জিম্মিদের মুক্তির জন্য চুক্তি দাবি বিক্ষোভে উত্তাল ইসরায়েল
প্রকাশ: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
কাগজ ডেস্ক : ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার একটি সুড়ঙ্গ থেকে ৬ জিম্মির মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় ইসরায়েলজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। দেশটির প্রধান ট্রেড ইউনিয়ন হিসতাদ্রুতের ডাকে গতকাল সোমবার সারাদেশে সাধারণ ধর্মঘট পালিত হয়েছে। ধর্মঘটের কারণে ইসরায়েলজুড়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, স্কুল এবং যান চলাচল বন্ধ থাকে।
গাজায় জিম্মি ইসরায়েলিদের পরিবারের সদস্যরা জিম্মি মুক্তির জন্য সরকারের কাছে একটি চুক্তি করার দাবি জানিয়ে এই ধর্মঘটে নামে। আজ মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকাল পর্যন্ত ধর্মঘট চলার কথা থাকলেও তা কমিয়ে সোমবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত করা হয়। ধর্মঘটে অংশ নেয় ইসরায়েলের বৃহত্তম বেসরকারি খাতের কোম্পানির শত শত শ্রমিকদের প্রতিনিধিত্বকারী। এছাড়া ইসরায়েল বিজনেস ফোরাম, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, বেশ কিছু সরকারি মন্ত্রণালয় ও ৩টি বাস কোম্পানি- এগড, ড্যান ও মেট্রোপোলিন ধর্মঘটে অংশ নেয়। বিক্ষোভকারীরা শহরের বেশ কয়েকটি রাস্তা অবরোধ করায় ইসরায়েলের প্রধান এয়ার ট্রানজিট হাব বেন গুরিওন বিমানবন্দরের কিছু ফ্লাইট ব্যাহত হয়।
এর আগে রবিবার ইসরায়েলের রাজধানী তেল আবিব, জেরুজালেম ও অন্যান্য শহরের প্রায় ৫ লাখ মানুষ বিক্ষোভে অংশ নেয়। বিক্ষোভকারীরা তেল আবিবে একটি মহাসড়ক অবরোধ করে। পশ্চিম জেরুজালেমে রাস্তা অবরোধ করে এবং প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের বাইরে বিক্ষোভ করে। এ সময় তাদের বাধা দেয় কর্তৃপক্ষ। পুলিশ এক বিবৃতিতে বলেছে, বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে তারা বাধ্য হয়েছেন।
৬টি প্রতীকী কফিনে ইসরায়েলি পতাকা জড়িয়ে মিছিল করে বিক্ষোভকারীরা। এ সময় তাদের হাতে ছিল নিহতদের ছবি। জলকামান উপেক্ষা করে পুলিশের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে বিক্ষোভকারীদের একটি অংশ। মহাসড়কের সামনে গাড়ির চাকা পুড়িয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। বিক্ষোভকারীদের মধ্য থেকে ২৯ জনকে আটক করে পুলিশ। বিক্ষোভকারীরা ‘এখন! এখন!’ বলে স্লোগান দেয় এবং ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতির চুক্তি করে বাকি জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার দাবি ওঠে।
গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। সে সময় ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়। এর মধ্যে ৬ জনের মরদেহ গত শনিবার দক্ষিণ গাজার রাফা এলাকায় একটি সুড়ঙ্গ থেকে উদ্ধার করে ইসরায়েলি সেনারা। তারা হলেন- কারমেল গাত, ইডেন ইয়েরুশালমি, আলমগ সারুসি, ওরি দানিনো, ইসরায়েলি-মার্কিন নাগরিক হের্শ গোল্ডবার্গ-পলিন ও রুশ-ইসরায়েলি আলেকজান্ডার লোবানভ।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হ্যাগার বলেছেন, প্রাথমিক মূল্যায়ন অনুযায়ী, আমরা সেখানে পৌঁছানোর অল্প সময় আগে হামাসের সদস্যরা তাদের নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেছে।
কাতারে অবস্থানরত হামাসের কর্মকর্তা ইজ্জাত আল-রিশক বলেন, ইসরায়েলি বোমার আঘাতে ওই জিম্মিরা নিহত হয়েছেন।
তবে এ দাবি নাকচ করে দিয়েছে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী। ইসরায়েলি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শিরা সলোমন জানান, খুব কাছ থেকে গুলি করে ৬ জিম্মিকে হত্যা করা হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, গাজায় হামাসের হাতে এখনো ৯৭ জন জিম্মি আছে। মৃত্যু হয়েছে ৩৩ জনের। গত বছরের নভেম্বরে এক সপ্তাহের যুদ্ধবিরতির মধ্যে বেশ কয়েকজন জিম্মিকে মুক্তি দেয়া হয়েছিল। তবে জিম্মিদের স্বজনদের বিশ্বাস, এখনো যারা জিম্মি আছেন, তাদের মুক্ত করতে ইসরায়েল সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।
জিম্মি ও নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবারের সংগঠন দ্য হোস্টেজেস অ্যান্ড মিসিং ফ্যামিলিস ফোরাম জানিয়েছে, আমরা আর দেরি, কারসাজি ও অজুহাত চাই না। যদি মাসের পর মাস যুদ্ধবিরতি আলোচনা না চলত, যদি এতদিন চুক্তি হয়ে যেত, তাহলে হয়তো এই ৬ জিম্মি এখনো বেঁচে থাকত।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, তিনি জিম্মিদের মুক্ত করার জন্য চুক্তি করতে এবং দেশের নিরাপত্তার সুরক্ষা দিতে প্রতিশ্রæতিবদ্ধ। তবে জিম্মিদের যারা হত্যা করছে তারা চুক্তি চায় না।
একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে জিম্মিদের পরিবার ইসরায়েলজুড়ে সাধারণ বিক্ষোভের ডাক দেয়। এর পরপরই ইসরায়েলের ৮ লাখ সদস্যের শ্রমিক সংগঠন হিসতাদ্রুত সোমবার সর্বাত্মক ধর্মঘট ঘোষণা করে। হিসতাদ্রুতের চেয়ারম্যান আর্নন বার-ডেভিড এক বিবৃতিতে বলেন, আমরা একটি চুক্তির পরিবর্তে বডি ব্যাগ পাচ্ছি। শুধু আমাদের হস্তক্ষেপই তাদের (সরকার) নাড়া দিতে পারে। জিম্মি মুক্তিতে রাজনৈতিক কারণে একটি চুক্তির অগ্রগতি হচ্ছে না। এটা অগ্রহণযোগ্য। তিনি সোমবার স্থানীয় সময় সকাল ৬টা থেকে এক দিনের শ্রমিক ধর্মঘটের আহ্বান জানান।
ইসরায়েলের সবাইকে সাধারণ ধর্মঘট সফল করার আহ্বান জানান হিসতাদ্রুতের আন্তর্জাতিক বিভাগের প্রধান পিটার লার্নার। তিনি বলেন, আমাদের সমাজে বিভাজন নয়, ঐক্যের প্রয়োজন। ইসরায়েলের জনগণ এবং ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত লোকদের নিরাপত্তা ও নিরাপত্তা পুনরুদ্ধারের প্রয়োজনীয়তার জন্য সাধারণ ধর্মঘটের প্রয়োজন ছিল।
এদিকে শ্রমিকরা যেন বিক্ষোভে অংশ না নেন সেজন্য হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ। তিনি বলেছেন, যারা শ্রমিক ধর্মঘটে অংশ নেবেন তাদের বেতন দেয়া হবে না।