ব্রেকিং |
জাতীয় সংগীত-সংবিধান নিয়ে ষড়যন্ত্র রুখে দাঁড়ান
সিপিবি ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির বিবৃতি
প্রকাশ: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
কাগজ প্রতিবেদক : মহান মুক্তিযুদ্ধ, জাতীয় সংগীত ও সংবিধানের মূল ভিত্তির উপর আঘাতকারীদের রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। সংগঠনটি বলেছে, যাদের প্রশ্রয়ে এরা দুঃসাহস দেখাচ্ছে জাতি তাদের ক্ষমা করবে না। গতকাল বুধবার সিপিবির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স এক বিবৃতিতে এই মন্তব্য করেন। পৃথক বিবৃতিতে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেছেন, জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের প্রস্তাব হঠকারী, আত্মঘাতী ও ঔদ্ধত্যমূলক। এ ধরনের তৎপরতা মহান মুক্তিযুদ্ধকে অবমাননার শামিল। এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
সিপিবির বিবৃতিতে বলা হয়, বিভিন্ন সময়ে মুক্তিযুদ্ধের নাম ব্যবহার করে ক্ষমতাসীন স্বৈরাচারী শাসকরা নানা ফ্যাসিস্ট কার্যকলাপ চালিয়েছে। এখন সময় এসেছে মুক্তিযুদ্ধ তথা গণযুদ্ধের প্রকৃত চেতনা জনগণের কাছে তুলে ধরার। জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে ফ্যাসিবাদ ও বৈষম্যের অবসানের কথা বলা হয়েছে। সেটি মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনা, সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত সংবিধানের চার মূলনীতি- গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও প্রগতিশীল জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে অর্জন করা সম্ভব।
বিবৃতিতে মোহাম্মদ শাহ আলম ও রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, আমাদের মূল সংবিধানের কোন কোন ক্ষেত্রে নেতিবাচক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে এবং শুরুতে কতক অসম্পূর্ণতাও রয়েছে- এ কথাও আমরা অনেকদিন ধরে বলে এসেছি। এই অসম্পূর্ণতা সম্পূর্ণ করা ও নেতিবাচক পরিবর্তনগুলো দূর করার কাজেও হাত দিতে হবে। তা করতে হবে সংবিধানের মূল ভিত্তি ঠিক রেখেই। আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি, অগণতান্ত্রিক কালাকানুন বাতিল, ক্ষমতার কেন্দ্রীভবন দূর করে ভারসাম্য ফিরিয়ে আনা, বিভিন্ন সময়ে সংবিধান সংশোধনীতে যেসব নতুন স্বৈরাচারী উপাদান সংযোজিত হয়েছে তা বাতিল, জনগণের মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা বিধানের বিষয়সমূহ সন্নিবেশিত করেই আদি সংবিধানের নেতিবাচক পরিবর্তন ও অসম্পূর্ণতা দূর করতে হবে।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, আমরা ক্ষোভের সঙ্গে লক্ষ্য করছি অনেকে সংবিধানের বিরোধিতা করতে গিয়ে প্রকারান্তরে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনার বিরোধিতায় নেমেছেন। এই অপশক্তিকে দেশবাসী গ্রহণ করবে না। জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে স্বৈরাচারী এবং ফ্যাসিস্ট শাসকদের পরাভূত করা হয়েছে, অন্য কোনো স্বৈরাচারী এবং ফ্যাসিস্টের ছায়ায় কেউ যদি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতায় নামে দেশবাসী তাদের প্রতিহত করবে। বিবৃতিতে দেশবাসীকে বিশেষ করে জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী সাধারণ ছাত্র-জনতাকে এসব অপশক্তি সম্পর্কে সজাগ থাকতে ও তাদের প্রতিহত করার আহ্বান জানানো হয়।
অন্যদিকে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বিবৃতিতে বলেন, জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের কথাবার্তা ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের গৌরব ও অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। পরিস্থিতির সুযোগে বেসামাল ও লাগামহীন আচরণ পরাজিত ফ্যাসিবাদী শক্তির পুনর্বাসনের রাস্তাই কেবল প্রশস্ত করবে। তাছাড়া পরিস্থিতির সুযোগে এসব বেসামাল লাগামহীন কথাবার্তা দেশে বিভাজন ও বিভক্তির রাজনীতিকে নতুন করে আরো উসকে দেবে। এ ধরনের বেফাঁস উসকানিমূলক মন্তব্য ও তৎপরতা থেকে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানান সাইফুল হক।
বিবৃতিতে তিনি আরো বলেন, এসব দায়িত্বহীন আচরণ হাজারো শহীদের রক্তের বিনিময়ে পাওয়া ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের গৌরব ও অর্জনকেও প্রশ্নবিদ্ধ করবে, যার দায়-দায়িত্ব পরোক্ষভাবে অন্তর্বর্তী সরকারের কাঁধেও এসে পড়তে পারে।
যা বলেছিলেন আমান আযমী :
গত মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতকে ‘স্বাধীনতার অস্তিত্বের পরিপন্থি’ আখ্যা দিয়ে তা পরিবর্তন এবং বাহাত্তরের সংবিধান ‘বৈধ নয়’ মন্তব্য করে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করার দাবি জানান জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আযমের ছেলে সাবেক সেনাকর্মকর্তা আব্দুল্লাহিল আমান আযমী। পাশাপাশি তিনি মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। এরপরই অযাচিত কিছু মহল থেকে জাতীয় সংগীত ও সংবিধান পরিবর্তনের দাবি তোলা হয়েছে বিভিন্ন মাধ্যমে, যা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে।
জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত ওই সংবাদ সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে আমান আযমী বলেন, ১৯০৫-এ বঙ্গভঙ্গ-রদ করার জন্য রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’। এই জাতীয় সংগীত দুই বাংলা এক করার জন্য জাতীয় সংগীত। আমরা কি দুই বাংলা এক হতে চাচ্ছি? আমরা কি স্বাধীন বাংলাদেশ রাখতে চাই, নাকি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের অঙ্গীভূত রাজ্য হতে চাই?
আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ চেয়েছি, স্বাধীন বাংলাদেশ থাকতে চাই। এই জাতীয় সংগীত আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশের অস্তিত্বের পরিপন্থি। আমি জোর দাবি জানাচ্ছি আমাদের নতুন জাতীয় সংগীত তৈরি করা হোক।
বাহাত্তরের সংবিধানকে ‘অবৈধ’ আখ্যা দিয়ে সাবেক এ সেনা কর্মকর্তা বলেন, ১৯৭০ সালে আওয়ামী লীগ জনগণের কাছ থেকে ম্যান্ডেড নিয়েছিল পাকিস্তানের সংবিধানের অধীনেই পাকিস্তান রাষ্ট্র গড়ে তোলার জন্য, স্বাধীন সংবিধান রচনা করে নয়। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান আমাদের ওপর যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছে, আমরা যুদ্ধ করে স্বাধীন হয়েছি, আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু তারা জনগণের কাছ থেকে নতুন সংবিধান প্রণয়ণের কোনো ম্যান্ডেড নেয়নি। সুতরাং এই সংবিধান আমার দৃষ্টিতে বৈধ নয়। নতুন করে একটা কমিটি করে নতুন সংবিধান তৈরি করা হোক, এটা বাতিল করা হোক।
মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের তথ্যকে ‘কাল্পনিক’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, শেখ মুজিব সাহেব ৩ লাখ বলতে গিয়ে ৩ মিলিয়ন বলেছেন এবং এটাই ৩০ লাখ হয়ে গেছে। কোনো জরিপ ছাড়া ৩০ লাখ শহীদ বলে বলে তারা মানুষের আবেগকে কাজে লাগিয়ে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। আমার জানামতে, এটা ২ লাখ ৮৬ হাজার। তারা ৩ লাখকে ৩০ লাখ বানিয়ে ফেলেছে।