শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরো ৫ হত্যা মামলা
প্রকাশ: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
কাগজ প্রতিবেদক : সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে হত্যা মামলার সংখ্যা ইতোমধ্যেই শতক ছাড়িয়েছে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের জেরে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এরপর রাজধানীতে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম হত্যা মামলা হয় ১৩ আগস্ট। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৩০ আগস্ট পর্যন্ত ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় হত্যা ও সহিংসতার ঘটনায় ২৫১টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে শতাধিক হত্যা মামলা হয়েছে। এছাড়া ১৪-২৯ আগস্ট পর্যন্ত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়েছে ৮টি। গতকাল সোমবারও পাঁচজনের মৃত্যুর অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আলাদা-আলাদা আরো ৫টি হত্যা মামলা হয়েছে। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ভুক্তভোগী পরিবার ও স্বজনরা মামলাগুলো করেন।
শরীফ হত্যা মামলা : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর যাত্রাবাড়ী থানার সামনে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে সাইফ আরাফাত শরীফকে হত্যার অভিযোগে তার মা মোসা. মরিয়ম ৯৪ জনকে আসামি করে মামলাটি করেন। উল্লেখযোগ্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন- শামীম ওসমান ও নজরুল ইসলাম বাবু। মামলায় অভিযোগে বলা হয়, ১৪ আগস্ট ভোরে যাত্রাবাড়ী থানার সামনে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালনকালে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ সমন্বয়ক সেজে শরীফকে পিটিয়ে এবং কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
ইয়াসিন হত্যা মামলা : একই জায়গায় সাইদুল ইসলাম ইয়াসিনের মৃত্যুর ঘটনায় শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ ১৩ জনকে আসামি করে মামলা করেন তার মা শিল্পী আক্তার।
ওবায়দুল হত্যা মামলা : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গুলিতে ওবায়দুল ইসলাম নিহতের ঘটনায় শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ ৫৮ জনকে আসামি করে মামলা করেন তার আত্মীয় মো. আলী। উল্লেখযোগ্য অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন- আসাদুজ্জামান খান কামাল, হাছান মাহমুদ, রমেশ চন্দ্র সেন, দ্রুপদি আগরওয়ালা ও হারুন-অর-রশীদ। মামলায় অভিযোগ করা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গত ৪ আগস্ট বিকাল ৫টার দিকে যাত্রাবাড়ীর কাজলা পেট্রোল পাম্পের সামনে আওয়ামী লীগের নেতারাসহ ১৪ দলের নেতাকর্মীরা অবৈধ অস্ত্র দিয়ে নির্বিচারে হাজার হাজার জনতার ওপর গুলি চালায়। এতে ওবায়দুল ইসলাম গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।
রাসেল হত্যা মামলা : ৫ আগস্ট সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কাজলা ফুটওভার ব্রিজের কাছে গুলিতে রাসেল মারা যান। এ ঘটনায় তার ভাই রুবেল শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ ৩৬ জনকে আসামি করে মামলা করেন। এ মামলায় উল্লেখযোগ্য অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন- আসাদুজ্জামান খান কামাল, মশিউর রহমান মোল্লা সজল। চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন ও হারুন-অর-রশীদ। নিহতদের পরিবারের স্বজনরা এই চারটি মামলাই ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাদ্দাম হোসেনের আদালতে দায়ের করেন। আদালত যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশকে অভিযোগগুলো এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।
ধানমন্ডিতে শুভ হত্যা : গত ১৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়ে ধানমন্ডি থানার ৩ নম্বর সড়কের মুখে মূল রাস্তার ওপরে শুভ গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। এই ঘটনায় ভুক্তভোগীর মা রেনু শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ ১৩৮ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বেগম ফারাহ দিবা ছন্দার আদালতে ভুক্তভোগীর মা রেনু মামলাটি করেন। আদালত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। এ মামলায় উল্লেখযোগ্য অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন- আসাদুজ্জামান খান কামাল, আব্দুল্লাহ আল মামুন, হারুন-অর-রশীদ, মাইনুল হোসেন খান ও ডা. সামন্ত লাল সেনসহ প্রমুখ।
এইচএসসি পরীক্ষার্থী হত্যাচেষ্টা মামলা : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় অক্সফোর্ডিয়াং ল্যাবরেটরি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী আসফিক ইবনে আরমান ইসাকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ৩৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আফনান সুমির আদালতে ইসার বাবা আবুযর মো. আরমান আলী জুয়েল মামলাটি করেন। আদালত মামলাটি পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন। এ মামলায় অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন- ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবের হোসেন চৌধুরী, চোধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, হাবিবুর রহমান, হারুন-অর-রশিদ, বিপ্লব কুমার সরকার। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গত ১৯ জুলাই রামপুরা থানার বনশ্রী এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন ইসা।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা হত্যা মামলাগুলোর তথ্য বিশ্লেষণ ও আদালত সূত্রে জানা যায়, দেশের বিভিন্ন থানায় করা হত্যা মামলাগুলোর মধ্যে ১৩ আগস্ট ১টি, ১৪ আগস্ট ১টি, ১৫ আগস্ট ৩টি, ১৬ আগস্ট ২টি, ১৭ আগস্ট ৩টি, ১৮ আগস্ট ৮টি, ১৯ আগস্ট ৪টি, ২০ আগস্ট ১০টি, ২১ আগস্ট ১০টি, ২২ আগস্ট ১০টি, ২৩ আগস্ট ১৪টি, ২৫ আগস্ট বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় দুটি ছাড়াও ১০টি, ২৬ আগস্ট ১টি, ২৭ আগস্ট ৪টি, ২৮ আগস্ট ৪টি, ২৯ আগস্ট ৬টি, ৩০ আগস্ট ২ মামলা ও ২ সেপ্টম্বর ৫টি মামলা করা হয়েছে। এছাড়া অপহরণ করে গুমের অভিযোগেও ১টি মামলা হয় তার বিরুদ্ধে।