আংশিক কর্মবিরতি
ঢামেকের জরুরি বিভাগে রোগীর উপচে পড়া ভিড়
প্রকাশ: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
কাগজ প্রতিবেদক : বহির্বিভাগ বন্ধ থাকায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে গতকাল সোমবার সকাল থেকেই ছিল রোগীদের উপচে পড়া ভিড়, যা অন্য যে কোনো দিনের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। পুরাতন রোগীদের চিকিৎসাও দেয়া হয়েছে জরুরি বিভাগেই। এত রোগীর চিকিৎসা দিতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়েছে চিকিৎসকদের। দুপুর ১২টা পর্যন্ত এমন চিত্রই দেখা গেছে জরুরি বিভাগে।
ভাঙা পা নিয়ে মুন্সীগঞ্জ থেকে গতকাল ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন মালয়েশিয়া প্রবাসী জুয়েল। বহির্বিভাগে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও বিনা চিকিৎসায় ফিরতে হয়েছে তাকে। দুর্ভোগের কথা জানাতে গিয়ে জুয়েল বলেন, ৪ মাস আগে মালয়েশিয়ায় ৪ তলা ভবন থেকে পড়ে আমার পা ভাঙে। এরপর দেশে ফেরত পাঠানো হয় আমাকে। এর আগেও কয়েকবার ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নিয়েছি। আজ ফলোআপে এসেছিলাম। তবে বহির্বিভাগে এসে দেখি সব রুম বন্ধ। কোনো চিকিৎসক নেই। এরপর জানতে পারলাম তারা কর্মবিরতি পালন করছেন। এখন বাধ্য হয়েই বাড়ি চলে যেতে হচ্ছে। আল্লাহর পরেই চিকিৎসকদের ভরসা করে মানুষ। রোগীদের জিম্মি করে তারা আন্দোলন করবে, এমনটা আশা করি না।
রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর থেকে ৫ বছরের ইকরাকে নিয়ে এসেছিলেন দেলোয়ার হোসেন। ছোট্ট শিশুটিও চিকিৎসা না পেয়ে বাড়ি ফিরতে হয়েছে। দেলোয়ার হোসেন বলেন, মেয়েটা ব্যথায় ঘুমাতে পারছে না। তাই আজ হাসপাতালে নিয়ে এসেছিলাম। চিকিৎসকদের কর্মবিরতির কথা রবিবার শুনেছি। তবে রাতে স্বাস্থ্য উপদেষ্টার বক্তব্যে শুনলাম, কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছে। সেজন্য সকালে এসেছিলাম। হতাশ হয়ে এখন বাড়ি ফিরে যাচ্ছি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে কোমড় ব্যথার চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন সায়মা আক্তার (৩৮)। স্বামী ইসমাঈল হোসেন জানান, গত এক বছর ধরে কোমড়ের ব্যথায় ভুগছেন তার স্ত্রী। তিনি বলেন, হাসপাতালের আউটডোর বন্ধের কথা আমরা জানতাম না। সকালে এসে দেখি আউটডোর বন্ধ। বাধ্য হয়ে জরুরি বিভাগে টিকেটের জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছি।
জরুরি বিভাগের টিকেট কাউন্টারের ইনচার্জ মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৫১২ জন টিকেট নিয়েছেন। যা গত দিনের তুলনায় ৩ গুণ। এ পর্যন্ত ভর্তি হয়েছেন অর্ধশত রোগী। যা আগে কখনো হয়নি। জরুরি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. কিশোর জানান, বহির্বিভাগ বন্ধ থাকায় জরুরি বিভাগে রোগীর চাপ বেড়েছে। রোগীদের চিকিৎসা দিতে কর্তব্যরত চিকিৎসকদের হিমশিম খেতে হয়েছে।
এদিকে ঢামেকের বহির্বিভাগ বন্ধ থাকলেও রাজধানীর বেশ কয়েকটি হাসপাতালের বহির্বিভাগ খোলা দেখা গেছে। সকাল ৯টার দিকে আগারগাঁওয়ের ২৫০ শয্যার টিবি হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, বহির্বিভাগ খোলা। রোগীদের টিকেট দেয়া হচ্ছে, ডাক্তাররা রোগী দেখছেন। শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত রোগী দেখা বন্ধ রেখেছিলেন চিকিৎসকরা। পরে হাসপাতালের পরিচালকের সঙ্গে বৈঠকের পর সকাল ১০টা থেকে রোগী দেখা শুরু করেন বহির্বিভাগের চিকিৎসকরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর) বা পঙ্গু হাসপাতাল, জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, মুগদা জেনারেল হাসপাতালেও গতকাল বহির্বিভাগ চালু ছিল।
হামলার ঘটনায় দুজন আটক : ঢামেক চিকিৎসকদের ওপর হামলার ঘটনায় গতকাল গাইবান্ধা শহরের বাস টার্মিনাল এলাকা থেকে সঞ্জয় পাল জয় নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর আগে রবিবার শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে চিকিৎসকদের ওপর হামলাকারীদের একজনকে আটক করে সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেয়া হয়।
বহির্বিভাগ ৩ ঘণ্টা খোলা রাখার ঘোষণা : চিকিৎসকদের ওপর হামলার ঘটনায় দেশের সব সরকারি হাসপাতালের বহির্বিভাগ ৩ ঘণ্টা খোলা রেখে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ঢামেক হাসপাতালের চিকিৎসকরা। ঢামেকের নিউরো সার্জারি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক ডা. মো. আবদুল আহাদ গতকাল বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন। ডা. আহাদ বলেন, সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত বহির্বিভাগ খোলা থাকবে। বাকি সময় চিকিৎসকরা কর্মবিরতি পালন করবেন। হাসপাতালে অন্যান্য চিকিৎসাসেবা যথারীতি চলবে।
কর্মসূচি শিথিলের আগে হাসপাতালের পরিচালক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে বৈঠক করেন চিকিৎসকরা। এরপর বিকাল ৪টার দিকে আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। ডা. আহাদ জানান, ঢামেকে হামলার ঘটনায় একজন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকদের ওপর হামলাকারীদের মধ্যে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রতিশ্রæতি অনুযায়ী ঢামেক, মুগদা জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। এজন্য কর্মসূচি শিথিল করেছেন তারা। তিনি বলেন, যারা এখনো গ্রেপ্তার হয়নি তাদের অতি দ্রুত গ্রেপ্তার করে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন এবং চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তার জন্য স্বাস্থ্য পুলিশ নিয়োগের খসড়া করার দাবি জানানো হয়েছে চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে।
প্রসঙ্গত, রোগী মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত শনিবার ঢামেক হাসপাতালের চিকিৎসকদের ওপর তিনবার হামলা চালানো হয়। এ ঘটনার পর শনিবার রাতেই কর্মস্থলে হামলা ও মারধরের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। পরে রবিবার দুপুরে তারা কর্মবিরতির ঘোষণা দেন। এই কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন চিকিৎসকরাও। বিকালে আন্দোলনরত চিকিৎসকদের সঙ্গে হাসপাতাল পরিচালকের কক্ষে বৈঠক করেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূর জাহান বেগম। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়কও সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে চিকিৎসকদের ওপর হামলাকারীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার এবং দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিলে সোমবার রাত ৮টা পর্যন্ত কর্মবিরতি স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছিলেন আন্দোলনরত চিকিৎসকরা।