×

প্রথম পাতা

পাহাড়ি ঢল-ভারি বর্ষণ

দশ জেলায় আকস্মিক বন্যা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

দশ জেলায় আকস্মিক বন্যা

ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারি বর্ষণে উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে আবার বন্যা দেখা দিয়েছে। এসব অঞ্চলের ৭টি নদনদীর পানি বইছে বিপৎসীমার উপর দিয়ে। আকস্মিক ও দ্রুত পানি বাড়ায় হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, সিলেট, ফেনী, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নোয়াখালীসহ কয়েকটি জেলার শহর ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। আখাউড়া স্থলবন্দর পানিতে ডুবে যাওয়ায় কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়েছে। খাগড়াছড়ির মাইনি ও কাচালং নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় ডুবে গেছে খাগড়াছড়ি-সাজেক সড়কের একাধিক অংশ।

পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন এসব এলাকার কয়েক লাখ মানুষ। অনেকেই ছুটছেন নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে। বন্যাকবলিত মানুষকে উদ্ধার ও নিরাপদ আশ্রয়ে নিতে কাজ করছে সেনাবাহিনী। তবে এখনো ত্রাণ বিতরণ করা হয়নি বন্যাকবলিতদের মাঝে। অবশ্য তারা এই মুহূর্তে ত্রাণ নয়, উদ্ধার ও নিরাপদ আশ্রয় চাইছেন। মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে। উজানের ঢলে জুলাইয়ের শুরুতেও দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বন্যা দেখা দিয়েছিল। এর ফলে প্লাবিত হয় অনেক গ্রাম।

বন্যা পরিস্থিতি আরো একদিন পর উন্নতির দিকে যেতে পারে বলে আভাস দিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান বলেছেন, মৌসুমি লঘুচাপের কারণে ত্রিপুরা এবং বাংলাদেশের সীমান্তে বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর ফলে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতি আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত একই থাকবে।

তারপর থেকে কমে যেতে পারে। মোটামুটি তিন দিনের মধ্যে অনেক জায়গাতেই বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসতে পারে। কেন্দ্রের নিয়মিত বুলেটিনে বলা হয়, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদীগুলোর পানি বাড়ছে। তিনি আরো জানান, বর্তমানে সাতটি নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে বইছে।

সুনামগঞ্জের মারকুলিতে কুশিয়ারার পানি বিপৎসীমার ৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে, মৌলভীবাজারের রেল ব্রিজে মনু নদীর পানি বিপৎসীমার ৯৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে ও মৌলভীবাজারে ৬৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে, ধলাই নদীর পানি মৌলভীবাজারে ৪৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে, হবিগঞ্জের বান্নায় খোয়াই নদীর পানি ১৯৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে ও হবিগঞ্জে ১৯০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে, ফেনীর পরশুরামে মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার ৭০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে, ফেনী নদীর পানি চট্টগ্রামের রামগড়ে বিপৎসীমার ৩২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে ও হালদা নদীর পানি চট্টগ্রামের নারায়ণহাটে বিপৎসীমার ১০০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ফেনী ও চট্টগ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

পাউবো জানিয়েছে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও গঙ্গা নদনদীর পানি কমছে, অপরদিকে পদ্মা নদীর পানি স্থিতিশীল আছে। আগামী দুদিনে এসব নদীর পানি কমতে পারে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদীসমূহের পানি বাড়ছে। আবহাওয়া সংস্থাসমূহের তথ্য অনুযায়ী, আগামী দুদিনে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। ফলে এ সময় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার প্রধান নদীসমূহের পানি কতিপয় পয়েন্টে বাড়তে পারে। এদিকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার মনু, খোয়াই, ধলাই নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে এবং নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে।

আবহাওয়া সংস্থাসমূহের তথ্য অনুযায়ী, আগামী একদিনে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। ফলে এ সময় এ অঞ্চলের মুহুরী, ফেনী, হালদা, সাঙ্গু, মাতামুহুরী ও গোমতী ইত্যাদি নদীসমূহের পানি সামগ্রিকভাবে স্থিতিশীল থাকতে পারে। একই সময়ে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ফেনী ও চট্টগ্রাম জেলার মুহুরী ও হালদা নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে বইতে পারে এবং নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে। এছাড়া পূর্বাঞ্চলের কুমিল্লা জেলার গোমতী নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে এবং সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে।

ফেনী থেকে শুকদেব নাথ তপন জানান, দেড় মাসের ব্যবধানে তৃতীয় দফায় ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে ফেনী সদর উপজেলা, পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ। গত কয়েকদিনের ভারি বৃষ্টি ও ভারতের উজানের পানিতে সোমবার দুপুর থেকে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ভাঙন স্থান দিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করতে শুরু করে। এতে তিন উপজেলার রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, ফসলি জমি ও মাছের ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে। লোকালয়ে পানি ঢুকে শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ফেনী-পরশুরাম আঞ্চলিক সড়ক ও উপজেলার অভ্যন্তরীণ সড়কে বন্ধ আছে যান চলাচল।

লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে বিদ্যুৎ সংযোগও। সদর উপজেলার শশর্দী ইউনিয়নের দক্ষিণ আবুপুর, কুমিরা, উত্তর আবুপুর, শশর্দী, বাকগ্রাম, পাঁছগাছিয়া ইউনিয়নের জগাইর গাঁও, ঢমুরিয়া, উত্তর ডমুরিয়াসহ ১৫টি গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (অ. দা.) মো. আবুল কাশেম বলেন, নদীর পানি বিপৎসীমার ৮৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এত পানি আগে কখনো দেখা যায়নি। মানুষ উদ্ধারেরও পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি। পরিস্থিতি খুবই খারাপ। এখনো বৃষ্টির সঙ্গে পানি বাড়ছে।

ফেনী আবহাওয়া অধিদপ্তরের উচ্চ পর্যবেক্ষক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, ফেনীতে টানা তিন দিন ধরে মাঝারি ও ভারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত আছে। বুধবার ১৮৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী ৭২ ঘণ্টা বৃষ্টি অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা আছে।

ফেনী জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার বলেন বলেন, সেনাবাহিনী ও কোস্ট গার্ডের একটি টিম স্পিডবোট নিয়ে দ্রুতই বন্যা দুর্গতদের উদ্ধার কাজ শুরু করেছে। জেলা শহর থেকে নদী পথ না থাকায় পরিবহনে করে স্পিডবোট নিতে কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে। এছাড়া সীমান্ত এলাকায় স্থানীয় বিজিবি সদস্যরাও কাজ শুরু করে দিয়েছেন।

পরশুরাম উপজেলার বক্সমাহমুদ গ্রামের সাংবাদিক মো. শাহআলম বলেন, আমাদের ত্রাণের চেয়েও এখন নৌকা বা স্পিডবোট বেশি প্রয়োজন। বন্যা পরিস্থিতি এমন হবে কেউ বুঝতে পারেননি। অনেকে রাত থেকে উদ্ধার করতে আসছে বললেও তেমন কাউকে দেখা যায়নি। সোমবার রাত থেকে বিদ্যুৎ নেই। বন্যার সঙ্গে বিদ্যুৎ, মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় অনেক বেশি ভোগান্তি দেখা দিয়েছে।

ফুলগাজীর উত্তর দৌলতপুর এলাকার বাসিন্দা সাংবাদিক সাহাব উদ্দিন বলেন, রাত ৩টার দিকে বুক সমান পানি দিয়ে ছোট সন্তানকে মাথায় নিয়ে পরিবারসহ অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি। চারদিকে থইথই পানি। ঘরবাড়ি সব ডুবে গেছে। জিনিসপত্র কোনো কিছুই বের করতে পারিনি।

কিসমত শ্রীপুর গ্রামের বাসিন্দা হেলাল মিয়া বলেন, ঘরের ছাদ পর্যন্ত পানিতে তলিয়ে গেছে। আটকে পড়াদের উদ্ধারে দুই-একটি নৌকা কাজ করলেও পানির স্রোতের কারণে তা ব্যাহত হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীর সহযোগিতা বেশি প্রয়োজন। দুদিন ধরে বিদ্যুৎ, মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় আরো কষ্ট পোহাতে হচ্ছে। এছাড়া ভারতের ত্রিপুরায় ডম্বুর গেট খুলে দেয়া হয়েছে বলে জেনেছি। এতে এদিকে পানির চাপ আরো বাড়ার সম্ভাবনা আছে।

কুমিল্লা থেকে এম ফিরোজ মিয়া জানান, কুমিল্লা গোমতী নদীর আদর্শ সদর উপজেলার বানাশুয়া, পালপাড়া, রতœবতী, টিক্কারচর,জালুয়াপাড়া, বুড়িচং উপজেলার ভান্তি, শিমাইলখাড়া, পূর্বহুড়া, নানুয়ার বাজার, মিথলাপুর, গোবিন্দপুর, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মালাপাড়া এলাকায় ঘুরে দেখা যায় গোমতীর তীর ঘেঁষে পানির ঢেউ। গোমতীর দুকূল ছাপিয়ে বন্যা হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। চরের হাজার একর সবজি ক্ষেত ডুবে গেছে। চরের বাসিন্দারা বাড়িঘর ছেড়ে বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন। পানিতে অন্তত ৪ হাজার হেক্টর চরের জমির ফসল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

মালাপাড়া এলাকার বাসিন্দা আলাউদ্দিন আজাদ জানান, তিনি পরিবার নিয়ে চরের ভেতর বসবাস করেন। গেল ১০ বছরে গোমতী নদীতে এত পানি দেখেননি। তার বৃদ্ধ মা ও স্ত্রী-সন্তান আর দুটি গাভি নিয়ে গোমতীর বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন। বুড়িচং উপজেলার ভান্তি এলাকার আবুল কালাম জানান, তার ১২০ শতক জমির মুলা পানিতে তলিয়ে গেছে। কামাড়খাড়া এলাকার নোয়াব মিয়া জানান, শিম ও চালকুমড়ার চাষ করেছিলেন। শিমগাছ ছোট ছিল। মাচায় ঝুলছিল কচি চালকুমড়া। সব এখন পানির নিচে।

জালুয়াপাড়া এলাকার কৃষক রহিম মিয়া জানান, এক লাখ টাকা পুঁজি ব্যয় করে ঝিঙা, শশিন্দা,করলা ও চালকুমড়ার চারা রোপণ করেছেন। লতাগুলো মাচায় উঠবে এই সময়ে গোমতীর পানিতে তার চারাগুলো পানিতে ডুবে গেছে। টিক্কারচর এলাকায় শহররক্ষা বাঁধে শতাধিক পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। চরের ভেতর পানি গলা সমান হয়ে গেছে। ঘর থেকে প্রয়োজনীয় অনেক কিছুই বের করতে পারেননি।

চাঁনপুর এলাকার সোহেল মিয়া জানান, তার সন্তানদের বই খাতা, নিজের গায়ের জামাকাপড় মঙ্গলবার রাতে নিয়ে বের হয়েছেন। বুধবার বৃষ্টিতে ভিজে ঘর থেকে খাট, আলমারি বের করছেন।

কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার রোমেন শর্মা জানান, তিনি মঙ্গলবার রাত থেকে গোমতীর বিভিন্ন পয়েন্টে ঘুরেছেন। বিভিন্ন এলাকায় গোমতীর বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওই সব এলাকায় স্থানীয়রা মাটি ও বালুর বস্তা দিয়ে বাঁধ রক্ষায় ব্যস্ত সময় পার করেছেন।

হবিগঞ্জ থেকে শফিকুল আলম চৌধুরী জানান, কয়েকদিনের বৃষ্টিপাত এবং নদীর উজানে ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নদীর পানি বৃদ্ধি পায়। মঙ্গলবার মধ্যরাতের পর থেকে নদীতে পানি বাড়তে শুরু করে। গতকাল বুধবার সকাল থেকেই পানি খোয়াই নদীর বিপৎসীমা অতিক্রম করতে থাকে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষে গতকাল হবিগঞ্জ শহরের মানুষকে সতর্ক থাকার জন্য মাইকিং করা হয়েছে। তবে শহরতলীর জালালাবাদ গ্রামের সন্নিকটে খোয়াই নদীর বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় শহর শঙ্কামুক্ত হয়েছে।

হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম হাসনাইন মাহমুদ বলেন, বুধবার ত্রিপুরায় বৃষ্টিপাত কিছুটা কমেছে। আশা করা যাচ্ছে বৃহস্পতিবার থেকে পানি কমে যাবে। এখনো পর্যন্ত কোথাও বন্যা দেখা দেয়নি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি জানান, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড়ি ঢল এবং মঙ্গলবার রাত থেকে শুরু হওয়া ভারি বর্ষণে বুধবার সকাল থেকে বন্দরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া খালে তীব্র বেগে পানি ঢুকতে থাকে। একপর্যায়ে আখাউড়া স্থলবন্দর, বাউতলা, বীরচন্দ্রপুর, কালিকাপুর, বঙ্গেরচর, সাহেবনগরসহ অন্তত ২৫টি গ্রামে পানি ঢুকে পড়ে। ভেঙে যায় গাজীরবাজার এলাকার আখাউড়া-আগরতলা সড়কের অস্থায়ী সেতু। মঙ্গলবার খলাপাড়া এলাকায় হাওড়া নদীর বাঁধের কিছু অংশ ভেঙে পানি ঢুকতে শুরু করে। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) গাজালা পারভীন রুহি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে দেখেন।

আখাউড়া দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. জালাল উদ্দিন জানান, সকালে তীব্র বেগে ভারত থেকে পানি ঢুকতে থাকে। এতে কয়েকটি গ্রামে পানি উঠার পাশাপাশি আখাউড়া-আগরতলা সড়কের অস্থায়ী সেতু ভেঙে যায়। পুরো বন্দর এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। এদিকে শিক্ষার্থীদের একটি দল সেনাবাহিনী ও ইউএনওর সঙ্গে দেখা করেন। পরে প্রশাসন ও সেনাবাহিনী ক্ষতিগ্রস্তদের উদ্ধারে কাজ শুরু করে।

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি জানান, টানা বৃষ্টিপাত ও ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে মৌলভীবাজার জেলার পাঁচটি নদনদীতে পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে বইছে। এতে নদনদী ভাঙনে প্লাবিত হয়েছে অর্ধশত গ্রাম। জেলাসদর, রাজনগর, কমলগঞ্জ ও কুলাউড়া, জুড়ী এবং বড়লেখা উপজেলায় অর্ধশতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে দেড় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যার পানি বাড়তে থাকায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাবেদ ইকবাল বলেন, ভয়ানকভাবে পানি বাড়ছে। নদনদীর বাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে। আমরা জিও ব্যাগ ফেলেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না। নদনদী বেশ কয়েকটি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। কুলাউড়া উপজেলা টিলাগাঁও এলাকায় মনু নদে ভাঙন দেখা দিয়েছে, তারপর রাজনগর এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে।

তিনি আরো বলেন, নদনদীর বাঁধ উপচে পানি প্রবাহিত হওয়ার কারণে কতটি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে তা নির্ধারণ করা যাচ্ছে না।

নোয়াখালী প্রতিনিধি জানান, টানা বৃষ্টিতে নোয়াখালী জেলা শহর মাইজদীসহ নয়টি উপজেলার বেশির ভাগ এলাকা জলাবদ্ধ হয়ে গেছে। এ কারণে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত জেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন। এদিকে জলাবদ্ধতায় ডুবে গেছে বাড়িঘর, রাস্তাঘাট ও ফসলের মাঠ। এছাড়া পৌরসভার বিভিন্ন বাসাবাড়ি ও দোকানপাটে পানি ঢুকে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। এতে সাধারণ মানুষ ছুটছে আশ্রয়কেন্দ্রের দিকে।

বেলায়েত হোসেন নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ঘরে হাঁটু পানি, রান্নাঘরেও পানি। পানির কারণে রান্নাও করতে পারিনি। আশপাশের নালায় জমে থাকা ময়লা-আবর্জনা বৃষ্টির পানির সঙ্গে মিশে ছড়িয়ে পড়েছে। নিজেদের গবাদি পশু ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে আশ্রয় কেন্দ্র ঠাঁই নিয়েছে বানভাসিরা। তবে সরকারি সহায়তা না চেয়ে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তির জন্য পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থার উদ্যোগ চান এসব মানুষ। এতে রোগজীবাণু ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বেগমগঞ্জ উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা হোসনে আরা বলেন, বন্যার কারণে পানি বাড়ছেই। ঘরে হাঁটু পানি। দাঁড়ানোর জায়গা নেই। ঘরের ভেতরে আর থাকার মতো নয়। পরিবারের সদস্য নিয়ে বিপাকে পড়েছি। তাই স্কুলে এসে আশ্রয় নিয়েছি।

বেগমগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আরিফুর রহমান বলেন, রাত-দিন খাল পরিষ্কার করা হচ্ছে। কাজ করে পরিষ্কার করা হয়েছে টক্কার পুল। পানির অবস্থা খুব খারাপ। সব ইউনিয়নে পানি উঠছে। পর্যাপ্ত বরাদ্দ না থাকায় সব মানবিক মানুষকে অসহায়ের পাশে থাকার জন্য অনুরোধ করছি। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে প্রতিটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে পর্যাপ্ত পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট সরবরাহ করা হয়েছে।

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি জানান, খাগড়াছড়ির মাইনি ও কাচালং নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় ডুবে গেছে খাগড়াছড়ি-সাজেক সড়কের একাধিক অংশ। ফলে সাজেক বেড়াতে এসে আটকা পড়েছেন প্রায় আড়াইশ পর্যটক। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে দীঘিনালার মেরুং ও কবাখালী ইউনিয়নের ৩০ গ্রাম। অন্যদিকে চেঙ্গী নদীর পানি কমে যাওয়ায় খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা থেকে বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। মঙ্গলবার বিকাল থেকে কবাখালী, বাঘাইহাট বাজার ও মাচালং বাজারসহ সাজেক সড়কের একাধিক অংশ পাঁচ থেকে ছয় ফুট পানির নিচে তলিয়ে যায়। এতে সড়কটিতে পর্যটকবাহী যানবাহনসহ সব ধরনের চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার শিরিন আক্তার জানান, সাজেক সড়কের বিভিন্ন অংশে পানি উঠে যাওয়ায় যান চলাচল বন্ধ আছে। এতে সাজেকে আটকা পড়েছেন অন্তত ২৫০ জন পর্যটক। তারা আজকে ফিরতে পারবেন না।

মেরুং ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান ঘনশ্যাম ত্রিপুরা বলেন, আশ্রয়কেন্দ্রে আসা বন্যাদুর্গতদের শুকনো খাবার ও খিচুড়ি রান্না করে খাওয়ানো হয়েছে। মাইনী নদীর পানি না কমায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। এখনো মেরুং বাজার পানির নিচে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

৯ সেপ্টেম্বর: সারাদিন যা যা ঘটলো

৯ সেপ্টেম্বর: সারাদিন যা যা ঘটলো

সীমান্ত হত্যা ভারত-বাংলাদেশ সুসম্পর্ক জোরদারে বড় বাধা: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

সীমান্ত হত্যা ভারত-বাংলাদেশ সুসম্পর্ক জোরদারে বড় বাধা: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

শাহরিয়ার আলম ও দিলীপ আগরওয়ালার ব্যাংক হিসাব তলব

শাহরিয়ার আলম ও দিলীপ আগরওয়ালার ব্যাংক হিসাব তলব

র‌্যাবের গাড়ি থেকে আ’লীগ নেতাকে ‘ছিনিয়ে নিলো’ বিএনপি নেতারা

র‌্যাবের গাড়ি থেকে আ’লীগ নেতাকে ‘ছিনিয়ে নিলো’ বিএনপি নেতারা

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App