মোদির আশাবাদ
বাংলাদেশে দ্রুত ফিরবে স্বাভাবিক পরিস্থিতি
প্রকাশ: ১৬ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
কাগজ ডেস্ক : ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশে শান্তি ফিরে আসবে বলে আশা প্রকাশ করে বলেছেন, আমি আশা করি, বাংলাদেশের পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হয়ে আসবে। ভারতের ১৪০ কোটি মানুষ চায়, বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ ও সংখ্যালঘুরা নিরাপদ থাকুক। একই সঙ্গে তিনি জানান, তার দেশ সবসময় প্রতিবেশী দেশের অগ্রগতি ও উন্নয়নে সমর্থন দিয়ে যাবে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্রিফিংয়েও বাংলাদেশের বর্তমান নিরাপত্তা পরিস্থিতি, মানবাধিকার এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার ইস্যু উঠে এসেছে।
ভারতের ৭৮তম স্বাধীনতা দিবসে উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার দিল্লির ১৭ শতকের মোঘল আমলের লাল কেল্লা থেকে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেন, বাংলাদেশে যা কিছু হচ্ছে, সেটা নিয়ে প্রতিবেশী দেশ হিসেবে চিন্তিত হওয়ার বিষয়টি আমি বুঝতে পারছি। বিশেষ করে ১৪০ কোটি দেশবাসীর চিন্তা, ওখানকার হিন্দু, ওখানকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের সুরক্ষা সুনিশ্চিত হোক। ভারত সব সময় চায়, আমাদের প্রতিবেশী দেশ সুখ ও শান্তির পথে চলুক। শান্তির প্রতি আমরা প্রতিশ্রæতিবদ্ধ, এটা আমাদের ঐতিহ্য। আগামী দিনগুলোয় বাংলাদেশের উন্নয়নযাত্রায় আমাদের শুভাকাক্সক্ষা থাকবে। কারণ, আমরা মানবজাতির ভালো চাওয়া মানুষ।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। তার দেশত্যাগের পর বাংলাদেশে বেশ কিছু ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তী সরকার শপথ নেয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি সেদিনই নতুন সরকারকে শুভকামনা জানান।
ভারতসহ অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে যুক্তরাষ্ট্র : বাংলাদেশের বর্তমান নিরাপত্তা পরিস্থিতি, মানবাধিকার এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার ইস্যু উঠে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্রিফিংয়ে। বুধবারের নিয়মিত ওই ব্রিফিংয়ে দপ্তরের উপপ্রধান মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল বলেন, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে আলোচনা করতে আমরা আমাদের ভারতীয় অংশীদার ও ওই অঞ্চলের অন্যান্য দেশের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি। এ ইস্যুতে এখন আমি ব্যক্তিগত কূটনৈতিক আলোচনায় যাচ্ছি না। তবে আমরা বাংলাদেশে সহিংসতার অবসান, সেই সঙ্গে জবাবদিহি প্রতিষ্ঠা ও আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনে চাপ অব্যাহত রাখতে চাই।
ব্রিফিংয়ে একজন সাংবাদিক জানতে চান, ভারতীয় বংশোদ্ভূত দুজন মার্কিন কংগ্রেস সদস্য রাজা কৃষ্ণমূর্তি ও শ্রী থানাদার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের কাছে পাঠানো পৃথক চিঠিতে বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের জানমাল রক্ষায় হস্তক্ষেপ ও সহায়তা করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি সেই চিঠি পেয়েছেন কিনা, এ ইস্যুতে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন কিনা।
জবাবে উপপ্রধান মুখপাত্র বলেন, আমরা কংগ্রেসের (যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট) সহকর্মীদের সঙ্গে নিয়মিতভাবে যোগাযোগ রাখছি। আমি নির্দিষ্ট কোনো চিঠি বা যোগাযোগ প্রসঙ্গে বলছি না। তবে এটুকুই বলতে চাই, অন্তর্বর্র্র্তী সরকার, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের শান্ত থাকার ও সাম্প্রতিক সহিংসতার অবসান ঘটানোর আহ্বানকে আমরা স্বাগত জানাই। পাশাপাশি দেশে নিরাপত্তা পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজনকে সুরক্ষায় নতুন সরকারের গুরুত্ব দেয়ার বিষয়টিকেও স্বাগত জানাই আমরা।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া দাবি ব্যারোনেস ভার্মার : বাংলাদেশে ক্ষমতার পালাবদলের মধ্যে হিন্দুসহ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনায় যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমারের প্রতিক্রিয়া দাবি করেছেন হাউস অব লর্ডসের সদস্য লেস্টারের ব্যারোনেস স›দ্বীপ ভার্মা।
কিয়ের স্টারমারকে পাঠানো এক চিঠিতে তিনি লিখেছেন, বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়সহ অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নৃশংস আক্রমণ হয়েছে; ধর্মীয় উপাসনালয়, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে; পুলিশি পদক্ষেপ তেমন না থাকায় নিরীহ মানুষের ওপর ‘অবর্ণনীয় সহিংসতা’ চালানো হচ্ছে বলে ব্যারোনেস ভার্মা তার পরিবার, বন্ধুবান্ধব ও কমিউনিটি সংগঠনগুলোর কাছ থেকে জেনেছেন। অবিলম্বে এই অপরাধের নিন্দা জানানো দরকার, এই ঘৃণ্য অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনতে আইন ও আদালতের পূর্ণ শক্তি প্রয়োগের আদেশ দিতে হবে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে। বাংলাদেশ যুক্তরাজ্যের ঘনিষ্ঠ মিত্র হলেও হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নিপীড়ন ও হামলা চলতে দেয়া যায় না এবং বিষয়টি অবিলম্বে সর্বোচ্চ পর্যায়ে তোলা দরকার। প্রধানমন্ত্রী স্টারমারকে তিনি বলেন, যুক্তরাজ্যের হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মতো আমিও আপনার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষায় রয়েছি।