অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে বুধবার থেকে যৌথ অভিযান শুরু
প্রকাশ: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
কাগজ প্রতিবেদক : অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে আগামী বুধবার থেকে সারাদেশে যৌথ অভিযান পরিচালনার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর বরাতে গতকাল রবিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
পুলিশের একাধিক সূত্র বলেছে, সরকারের পটপরিবর্তনের পর দেশের বিভিন্ন থানা থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গুলি লুট হয়েছে। এসব অস্ত্র-গুলি জমা দিতে সরকার সময়সীমা বেঁধে দিলেও কাক্সিক্ষত সাড়া মিলেনি। এ অবস্থায় অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ অভিযান শুরু হবে। অভিযানে সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, কোস্ট গার্ড ও আনসার সদস্যরা অংশ নেবে। অস্ত্র উদ্ধারে সন্তেÍাষজনক সুফল না আসা পর্যন্ত ঢাকাসহ সারাদেশে একযোগে অভিযান চলবে। কী পরিমাণ অস্ত্র-গুলি লুট হয়েছে তার সঠিক পরিসংখ্যান নিশ্চিত হওয়া যায়নি। পুলিশ হেড কোয়ার্টার্স বলেছে, লুন্ঠিত অস্ত্র ও গোলাবারুদ থেকে গতকাল পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের ৩৮৮০টি অস্ত্র, ২৮৬৩৫৩ রাউন্ড গুলি, ২২২০১টি টিয়ার গ্যাস শেল ও ২১৩৯টি সাউন্ড গ্রেনেড উদ্ধার হয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, ছাত্র আন্দোলনের ভেতরে ঢুকে দুর্বৃত্তরা লুটপাট চালিয়েছে। গোয়েন্দা তথ্য ও বিভিন্নভাবে প্রাপ্ত তথ্যে অনেকের ব্যাপারে খবর পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তাদের চিহ্নিত করার কাজ চলছে। এ অবস্থায় বুধবার থেকে সারাদেশে অভিযান শুরু হবে। এরই মধ্যে সব থানায় ফিরতে শুরু করেছে পুলিশ। অস্ত্র ও পরিবহন সংকটের কারণে পুরোদমে তারা স্বাভাবিক কাজে ফিরতে না পারলেও যৌথ অভিযান হবে সমন্বিত চেষ্টা। অভিযানের ব্যাপারে পুলিশ হেড কোয়ার্টার্স থেকে মাঠ পুলিশকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে দেয়া সব আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স স্থগিত করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। একই সঙ্গে স্থগিত হওয়া লাইসেন্সের গোলাবারুদসহ আগ্নেয়াস্ত্র আগামী ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট থানায় জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। গত ২৫ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বিগত ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য দেয়া সব আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স (কর্মরত সামরিক-অসামরিক কর্মকর্তা ছাড়া) স্থগিত করা হলো। তাদের আগামী ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে গোলাবারুদসহ আগ্নেয়াস্ত্র সংশ্লিষ্ট থানায় জমা দেয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো। ‘দ্য আর্মস অ্যাক্ট, ১৮৭৮’ এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা ‘আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স প্রদান, নবায়ন ও ব্যবহার নীতিমালা, ২০১৬’ অনুযায়ী জেলা ম্যাজিস্ট্রেট প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বলেও প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির দিনে গত ?৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। তার পদত্যাগের খবরে দেশের বিভিন্ন থানায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এসব ঘটনার সময় থানায় সংরক্ষিত বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুট করে নিয়ে যায় আক্রমণকারীরা। এরপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে উদ্ধার করা হয় কিছু অস্ত্র ও গোলাবারুদ। তবে সে সংখ্যাটা খুবই নগণ্য। আরো বহু অস্ত্র দুর্বৃত্তদের কাছে রয়ে গেছে। সেসব অস্ত্র এবং আগে থেকে অনেকের কাছে থাকা অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে যৌথ অভিযান পরিচালনা করবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে লুট হওয়া অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার কার্যক্রমসহ নিয়মিত টহল ও নজরদারি অব্যাহত রাখা হবে বলে এরই মধ্যে একাধিকবার জানায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।