’

মজার ব্যাঙটার কথা শুনে সাপ বলল, ‘এখন যে কয়টা খেতে পারি, খাব। বাকিগুলো মেরে রেখে দেব পরে খাওয়ার জন্য।’

মজার ব্যাঙটা ফিক করে হেসে উঠল। বলল, ‘তারিফ করছি মহাশয়। আপনার পরিকল্পনার তারিফ করছি।’

‘মানে কী? তুমি কি আমার সাথে মশকরা করছ?’ রাগী কণ্ঠে জানতে চাইল সাপটা।

মজার ব্যাঙটা বলল, ‘না ইয়ে মানে বলছিলাম যে, আপনি আমাদের সবাইকে খাবেন আর আমরা কি তা চেয়ে চেয়ে দেখব ভেবেছেন?’

‘চুপ কর ব্যাঙের বাচ্চা ব্যাঙ। যত বড় মুখ নয় তত বড় কথা। দাঁড়া, এক্ষুণি দেখাচ্ছি মজা।’

সঙ্গে সঙ্গে সাপটা তাকে ধরার জন্য ছোবল দিতে গেল।

তখন একটা চিকনা ব্যাঙ বলে উঠল, ‘আস্তে মহাশয়-আস্তে! দয়া করে এই কাজটি করবেন না, ও আমাদের দলের খুবই আদরের একটা ব্যাঙ।’

‘ও তাই? তাহলে তোমাকে খাই। ওকে না-হয় পরে খাওয়া যাবে।’

‘না! কাউকেই খাওয়া যাবে না।’ সাহসী ব্যাঙটা এই কথা বলে সাপের মুখোমুখী দাঁড়িয়ে পড়ল।

তার দেখাদেখি বাকিরাও দাঁড়াল সাহসী ব্যাঙের পাশে।

সাপটা ফোঁস ফোঁস করতে করতে আচমকা ছোবল বসিয়ে একটা ব্যাঙ ধরে গিলে ফেলল।

ব্যাঙগুলো হা হয়ে দেখল চোখের পলকে ঘটে যাওয়া সেই মর্মান্তিক দৃশ্যটা। সঙ্গে সঙ্গে তারা প্রতিবাদে ফেটে পড়ল। ঝাঁপিয়ে পড়ল সাপের উপর। একদল ব্যাঙ তাদের শক্তিশালী জিহ্বা দিয়ে পেঁঁচিয়ে ধরল সাপের জিহ্বাটিকে। অন্য ব্যাঙগুলো দখলে নিলো সাপের লেজটাকে। আর বাকিরা সাপের পুরো দেহ কামড়ে এবং হাত-পায়ের নখ বসিয়ে রক্তাক্ত করে ফেলল। কিছুক্ষণের মধ্যে সাপটা তীব্র ব্যথার যন্ত্রণায় কাতরাতে শুরু করল। অবস্থা বেগতিক দেখে সাপটা বলল, ‘মাফ চাই। ছেড়ে দাও। আমাকে জানে মেরো না।’

তারা পরাজিত সাপটাকে ছেড়ে দিল।

ব্যাঙদের হাত থেকে ছাড়া পেয়ে অতি কষ্টে রাস্তার পাশের জঙ্গলে লুকাল সাপটা।

৩.

যাই হোক। আবার তারা রওনা দিল।

যেতে যেতে বিশাল এক মরুভূমিতে পৌঁছাল তারা।

যতদূর চোখ যায় বালি আর বালি। সেখানে সূর্যের তাপ এত বেশি যে, গা ঝলসে যাওয়ার অবস্থা।

কিছুক্ষণের মধ্যে তৃষ্ণায় তাদের গলা শুকিয়ে এলো। হন্যে হয়ে পানি খুঁজতে লাগল তারা। কিন্তু কোথাও এক ফোঁটা পানির সন্ধান পাওয়া গেল না।

বুড়ো ব্যাঙটা হাঁপাতে হাঁপাতে বলল, ‘পারছিনে। আমি আর এগুতে পারছিনে।’

সাহসী ব্যাঙটা বলল, ‘আর একটু কষ্ট করুন দাদু। এই মরুভূমিটা পার হলেই আমরা সাগরে পৌঁছাব।’

বুড়ো ব্যাঙের চোখ বুজে এলো। চার হাত-পা ছেড়ে দিয়ে চিৎপটাং হয়ে শুয়ে পড়ল।

তখন তাদের পাশ দিয়ে এক দল পিঁপড়া সার বেঁধে খাবার বয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। দৃশ্যটা দেখে সাহসী ব্যাঙটার মাথায় একটা বুদ্ধি এলো। সে বলে উঠল, ‘আইডিয়া।’

‘কী আইডিয়া?’ সবাই জানতে চাইল।

‘দাদুকে আমরা মাথায় তুলে বয়ে নিয়ে যাব।’

যা কথা তাই কাজ।

সবাই বুড়ো ব্যাঙটাকে মাথায় তুলে নিয়ে মরুভূমির তপ্ত বালু পথে হেঁটে যেতে লাগল।

যেতে যেতে অদ্ভুত একটি শব্দ ভেসে এলো বাতাসে। সেই শব্দে বুড়োর ব্যাঙের জ্ঞান ফিরল। সে বলল, ‘কীসের শব্দ এটা?’

সাহসী ব্যাঙ বলল, ‘এটা হলো- সাগরের ঢেউয়ের গর্জন দাদু!’

দাদু খুশি হয়ে বলল, ‘বাহ! দারুণ লাগছে তো শুনতে!’

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

মব কিলিং সরকার সমর্থন করে না: উপদেষ্টা নাহিদ

মব কিলিং সরকার সমর্থন করে না: উপদেষ্টা নাহিদ

পার্বত্য জেলায় সংঘর্ষ:  নিহত ৪, আহত অর্ধশতাধিক

পার্বত্য জেলায় সংঘর্ষ: নিহত ৪, আহত অর্ধশতাধিক

পলাতক তালিকার শীর্ষে ডিআইজি হারুন

পলাতক তালিকার শীর্ষে ডিআইজি হারুন

ইসরায়েলি হামলায় হিজবুল্লাহ কমান্ডারসহ নিহত ১৪

ইসরায়েলি হামলায় হিজবুল্লাহ কমান্ডারসহ নিহত ১৪

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত
নির্বাহী সম্পাদক: এ কে সরকার

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App