রোহিত : দ্য ম্যাজিশিয়ান
ফরহাদ শাকিব
প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে ভারতকে ১৭ বছর পর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দ্বিতীয় শিরোপা জেতানোর নায়ক বনে যাওয়া রোহিত শর্মা এখন ভারতীয়দের কাছে রামায়ণের রামের আসনে বসে গেছেন। বসবেন না বা কেন, লম্বা সময়ের অপেক্ষার পাঠ চুকেছে এই রোহিতের নেতৃত্বেই। ২০০৭ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের উদ্বোধনী আসরে পাকিস্তানকে হারিয়ে মাহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্বে শিরোপা জিতেছিল ভারত। এরপর ভারতের ইতিহাস কেবল লজ্জার। টি-টোয়েন্টির প্রতিটি আসরে খেললেও আর কোনোবার শিরোপার দেখা পাননি তারা। শিরোপা খরায় যখন ধুঁকছিলেন দ্রাবিড়ের শিষ্যরা ঠিক সেই মুহূতেই রোহিতের নেতৃত্বে অবসান হলো ১৭ বছরের অপেক্ষার। তবে এই ইতিহাস আরো আগে রচিত হতে পারত। গত বছর ঘরের মাঠে ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে এই রোহিতের নেতৃত্বেই হেরেছিল ম্যান ইন ব্লুরা। সেই আসরের দুঃখ গোছাতে রোহিতের সময় লাগল মাত্র এক বছর, আর সেখানে শেষটা ভালোভাবেই রাঙিয়েছেন দারুণভাবে। দলকে বিশ্বকাপ জেতানোর পরপরই টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরের ঘোষণা দেয়ায় শেষটাও দারুণ হলো অধিনায়ক রোহিতের।
এবারের বিশ্বকাপের শুরু থেকেই বেশ অভিজ্ঞ হাতে দলকে সমন্বয় করেছেন রোহিত। এবারের বিশ্বকাপের দলে ছিলেন চারজন স্পিনার। অক্ষর পটেল, রবীন্দ্র জাদেজা, কুলদীপ যাদব এবং যুজবেন্দ্র চাহালকে দলে নেয় ভারত। অক্ষর এবং জাদেজা প্রায় একই ধরনের বোলার। তাদের একসঙ্গে ভারত খেলাবে না বলে মনে করা হয়েছিল। বিশ্বকাপে কুল-চা জুটি দেখা যেতে পারে বলে মনে করা হয়েছিল। কিন্তু বিশ্বকাপের আসরে একটি ম্যাচেও খেলানো হলো না চাহালকে। তাতেও ভারতের স্পিন আক্রমণ বিপক্ষের ওপর ভারী পড়েছে। তবে যখন দল ঘোষণা করা হয়েছিল তখন দলে চার স্পিনারের বিষয়ে বেশি কিছু বলেননি রোহিত। তিনি অপেক্ষা করেছিলেন নিজস্ব পরিকল্পনা নিয়ে। আর সবাই তার নীরবতার প্রমাণ দেখল ফাইনাল ম্যাচে।
বোলারদের ঠিক সময়ে কাজে লাগানোর দক্ষতায় মুগ্ধ হয়ে সাবেক ভারতীয় ক্রিকেটার কৃষ্ণমাচারি শ্রীকান্ত রোহিতকে তুলনা করেছেন ভারতের প্রথম ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতানো কপিল দেবের সঙ্গে। শ্রীকান্তের মতে, ‘অধিনায়কের ক্ষেত্রে বড় ব্যাপার, বোলারদের ভালোভাবে কাজে লাগানো। সেমিফাইনালেই যেমন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চতুর্থ ওভারেই অক্ষরকে নিয়ে এসেছে, ওই ওভারেই জস বাটলার আউট। তো কথা হচ্ছে, রোহিতের যে ব্যাপারটা আমার খুব পছন্দের, সেটা মাঠে শান্ত ও ধীরস্থির থাকা। এই ব্যাপারটা কপিল দেবের মধ্যেও দেখতাম। তখন কপিলকে কেন্দ্র করেই সবাই দলের সাফল্যে অবদান রাখত। দল মানে একজনের ব্যাপার নয়। রোহিত শর্মা দলকে একতাবদ্ধ করছে। যেটা অধিনায়ক এবং নেতা হিসেবে খুব গুরুত্বপূর্ণ।’ একজন শক্তিশালী নেতার প্রথম বৈশিষ্ট্য কঠিন সময়ে সবার আগে নিজেকে দলের সামনে মেলে ধরা, যাতে দল নিরাপদ থাকে আর রোহিত এ কাজে বেশ পটু। শ্রীকান্ত বলেন, “রোহিত অন্যদের বলে, ‘শোনো, ঝুঁকিপূর্ণ শট আমিই খেলা শুরু করব। আমিই দায়িত্ব নেব।’ আর সেটারই প্রতিফলন দেখা যায় মাঠে তার দুর্দান্ত সব শট আর ইনিংসে। ও শুরু করে দেয়ার পর বাকিরা ওর ইনিংস কেন্দ্র করে ভালো করে থাকে।’
গত শনিবারে বার্বাডোজের ইতিহাস রচনা করে জেতা নিজেদের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপসহ মোট চারটি আইসিসির মেগা ইভেন্টের শিরোপা জিতেছে ভারত। যেখানে বাকি দুটি ওয়ানডে শিরোপা। চার দশক আগে অর্থাৎ ১৯৮৩ সালে কপিলের নেতৃত্বেই প্রথমবারের মতো ওয়ানডে বিশ্বকাপ নিজেদের ঘরে তুলেছিল ভারত। এরপর ওয়ানডে বিশ্বকাপে নিজেদের দ্বিতীয় শিরোপা জিতে ২০১১ সালে, যার নেতৃত্বে ছিলেন শিরোপা জয়ী অধিনায়ক ধোনি। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রথম আসরে সেই ধোনির হাত ধরেই শিরোপা জিতেছিল ভারত। তার ১৭ বছর পরে আবারো টিম ইন্ডিয়ার হাতেই উঠেছে শিরোপা। এবারের আসরে বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক রোহিত শর্মা ম্যাচ শেষে টি-টোয়েন্টিকে বিদায় বলে ফেলেছেন। বিদায়ের এ ঘোষণায় ১৫৯ ম্যাচে এসে থামল রোহিতের আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ার। বিদায়বেলায় টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তিনি। ৪ হাজার ২৩১ রান জমা হয়েছে তার নামের পাশে। যেখানে বিশ্বকাপের এবারের আসরে ব্যাট হাতে ২৫৭ রান করে দ্বিতীয় শীর্ষ রান সংগ্রাহক। এবারের বিশ্বকাপ জয়ে সতীর্থ কোহলির মতো তিনিও জিতলেন দুই বিশ্বকাপ। এর আগে ২০০৭ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপজয়ী স্কোয়াডে ছিলেন রোহিত। টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নিলেও ওয়ানডে ও টেস্ট ক্রিকেট চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন রোহিত। বিদায় বেলা ভারতকে দিয়ে যাচ্ছেন দারুণ এক সুখস্মৃতি। ভারতীয়রা বুক চেতিয়ে বলতে পারবে তারা ২০২৪ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপজয়ী দল।
যার কৃতিত্ব বিরাট কোহলি, হার্দিক পান্ডিয়া, আর্শদীপ, সূর্যকুমারের পাশাপাশি মাস্টার মাইন্ড হিসেবে সব সময় থাকবে রোহিত শর্মার নাম।