চিকিৎসকের ধর্ষণ ও হত্যা
মুখ্যমন্ত্রী মমতার পদত্যাগ দাবিতে এবার ‘নবান্ন চলো’ কর্মসূচির ডাক
কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২২ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
আরজি কর হাসপাতালে শিক্ষানবিশ চিকিৎসককে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় প্রতিদিনই প্রতিবাদ মিছিল ও মিটিংয়ে উত্তাল ভারতের পশ্চিমবঙ্গ। শুধু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের একটি পোস্টেই আরজি করের বিচারের দাবিতে গত বুধবার রাজ্যজুড়ে ‘রাত দখল’ অভিযানে নামে মেয়েরা। তাদের সঙ্গে নেমে আসে হাজারো মানুষ। এবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের পদত্যাগের দাবিতে পশ্চিমবঙ্গে ‘নবান্ন চলো’ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে ছাত্র-সমাজ।
কলকাতার ৩টি স্থানের নাম উল্লেখ থাকলেও পরে কয়েকশ স্থানে আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদে রাস্তায় নামে সাধারণ মানুষ। ভুক্তভোগী চিকিৎসকের বিচার চেয়ে অভূতপূর্বভাবে ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান আর মহামেডেনের সমর্থকরা একত্রিত হয়ে রাস্তায় নামেন। পুলিশের হাতে মার খেয়ে গ্রেপ্তারও হন অনেকে। আন্দোলন আরো তীব্র করতে আবারো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সর্বত্র আওয়াজ উঠেছে। আগামী ২৭ আগস্ট পশ্চিমবঙ্গের সচিবালয় মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তরে ‘নবান্ন চলো’ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে ছাত্র-সমাজ। এই অভিযানের একটাই দাবি, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস। দফা এক, দাবি এক মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ।’
রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপির দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী প্রকাশ্যে এই দাবির সমর্থনে নবান্ন অভিযানে অংশ নেয়ার কথা জানিয়েছেন। কয়েকদিন আগেই তিনি নির্যাতিতার বাবার উদ্দেশে বলেছিলেন, আমি অনুরোধ করব, তার বাবা যেন জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে নবান্ন যাওয়ার ডাক দেন। তার বাবাকে আসতে হবে না। বয়স্ক মানুষ, শোকাতুর হৃদয় নিয়ে আছেন। বাকি যা করার আমরা করে দেব। আমাদের একটা বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তা সব রাজনৈতিক দলেরই রয়েছে। তাই আমরা এই ডাক দিতে পারছি না।
তবে এবার সেই দাবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উঠে আসায় আবারো ব্যাকফুটে রয়েছে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। ছাত্র-সমাজের নামে দেবদীপ অধিকারীর একটি পোস্টে মমতার পদত্যাগের আহ্বান জানিয়ে বলা হয়েছে, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস। দফা এক, দাবি এক মমতার পদত্যাগ। আগামী ২৬ আগস্টের মধ্যে পদত্যাগ না করলে ২৭ তারিখ নবান্ন চলো অভিযান। প্রত্যেক বাড়ি থেকে নিজ উদ্যোগে অন্তত একজন করে আসার আহ্বান। কোনো অশান্তি নয়/পাশে থাকুক পুলিশও। আহ্বানে পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র-সমাজ।’
দেবদীপ ওই পোস্টে আরো লিখেছেন, ‘সময় এসে গেছে।
আসুন সবাই একত্রিত হই এক ছাতার তলায়। দল-মত নির্বিশেষে, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে জোট বাঁধুন।’ এই পোস্টের বিষয়ে দেবদীপ জানিয়েছেন, ‘তিনি একজন ছাত্র। পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজের কর্মসূচির ডাক তিনি নিজে দেননি। তার কাছে আসা মেসেজটি শুধু শেয়ার করেছেন।’
দেবদীপের এই পোস্ট এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সর্বত্র প্রচার হচ্ছে। এই কর্মসূচিকে সমর্থন জানিয়ে মতামত দিচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এর মধ্যেই বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী প্রকাশ্যে ছাত্র-সমাজের এই দাবিকে সমর্থন করে জানিয়েছেন, তিনিও এই অভিযানে অংশ নেবেন। এ বিষয়ে শুভেন্দু বলেন, ছাত্র-সমাজ যদি নবান্ন অভিযান করে আমি তাহলে তাতে যাব। তার আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলব, ২৬ তারিখের মধ্যে পদত্যাগ করুন। যাতে পুলিশকে গুলি চালাতে না হয়।
বিজেপি যে এই কর্মসূচিতে অংশ নেবে তা স্পষ্ট করেছেন ভারতের সাবেক মন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরীও। তিনি বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার সীমা অতিক্রম করে ফেলেছেন। তার আর এক মুহূর্তও মুখ্যমন্ত্রীর পদে থাকার যোগ্যতা নেই। রাজ্যবাসী আজ তার পদত্যাগ চাইছেন। সম্মান বাঁচাতে অবিলম্বে তিনি পদত্যাগ করুক।
আরজি করের নতুন সুপার বুলবুলকে তলব : আরজি কর হাসপাতালের নতুন সুপার বুলবুল মুখোপাধ্যায়কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে সিবিআই। গতকাল বুধবার দুপুরে তিনি সিজিও কমপ্লেক্সে হাজিরা দেন। আরজি করের ডিন পদে ছিলেন বুলবুল। গত ৯ আগস্ট হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চার তলার সেমিনার হল থেকে নারী চিকিৎসকের মরদেহ উদ্ধারের পর নিরাপত্তা এবং দোষীদের শাস্তির দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। সেখানেই হাসপাতালের কর্তাদের পদত্যাগের দাবি জোরালো হয়েছিল। অন্যদের সঙ্গে সুপারকেও সরানো হয়েছিল তখন। তার পরেই ডিন থেকে সুপার পদে নিয়োগ করা হয় বুলবুলকে। চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় আরজি করে যে অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল, তার নেতৃত্বেও ছিলেন এই বুলবুল।
এর আগে আরজি করের একাধিক কর্মকর্তাকে তলব করেছে সিবিআই। পর পর দুই দিন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে পালমোনারি মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অরুণাভ দত্ত চৌধুরীকে। মৃত চিকিৎসক ওই বিভাগেই ছিলেন। এছাড়া হাসপাতালের একাধিক চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীকে সিজিও কমপ্লেক্সে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে আরজি করের ঘটনার তদন্ত করছে সিবিআই। এখনো পর্যন্ত এই ঘটনায় গ্রেপ্তারের সংখ্যা এক। পুলিশ তাকে ঘটনার পরের দিনই গ্রেপ্তার করে। তাকে তুলে দেয়া হয়েছে সিবিআইয়ের হাতে। ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ার হাসপাতালে নিয়মিত যাতায়াত করতেন বলে খবর। তার গতিবিধি সম্বন্ধে বুলবুল কিছু জানতেন কি না, তা-ও জানতে চায় সিবিআই।