শেখ হাসিনার সরকার পতনের এক মাস পূর্ণ
‘শহীদি মার্চ’ করবে ছাত্র আন্দোলন
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
শেখ হাসিনা
প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগ করার এক মাস পূর্ণ হয়েছে আজ বৃহস্পতিবার। সরকার পতনের এক দফা দাবিতে ছাত্র আন্দোলনের ডাকা অসহযোগের দ্বিতীয় দিন গত ৫ আগস্ট সোমবার প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন তিনি। পদত্যাগের পর দুপুরে একটি সামরিক হেলিকপ্টারে করে ছোট বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। ‘ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের এক পূর্ণ হওয়ার দিন বৃহস্পতিবার রাজধানীতে ‘শহীদি মার্চ’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
মূলত, কোটা সংস্কার আন্দোলন লাগাতারভাবে শুরু হয় গত ১ জুলাই। ১৪ জুলাই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনার এক বক্তব্যকে ঘিরে তার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে যায় শিক্ষার্থীরা। ওইদিন রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী বেরিয়ে এসে স্লোগান দেয়া শুরু করে, ‘তুমি কে, আমি কে, রাজাকার, রাজাকার; কে বলেছে, কে বলেছে, স্বৈরাচার, স্বৈরাচার।’ ১৭ জুলাই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা প্রথমে ৯ দফা দাবি জানিয়েছিলেন। আন্দোলনের একপর্যায়ে ২ আগস্ট ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ৯ দফা দাবিকে এক দফায় রূপান্তর করা হয়। বলা হয়, সরকারকে পদত্যাগ করতেই হবে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ছাড়ার আগের রাতে সেনাপ্রধান তার জেনারেলদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে বিক্ষুব্ধ জনতার ওপর সেনাদের তরফ থেকে গুলি না ছোড়ার সিদ্ধান্ত হয়। এই আলোচনা সম্পর্কে জানেন এমন দুজন সেনা কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এই তথ্য জানিয়েছেন। এই ঘটনার পর জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান শেখ হাসিনার কার্যালয়ে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করেন। রয়টার্স বলছে, বিক্ষোভে অন্তত ২৪১ জনের মৃত্যুর পর শেখ হাসিনাকে সমর্থন দেয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে।
এদিকে অনির্দিষ্ট কালের জন্য কারফিউ জারির পর ৫ আগস্ট সোমবার শেখ হাসিনা ছিলেন গণভবনে। একপর্যায়ে ঢাকার রাস্তায় বিক্ষোভকারীদের জনস্রোত নামে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় ৭৬ বছর বয়সি আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ওইদিন জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হবে। বিক্ষোভকারীদের শান্তির পথে ফিরে আসার আহ্বানও জানান তিনি।
এদিকে শেখ হাসিনার পদত্যাগ নিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির ওয়েবসাইটে ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ’ শিরোনামের ওই খবরে বলা হয়, সরকারবিরোধী বিক্ষোভে কয়েকশ মানুষ নিহত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। তাকে ও তার বোনকে সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে করে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এরপর ৮ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) রাতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে ১৭ সদস্যের অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়; আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া দুজন সমন্বয়কও স্থান পেয়েছেন ইউনূসের উপদেষ্টা পরিষদে।
ছাত্র আন্দোলনের ‘শহীদি মার্চ’ কর্মসূচি : ছাত্র আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতাচ্যুতির এক মাস পূর্ণ হওয়ার দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে আজ বৃহস্পতিবার ‘শহীদি মার্চ’ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। গতকাল বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) এক সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম।
সারজিস আলম বলেন, আজ বৃহস্পতিবার ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের এক মাস পূর্তি উপলক্ষে শহীদি মার্চ করতে চাই। সারাদেশে ইউনিয়ন থেকে মহানগর- সব পর্যায়ে শহীদদের স্মৃতি ধারণ করে, আহত ভাইবোন যারা হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছে, যে ভাইবোনেরা হাত-পা-চোখ হারিয়েছে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এ কর্মসূচি পালন করা হবে।
তিনি বলেন, আজ বিকেল ৩টায় ঢাকায় শহীদি মার্চ শুরু হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে থেকে। এরপর নীলক্ষেত, নিউমার্কেট, কলাবাগান, মিরপুর রোড ধরে মানিক মিয়া এভিনিউ ও সংসদ ভবনের সামনে দিয়ে ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ ও রাজু ভাস্কর্য হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে কর্মসূচি শেষ হবে।
সারজিস বলেন, দেশ সংস্কারে যারা বুলেটের সামনে বুক পেতে দিয়েছে তাদের এখনই স্মরণ করার সময়। আমরা চাইব, পুরো বাংলাদেশের ছাত্রজনতা নিজ নিজ অবস্থান থেকে এই শহীদি মার্চে অংশ নেবে। সারাদেশে গণজোয়ার নামবে।
কর্মসূচির বিস্তারিত তুলে ধরে সারজিস বলেন, শহীদি মার্চে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমাদের চাওয়া, দেশ নিয়ে প্রত্যাশা এবং কেমন রাজনীতি চাই- এসব বিষয় ব্যানার ফেস্টুনে তুলে ধরতে চাই। চিত্রকর্মের মাধ্যমেও অংশ নিতে পারেন। সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, আবু বাকের মজুদার প্রমুখ।