×

প্রথম পাতা

নজরদারি বাড়াতে ইন্টারনেটে ধীরগতি

পাকিস্তানে ব্যবসায় ধসের আশঙ্কা

Icon

প্রকাশ: ১৯ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

 পাকিস্তানে ব্যবসায় ধসের আশঙ্কা

কাগজ ডেস্ক : পাকিস্তানের সরকার ভিন্নমতাবলম্বীদের কণ্ঠরোধ করার জন্য ইন্টারনেটে বিধিনিষেধ আরোপ করতে যাচ্ছে। ফায়ারওয়াল পরীক্ষার কারণে বড় আকারে ইন্টারনেট সেবা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিঘœ দেখা দিয়েছে। দেশটির ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের শীর্ষনেতা ও মানবাধিকার কর্মীদের দাবি, অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে এই উদ্যোগ। সঙ্গে সামগ্রিকভাবে ব্যবসা খাতে ধস নামার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর দাবি, ‘ডিজিটাল সন্ত্রাস’ রোধে নানা উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, মূলত তরুণ ও প্রযুক্তিবান্ধব ভোটারদের কাছে জনপ্রিয় পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সমর্থকদের ঠেকাতেই এসব উদ্যোগ।

পিটিআই অধিভুক্ত ইনসাফ স্টুডেন্টস ফেডারেশন (আইএসএফ) গত শুক্রবার দলের প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খানের মুক্তি এবং দেশে সত্যিকারের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য একটি আন্দোলন শুরু করার ঘোষণা দিয়েছে। পেশোয়ার প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে আইএসএফ খাইবার পাখতুনখোয়া সভাপতি আশফাক মারওয়াত দাবি করেন, বলপূর্বক গুম ও অপহরণের একটি অন্তহীন চক্র শুরু হয়েছে। দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতাকে অন্যায়ভাবে এক বছর ধরে কারারুদ্ধ করা হয়েছে এবং অগণিত ছাত্র ও রাজনৈতিক কর্মী কোনো সুষ্ঠু কারণ ছাড়াই কারাগারে বন্দি করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান ছাত্র আন্দোলন’ শুরু করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। শিগগিরই একটি অ্যাকশন কমিটি গঠন করা হবে। এই কমিটি লক্ষ্য অর্জনের জন্য সংবিধান ও আইনের কাঠামোর অধীনে কাজ করবে।

ডিজিটাল সেবা বিশেষজ্ঞদের মতে, আন্দোলন দমনে রাষ্ট্রীয়ভাবে একটি ‘ফায়ারওয়ালের’ পরীক্ষা চলছে। এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা চালু হলে তা নেটওয়ার্ক ট্রাফিকের ওপর নজর রাখার কাজে ব্যবহার করা হবে। একই সঙ্গে অনলাইন কার্যক্রমে নিয়ন্ত্রণ বসাতেও এটি ভূমিকা রাখবে।

একটি আইটি অ্যাসোসিয়েশনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, জুলাই মাসের শুরু থেকে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ৪০ শতাংশ কম গতিতে ইন্টারনেট চলছে। ধীরগতির ইন্টারনেটের কারণে পাকিস্তানে হোয়াটসঅ্যাপে লাখো ব্যবহারকারী ডকুমেন্ট, ছবি ও ভয়েস মেসেজ পাঠাতে হিমশিম খাচ্ছেন। এছাড়া, ফ্রিল্যান্সাররা কাজের সুযোগ হারাচ্ছেন এবং যাদের হাতে কাজ রয়েছে, তারা সেগুলো ঠিকমতো জমা দিতে পারছেন না। এর ফলে বৈশ্বিক আইটি অঙ্গনে পাকিস্তানের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে।

ডিজিটাল সেবা বিশেষজ্ঞ ও মানবাধিকার কর্মী উসামা খিলজি বলেন, জাতীয় ফায়ারওয়াল ও কনটেন্ট ফিল্টারিং সিস্টেম বসানোর কারণেই ইন্টারনেটের গতি কমে গেছে। রাষ্ট্র চাইছে নাগরিকদের ওপর নজরদারি বাড়াতে এবং একই সঙ্গে, রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বীদের কণ্ঠরোধ করতেও এটি কাজে লাগানো যাবে। বিশেষত, কেউ যেন নিরাপত্তা বাহিনীর দেশের রাজনীতিতে নাক গলানোর বিষয়টি নিয়ে কথা না বলতে পারে, তা নিশ্চিত করা হবে। তিনি আরো বলেন, কর্তৃপক্ষ খুব সম্ভবত হোয়াটস্যাপে আড়ি পাতার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে, কারণ এই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘অ্যান্ড টু অ্যান্ড’ এনক্রিপশন থাকায় ব্যবহারকারীরা তাদের গোপনীয়তা রেখেই একে অপরকে বার্তা পাঠাতে পারেন- তৃতীয় কোনো পক্ষ তাদের যোগাযোগে আড়ি পাতার সুযোগ নেই।

বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে ইন্টারনেটের গতি কমার বিষয়ে সরকার মন্তব্য করতে অস্বীকার করে আসছে। বিশ্লেষকদের ধারণা, সরকারি এই উদ্যোগে সামরিক বাহিনী ও এক অবসরপ্রাপ্ত জেনারেলের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত টেলিকমের নিয়ন্ত্রক সংস্থা সহায়তা করছে। অবশেষে এ সপ্তাহে মুখ খোলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মুহাম্মাদ আসিফ। গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, আমরা একটি রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। খুব শিগগিরই আপনারা সব সুযোগ-সুবিধা ফিরে পাবেন। কিন্তু রাষ্ট্র ও নাগরিকদের বিরুদ্ধে হুমকি ও সম্ভাব্য মানহানি ঠেকানোর জন্য কিছু নিয়ন্ত্রণ বসানো হবে। তবে ফায়ারওয়ালের মাধ্যমে এসব নিয়ন্ত্রণ বসানো হবে কিনা, সে বিষয়ে তিনি কিছু বলেননি।

বিশিষ্ট পাকিস্তানি সাংবাদিক হামিদ মীর ইসলামাবাদের হাইকোর্টে সরকারের ফায়ারওয়াল বসানোর উদ্যোগকে চ্যালেঞ্জ করে একটি রিট আবেদন করেছেন। আজ সোমবার এই আবেদনের শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।

পাকিস্তানের আইটি প্রতিষ্ঠানের সংগঠন পাকিস্তান সফটওয়্যার হাউসেস অ্যাসোসিয়েশনের মতে, এই ফায়ারওয়ালের কারণে পাকিস্তানের আইটি খাতকে ৩০ কোটি ডলার গচ্চা দিতে হতে পারে। পাকিস্তানে হোয়াটসঅ্যাপের মেসেজ কাজ করলেও অডিও-ভিডিও কল ও অন্যান্য সেবা বিঘিœত হয়েছে।

পাকিস্তান বিজনেস কাউন্সিলের প্রধান নির্বাহী এহসান মালিক বলেন, নিরাপত্তার জন্য ফায়ারওয়াল বসানো যদি জরুরিও হয়ে থাকে, পরীক্ষামূলক ভিত্তিতে ও সীমিত আকারে এটি চালু করা হলে হাজারো ফ্রিল্যান্সারদের উপার্জন এভাবে বিঘিœত হতো না এবং আইটি ও আইটি সংক্রান্ত সেবার নির্ভরযোগ্য সরবরাহকারী হিসেবে পাকিস্তানের ভাবমূর্তি এভাবে ক্ষুণ্ন হতো না।

মানবাধিকার কর্মীরা সরকারি সেন্সরশিপ, ইন্টারনেট ও গণমাধ্যমের ওপর নিয়ন্ত্রণ বসানোর উদ্যোগের তীব্র সমালোচনা করেছে। নির্বাচনের আগে থেকেই পাকিস্তানে এক্স (সাবেক টুইটার) নিষিদ্ধ রয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

ভোলায় আরো সাড়ে ৬ লাখ কোটি টাকার গ্যাসের সন্ধান

ভোলায় আরো সাড়ে ৬ লাখ কোটি টাকার গ্যাসের সন্ধান

‘এটাই বাংলাদেশের সেরা টেস্ট দল’

‘এটাই বাংলাদেশের সেরা টেস্ট দল’

টিভিতে আজ যা দেখবেন

টিভিতে আজ যা দেখবেন

ধরা ছোঁয়ার বাইরে বিদ্যুত খাতের মাফিয়া আজিজ খান

ধরা ছোঁয়ার বাইরে বিদ্যুত খাতের মাফিয়া আজিজ খান

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App