গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদে যুক্ত হলো বাংলাদেশ
চুক্তিতে সই করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস, বিশ্বের ৭৫টি দেশ এই সনদে যুক্ত
প্রকাশ: ৩০ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
কাগজ প্রতিবেদক : গুম থেকে নাগরিকদের সুরক্ষাবিষয়ক আন্তর্জাতিক কনভেনশনে গতকাল বৃহস্পতিবার সই করেছে বাংলাদেশ। গতকাল বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের সাপ্তাহিক সভায় জাতিসংঘের ওই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, প্রতি বছর ৩০ আগস্ট জোরপূর্বক গুমের শিকার ব্যক্তিদের জন্য আন্তর্জাতিক দিবস পালন করা হয়ে থাকে। এ বছর দিবসটির একদিন আগে গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ এতে সই করে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এই মুহূর্তকে ‘ঐতিহাসিক’ বলে আখ্যায়িত করেন। ড. মুহাম্মদ ইউনূস সই করার সময় উপদেষ্টামণ্ডলী সদস্যরা হাততালি দিয়ে সমর্থন জানান। এর আগে, শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে নিরাপত্তা বাহিনীর মাধ্যমে গুম হওয়া প্রতিটি ঘটনা তদন্তে উদ্যোগ নেয় সরকার। এই সপ্তাহের শুরুতে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিশনও গঠন করা হয়। কমিশনে আরো রয়েছেন- অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ফরিদ আহমেদ শিবলী, মানবাধিকার কর্মী নূর খান, সাজ্জাদ হোসেন ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নাবিলা ইদ্রিস। কমিটিকে আগামী ৪৫ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গুমের হাত থেকে রেহাই পেতে ২০০৬ সালের ডিসেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে এই সনদটি গৃহীত হয়। ৩২টি দেশ এটি অনুস্বাক্ষর করে। ২০১০ সালে শুরু হয় বাস্তবায়ন। এখন পর্যন্ত বিশ্বের ৭৫টি দেশ এই সনদে যুক্ত হয়েছে।
বৈঠক শেষে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার সামনে সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য তুলে ধরেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু এবং পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। এ সময় যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া উপস্থিত ছিলেন। সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, এটি আমাদের জন্য বিশেষ করে মানবাধিকার কর্মীদের জন্য একটি বড় মাইলফলক। ৭০০ জনের ওপরে মানুষ এখন পর্যন্ত গুমের কারণে নিখোঁজ হয়ে আছেন। আর যেন কেউ কখনো নিজের ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে কোনো বাহিনীকে দিয়ে কোনো পদ্ধতির মাধ্যমে নাগরিকদের গুম করতে না পারে, এ জন্য এই সনদে স্বাক্ষর করা হয়েছে। এ বিষয়ে এখন প্রয়োজনীয় আইনি সংস্কার গ্রহণ করা হবে।
এদিকে, উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের অগ্রাধিকারমূলক বিষয়গুলোর অন্যতম হলো, প্রত্যেক নাগরিকের মানবাধিকার নিশ্চিত করা এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার করা। এই লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ‘ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন ফর দি প্রটেকশন অব অল পারসন্স ফ্রম এনফোর্স ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স (আইসিপিপিইডি)’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক কনভেনশনে বাংলাদেশের পক্ষভুক্ত হওয়ার বিষয়ে কার্যক্রম গ্রহণের জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই আইসিপিপিইডি হচ্ছে জাতিসংঘের আওতাধীন একমাত্র আন্তর্জাতিক কনভেনশন- যা এনফোর্স ডিসঅ্যাপিয়ারেন্সকে কেন্দ্র করে গৃহীত হয়েছে, যার লক্ষ্য হলো জোরপূর্বক অন্তর্ধান বা গুম প্রতিরোধ করা, ভুক্তভোগীদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা। এ ছাড়া গুরুতর এই মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বাড়ানো। সামগ্রিকভাবে এই সনদের লক্ষ্য গুম বন্ধের পাশাপাশি এই অপরাধের জন্য দায়মুক্তি বন্ধ করা, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সহায়তা দেয়া। প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে গুম নিয়ে গত কয়েক বছর ধরেই আলোচনা হচ্ছে। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর ‘আয়নাঘর’ নামে পরিচিত গুমঘর থেকে বেশ কয়েকজন মুক্তিও পেয়েছেন।
যমুনায় বোতলজাত পানির জায়গায় এলো জগ আর মগ : রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বোতলজাত পানির জায়গায় এখন ব্যবহার হচ্ছে জগ আর মগ। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম বিষয়টি জানিয়েছেন। এদিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেয়া এক পোস্টে শফিকুল আলম বলেছেন, রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় কয়দিন আগেও সর্বত্র ছিল বোতলজাত পানির ব্যবহার। প্রত্যেক ডাইনিং টেবিলে দেখা যেত হাফ লিটার পানির বোতল। অতিথিরাও খেতেন সেই পানি। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর গত কয়েক সপ্তাহে সেই চিত্র একেবারেই বদলে গেছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কার্যালয়ের কোথাও এখন আর বোতলজাত পানির ব্যবহার নেই। সেই জায়গায় এসেছে জগ আর মগ।
শফিকুল আলম জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের সাপ্তাহিক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং সেই সভাতেও টেবিলে ছিল পানির কাচের জগ আর গøাস। উদ্যোগটি নিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। উপদেষ্টা পরিষদের অন্য সদস্যদেরও প্লাস্টিকের বোতল ব্যবহার না করতে অনুরোধ করেছেন তিনি। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ইউনূস বিষয়টির অনুমোদন দিয়েছেন। এর ফলে, যমুনা কার্যকরভাবে প্লাস্টিক বোতলমুক্ত অঞ্চলে পরিণত হয়েছে।