বাজেট কাটছাঁটের আভাস, কালো টাকার সুযোগ বন্ধ
প্রকাশ: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
কাগজ প্রতিবেদক : চলতি অর্থবছরের বাজেট কাটছাঁট হতে পারে বলে আভাস দিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, চলতি মাসে বা আগামী মাসে বাজেট রিভাইজ করা হতে পারে। কালো টাকা সাদা করার সুযোগ আমরা বন্ধ করে দিয়েছি। পরিকল্পনা উপদেষ্টা এডিপি সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় সব কাজ করবেন। আমরা অহেতুক সব খরচ বন্ধ করে যুক্তিসঙ্গত করব। বাজেটে বড় বড় উন্নয়ন খাতের প্রকল্পগুলোর বিষয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে সিদ্ধান্ত হবে বলেও জানান তিনি। গতকাল সোমবার সচিবালয়ে ইপিবির প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের পরে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। বৈঠকে বাণিজ্য সচিব মো. সেলিম উদ্দিন, ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ড. সালেহউদ্দিন বলেন, জিডিপির বাস্তব সংখ্যা কত বা এর বৃদ্ধিতে পরিসংখ্যান জানার কাজ চলছে। খুব শিগগিরই প্রকাশ করা হবে চলতি বছরের রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা। এছাড়া বাজারে ৫, ১০ ও ২০ টাকার কাগজের নোটের অবস্থা খুব নাজুক। এটা দ্রুত পরিবর্তনের ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এ উপদেষ্টা।
ড. সালেহউদ্দিন বলেন, কালো টাকা সাদা করার সুযোগ আমরা বন্ধ করে দিয়েছি। চলতি বা আগামী মাসে বাজেট রিভাইজড করা হতে পারে। বাজেটে বড় বড় উন্নয়ন খাতের প্রকল্পগুলোর বিষয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে সিদ্ধান্ত হবে। তিনি বলেন, রপ্তানি আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণের একটি প্রজেকশনও তৈরি করতেও ইপিবিকে বলা হয়েছে। রপ্তানি তথ্যসহ বিস্তৃত বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। আগে রপ্তানির তথ্য কিছু অমিল ছিল। আমি তাদের (ইপিবি) শেষ পর্যন্ত রপ্তানির তথ্য সমন্বয় করতে বলেছি। যত দ্রুত সম্ভব তা করা হবে। একটি প্রজেকশনও তৈরি করতে বলেছি- আমাদের রপ্তানি সামনে কত হবে।
শেষ অর্থবছরে ইপিবি তাদের রপ্তানির তথ্য প্রকাশ করেনি, সেটি কবে করা হবে এমন প্রশ্নে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, শিগগির ইপিবির বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে সব বিষয় চূড়ান্ত করা হবে। ইপিবি কর্মকর্তারা রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা চূড়ান্তকরণ এবং তথ্য সমন্বয়ে কাজ করছেন এবং বোর্ড সভায় সমস্ত বিষয় অনুমোদনের সম্ভাবনা রয়েছে। জিডিপির তথ্যেও কোনো পরিবর্তন আসতে পারে কিনা এমন বিষয়ে তিনি বলেন, আমি ওটা দেখছি। এটা আমাদের উৎপাদনকে কেন্দ্র করে করা হয়, অনেক খাত জড়িত। প্রায় ১৯টি খাত। এটা আপনারা জানতে পারবেন।
ছেঁড়া এবং জরাজীর্ণ মুদ্রা এবং ব্যাংক নোট বিষয়ে তিনি বলেন, এটি প্রায়শই ঘটে কারণ দেশবাসী তাদের নোটগুলোকে ভুলভাবে পরিচালনা করে। এখানে রাখে, ওখানে রাখে। কিন্তু বিশ্বের অনেক দেশে এমন অব্যবস্থাপনা নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে বিষয়টি উত্থাপন করবো, তবে নতুন নোটগুলো না থাকলে, এখনই পুরনো মুদ্রা এবং ব্যাংক নোটগুলো প্রতিস্থাপন করা যাবে না। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সম্প্রতি উপদেষ্টা পরিষদ কালো টাকা সাদা করার বিধান বাতিল করায় বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিকভাবে কাজ করছে।
কালো টাকা সাদা করার সুবিধা বাতিল : ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুবিধা বাতিল করেছে সরকার। এ বিধান বাতিল হওয়ায় কালো টাকা সাদা করতে হলে এখন প্রযোজ্য কর, যা সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ সেটি দিতে হবে এবং ওই প্রদেয় করের ওপর ১০ শতাংশ জরিমানা দিতে হবে। গতকার এনবিআর এ সংক্রান্ত একটি সংবিধিবদ্ধ নিয়ন্ত্রক আদেশ (এসআরও) জারি করেছে। এনবিআর সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়।
সূত্র জানায়, এ আদেশের ফলে শেয়ার মার্কেট, নগদ, ব্যাংকে থাকা অর্থ, ফাইন্যান্সিয়াল স্কিম অ্যান্ড ইন্সট্রæমেন্ট সহ সব ধরনের আমানতের ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা বৈধ করার সুবিধা বাতিল হল। এসব ক্ষেত্রে কালো টাকা সাদা করতে হলে এখন প্রযোজ্য কর, যা সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ সেটি দিতে হবে এবং ওই প্রদেয় করের ওপর ১০ শতাংশ জরিমানা দিতে হবে। এছাড়া, ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুবিধা বাতিল হলেও ফ্ল্যাট, বাড়ি ও জমির কেনার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট পরিমাণ কর দিয়ে টাকা সাদা করার বিদ্যমান সুবিধা বাতিল হয়নি।
প্রসঙ্গত, জুলাই মাসে অনুমোদিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে সম্প্রতি ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা বৈধ করার নিয়ম রাখে। তৎকালীন সরকারের এ সিদ্ধান্ত তখন তীব্র সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছিল। কারণ বৈধ করদাতাদেরকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত আয়করের পাশাপাশি অতিরিক্ত সারচার্জ দিতে হয়। সমালোচকরা বলেছিলেন, ১৫ শতাংশ করের মাধ্যমে কালো টাকা সাদা করার অনুমতি আর্থিক খাতের অনিয়মকে আরো বাড়িয়ে তুলতে পারে।
২০২০-২১ অর্থবছরের জন্যও তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার ১০ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা বৈধকরণের সুযোগ দিয়েছিল। এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে মোট ১১ হাজার ৮৩৯ জন প্রায় ২০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বৈধ করেছিলেন, যা এক বছরে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এনবিআর ওইসব বিনিয়োগ থেকে দুই হাজার ৬৪ কোটি টাকা রাজস্ব পেয়েছিল।
দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে কালো টাকা সাদা করার বিতর্কিত পদ্ধতিটি বাদ দেয়ার উপায় খুঁজছিল অন্তর্বর্তী সরকার। নতুন সরকার গঠনের পর গত ২৮ আগস্ট রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় কালো টাকা সাদা করার বিধান বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়।
এর আগে ২৭ আগস্ট রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবিআর সদর দপ্তরে অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে বৈঠকে এনবিআর কর্মকর্তারা কালো টাকা সাদা করার সুবিধা বাতিলের সুপারিশ করেন।