পিন্ডিতে মিরাজের দশম ফাইফার
রিয়াজ উল্লাহ
প্রকাশ: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
রাওয়ালপিন্ডিতে এক অন্যরকম মেহেদীকে দেখল বাংলাদেশ ক্রিকেট। পাকিস্তানের বিপক্ষে ২ ম্যাচের টেস্ট সিরিজে মিরাজের উইকেট ১০টি। বিশেষ করে দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে মেহেদী হাসান মিরাজের বোলিং তোপে রীতিমতো দিশাহারা হয়ে পড়ে পাকস্তানি বাহিনী। যে দিন ক্যারিয়ারের দশম ফাইফারের স্বাদ আস্বাদন করে দেশের এই দুর্দান্ত অলরাউন্ডার। ক্যারিয়ারের দশম ফাইফার অর্জনের পর রাওয়ালপিন্ডির অনার্স বোর্ডে নিজ হাতে নিজের নাম লিখেন তিনি।
রাওয়ালপিন্ডিতে প্রথম ম্যাচে দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ উইকেট নিয়ে নিজের প্রয়োজনীয়তাকে খুব ভালোভাবে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। পাকিস্তান দুর্গ প্রথমবারের মতো জয় করতে বল হাতে তার কার্যকরী ভূমিকা ছিল অনন্য, অসাধারণ। নিজের ক্যানভাস যে বিরাট বড়, তা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন বেশ ভালোভাবেই। সেই ধারাবাহিকতায় দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট পেলেন এই অফস্পিনার। দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় দিনে তার ৫ উইকেটে স্রেফ দিশাহারা ছিল পাকিস্তান। ২৭৪ রানেই গুটিয়ে দেয়া হয় স্বাগতিকদের। ক্যারিয়ারের দশম ফাইফারের স্বাদ পাওয়া মিরাজ বাংলাদেশের দ্বিতীয় বোলার হিসেবে পাকিস্তানের মাটিতে এমন কিছু করলেন। ২০০৩ সালে মোহাম্মদ রফিক পরপর দুই ম্যাচে ৫ উইকেট পেয়েছিলেন দুবার। পেশাওয়ারে ১১৮ রানে ৫ উইকেটের পর মুলতানে ৩৬ রানে তার শিকার ছিল ৫ উইকেট। সুদীর্ঘ ২১ বছর পর রফিকের পর মিরাজ পেলেন ৫ উইকেট। তাতে রাওয়ালপিন্ডির অনার্স বোর্ডে নিজের নাম তুলেছেন মিরাজ। সেদিন দিনের শুরুতে উইকেট থেকে তেমন টার্ন ও বাউন্স আদায় করতে পারেননি এই অফস্পিনার। তবে দিন যত গড়িয়েছে মিরাজ তত নিজের চেনা রূপে দেখা দিয়েছেন। উইকেটে ছিল ঘাসের ছোঁয়া। এমন উইকেটে টার্ন পাওয়া কঠিন। এজন্য শৃঙ্খল বোলিংয়ের বিকল্প ছিল না। সেই শৃঙ্খলতা মেলে বোলিং করেই মিরাজ সফলতা পেয়েছেন। সে দিন সায়েম আইয়ুবের ব্যাটে ছক্কা হজম করলেও তাকে টেনে দেয়া বলে স্টাম্পড করে পেয়েছেন সফলতা। আর্ম বল ভেতরে ঢুকিয়ে পাকিস্তানের অধিনায়ক শান মাসুদকে করেছেন পরাস্ত। পাকিস্তানের লেজের তিন ব্যাটসম্যান খুররাম সাজ্জাদ, মোহাম্মদ আলী ও আবরার আহমেদকে ফিরিয়ে দেশের বাইরে তৃতীয়বারের মতো পেলেন ৫ উইকেট।
এর ফলে আগের সব রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছেন মিরাজ। দেশের বাইরে এটাই তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিং। ৬১ রানে পেয়েছেন ৫ উইকেট। এর আগে হারারেতে ৮২ রানে ৫ এবং কিংসটনে ৯৩ রানে ৫ উইকেট। এবার সবকিছুকে হারিয়ে নিজেকে আরেক ধাপ এগিয়ে নিয়েছেন এই অফস্পিনার। বল হাতে পাকিস্তানের বিপক্ষে এটি একমাত্র ফাইফার হলেও মেহেদী হাসান মিরাজ ইংল্যান্ড, ভারত, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ক্যারিয়ারে বাকি ফাইফা গুলো সংগ্রহ করেন। সর্বপ্রথম ২০১৬ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৫ উইকেটের দেখা পান মিরাজ। সে বছরই ইংলিশদের বিপক্ষে তিনটি ফাইফার লুপে নেন নিজের ঝুলিতে। ২০২২ সালের ২২ ডিসেম্বর ভারতের বিপক্ষে ৫ উইকেট নেন এই অফস্পিনার। এছাড়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২০১৮ সালে তিনটি ফাইফার নেন মিরাজ। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২০১৮ সালে এবং ২০২১ সালে দুটি ফাইফার সংগ্রহ করেছেন তিনি। বোলিংয়ে দুর্দান্ত মিরাজ দ্বিতীয় টেস্টে রাঙিয়েছেন ব্যাট হাতেও। যেখানে মাত্র ২৬ রানেই ৬ উইকেট হারিয়ে দিশাহারা হয়ে গিয়েছিল টাইগাররা, সেখানে লিটন দাসের সঙ্গে রেকর্ড জুটি গড়ে দলকে টেনে তুলেন তিনি। শুরুর দিকের বিপর্যয় কাটিয়ে লিটন দাস ও মিরাজ দারুণ সব শটের পসরা সাজিয়েই গড়েন ১৬৫ রানের রেকর্ড জুটি। ১৪৭ বছরের টেস্ট ইতিহাসে ৫০ রানের কমে ষষ্ঠ উইকেট পতনের পর সপ্তম উইকেটে সবচেয়ে বড় জুটির ইতিহাস গড়েন তারা। ব্যক্তিগত ৭৮ রান করে মিরাজ সাজঘরে ফিরে গেলেও দীর্ঘ ২৭ মাস পর সেঞ্চুরির দেখা পান টাইগার উইকেটরক্ষক লিটন দাস। তার ব্যাট থেকে আসে ১৩৮ রান। তবে সেঞ্চুরিটা করতে না পারার আক্ষেপ থেকে যায় মেহেদী হাসান মিরাজের। লড়াকু ইনিংস খেলে ৭৮ রানে থেমে যেতে হলো ডানহাতি এই ব্যাটারকে।
খুররম শেহজাদকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফিরেছেন তিনি। এটি ছিল টেস্ট ক্যারিয়ারে মিরাজের অষ্টম ফিফটি। ২০১৬ সালে মেহেদীর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক হয়।
মিরাজ তার প্রথম টেস্ট ইনিংসে ৬ উইকেট লাভ করেন, যার মধ্যে ইংল্যান্ডের অভিষেক খেলোয়াড় বেন ডাকেটের উইকেটটিও অন্যতম। সেই ম্যাচে সপ্তম কনিষ্ঠ বাংলাদেশি টেস্ট খেলোয়াড় হিসেবে অভিষিক্ত এই মিরাজ সবার নজর কাড়েন।
:: রিয়াজ উল্লাহ