ট্রাম্পের রানিংমেট হলেন জেডি ভ্যান্স
প্রকাশ: ১৭ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
কাগজ ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। তার রানিংমেট মনোনীত হয়েছেন ওহাইও রাজ্যের সিনেটর জেডি ভ্যান্স। নভেম্বরের নির্বাচনে ট্রাম্প জয়ী হলে ৩৯ বছর বয়সি ভ্যান্সই হবেন দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট, যিনি এক সময় ডোনাল্ড ট্রাম্পের কড়া সমালোচক ছিলেন।
সোমবার শুরু হওয়া রিপাবলিকান জাতীয় সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীর মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হয়। এর আগে রিপাবলিকান পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ট্রাম্প নিজেই তার রানিংমেট অর্থাৎ ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে ভ্যান্সকে বেছে নেয়ার ঘোষণা দেন। আগামীকাল বৃহস্পতিবার ডেলিগেট ও জাতির উদ্দেশে বক্তব্য রাখবেন ট্রাম্প।
দুদিন আগে পেনসিলভেনিয়ার বাটলারে নির্বাচনী সমাবেশে ভাষণ দেয়ার সময় এক হত্যাচেষ্টায় আহত হন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ ঘটনার পর মিলওয়াকিতে রিপাবলিকান দলীয় কনভেনশনে প্রথম তাকে প্রকাশ্যে দেখা যায়। এ সময় তার ডান কানে সাদা একটি ব্যান্ডেজ বাঁধা ছিল।
রিপাবলিকান পার্টির এই কনভেনশনে আসা অতিথির মধ্যে যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাসকেও দেখা গেছে, যিনি ব্রিটেনে এবারের পার্লামেন্ট নির্বাচনে হেরে গেছেন।
কে এই জেডি ভ্যান্স : মিলওয়াকিতে রিপাবলিকান পার্টির জাতীয় সম্মেলনে ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে ৩৯ বছর বয়সি ভ্যান্সের নাম ঘোষণা করে সবাইকে চমকে দেন ট্রাম্প। কারণ একসময় ট্রাম্পের কট্টর সমালোচক ছিলেন ভ্যান্স।
জেডি ভ্যান্স ২০১৬ সালে বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে ও টুইটারে ট্রাম্পকে নিয়ে কঠিন সমালোচনা করেছিলেন। বলেছিলেন, আমি কখনোই ট্রাম্পের লোক নই। আমি কখনোই তাকে পছন্দ করি না। তাকে নির্বোধ মনে করি। এমনকি ট্রাম্পকে ‘আমেরিকার হিটলার’ উল্লেখ করে ফেসবুকে পোস্টও দিয়েছিলেন তিনি। পরে ধীরে ধীরে তার মানসিকতায় পরিবর্তন আসে।
ওই বছরই জেডি ভ্যান্সের একটি স্মৃতিকথামূলক বই প্রকাশিত হয়। নাম ‘হিলবিলি এলিজি’। এ বই তাকে দেশজুড়ে খ্যাতি এনে দেয়। বইটি নিউইয়র্ক টাইমসের সর্বোচ্চ বিক্রীত (বেস্ট সেলার) বই। পরবর্তীতে বইটি নিয়ে একটি চলচ্চিত্রও নির্মিত হয়।
ওই বই থেকে জানা যায়, ওহাইওর মিডলটাউনে তার জন্ম। পুরো নাম জেমস ডোনাল্ড বোম্যান ভ্যান্স। তার মা মাদকাসক্ত ছিলেন। ছোটবেলায় বাবা তাদের ছেড়ে চলে যান। পরে নানা-নানির কাছে বড় হন ভ্যান্স। ২০০৩ সালে হাইস্কুল পাসের পরই মার্কিন মেরিন সেনাবাহিনীতে কাজ শুরু করেন তিনি। ২০০৫ সালে শেষের দিকের ছয় মাস তিনি ইরাকে কাজ করেছেন। ২০০৯ সালে ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক শেষ করেন। তখন থেকেই রিপাবলিকান রাজ্য সিনেটর বব শুলারের সঙ্গে কাজ করতেন তিনি। ২০১৩ সালে ইয়েল ল স্কুলে পড়াশোনা করেন। এসময় ভারতীয় বংশোদ্ভূত উষা চিলুকুরির সঙ্গে পরিচয় হয় তার। ২০১৪ সালে বিয়ে করেন তারা। তাদের ৩টি সন্তান রয়েছে।
ট্রাম্পের ওপর হামলার ঘটনায় ৫ প্রশ্ন : পেনসিলভেনিয়ায় নির্বাচনী সমাবেশে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনায় দেশটির কেন্দ্রীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সিক্রেট সার্ভিসের ভূমিকা নিয়ে কয়েকটি বড় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ওই ঘটনায় এখন মুখ্য তদন্তকারীর ভূমিকায় মার্কিন কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এফবিআই। গুলিবর্ষণের ঘটনায় এক ব্যক্তি নিহত ও দুজন গুরুতর আহত হন। আর কানে মারাত্মকভাবে জখম হন ট্রাম্প।
হামলার ঘটনায় ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) যখন ৫টি প্রশ্নের জবাব খুঁজছে, তখন সিক্রেট সার্ভিস বলছে- ‘কী ঘটেছিল, কীভাবে ঘটেছিল, এমন ঘটনা ভবিষ্যতে কীভাবে এড়ানো যায়’ এসব নিয়ে কাজ করছে তারা। বিশেষজ্ঞদের তোলা কয়েকটি প্রশ্ন এখানে তুলে ধরা হলো-
কেন অনিরাপদ ছিল ভবনের ছাদ : সমাবেশের অদূরে যে ভবনের ছাদ থেকে গুলি করা হয়, সেটি ছিল মঞ্চে থাকা ট্রাম্পের কাছ থেকে মাত্র ১৩০ মিটারের (৪৩০ ফুট) মতো দূরে। সন্দেহভাজন বন্দুকধারী টমাস ম্যািথউ ক্রুকস কীভাবে ওই ছাদে যাওয়ার সুযোগ পেলেন, তা এখনো অস্পষ্ট।
সিক্রেট সার্ভিসের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে পরিচিত একটি সূত্র বলেছে, কেউ যেন ভবনটির ছাদে উঠতে না পারে, সে জন্য সেখানে কাউকে উপস্থিত রাখা বা ভবনটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা উচিত ছিল। এর বাইরে, উচিত ছিল, ছাদ থেকে ট্রাম্পের মঞ্চ দেখার সুযোগ বন্ধ করা।
বন্দুকধারীর তৎপরতা নিয়ে কি সতর্কবার্তা ছিল : ট্রাম্পের ওপর হামলার ঘটনার একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন, ক্রুকসকে তিনি ও আরো কয়েকজন বন্দুক নিয়ে ছাদে হামাগুড়ি দিতে দেখেছেন। তারা এ ব্যাপারে পুলিশকে সতর্ক করেন। কিন্তু সন্দেহভাজন ব্যক্তি গুলি করার আগে হামাগুড়ি দিয়ে কয়েক মিনিট ধরে এগোতে থাকেন। পরে তাকে গুলি করে মেরে ফেলা হয়।
কাউন্টির শেরিফ নিশ্চিত করেছেন, ক্রুকসকে স্থানীয় একজন পুলিশ সদস্য শনাক্ত করেছিলেন। তবে ওই সময় তাকে গুলি ছোড়া থেকে নিবৃত্ত করতে ব্যর্থ হন তিনি। হামলাকারীর ব্যাপারে তথ্য ট্রাম্পের চারপাশে থাকা এজেন্টদের কাছে পৌঁছেছিল কি না, সেটি এখনো পরিষ্কার নয়।
স্থানীয় পুলিশের ওপর বেশি নির্ভরশীলতা : বন্দুকধারী যেখান থেকে গুলি চালিয়েছিলেন, পুলিশের বর্ণনা অনুযায়ী তা ছিল ‘দ্বিতীয় স্তরের’ নিরাপত্তা বলয়ভুক্ত স্থান। সেখানে সিক্রেট সার্ভিসের সদস্যরা নন, স্থানীয় ও রাজ্যপর্যায়ের পুলিশ ছিল টহলের দায়িত্বে।
সিক্রেট সার্ভিসের সাবেক একজন সদস্য বলেন, এ ধরনের ব্যবস্থাপনা শুধু তখনই কাজ করে, যখন বিপদের আশঙ্কা চিহ্নিত করার পর করণীয় বিষয় সম্পর্কে কোনো স্পষ্ট পরিকল্পনা থাকে। কাউন্টি শেরিফ স্বীকার করেন, এ ক্ষেত্রে এক ধরনের ব্যর্থতা ছিল। কিন্তু কোনো এক পক্ষকে দোষ দেয়া যাবে না।
সমাবেশের নিরাপত্তা যথাযথ ছিল কি না : প্রতিনিধি পরিষদের ওভারসাইট কমিটির একজন সাবেক চেয়ার ইঙ্গিত দেন, সমাবেশস্থলে সিক্রেট সার্ভিসের সদস্যরা ছিলেন অনেকটাই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে। এ কারণেই শনিবারের ওই সমাবেশের মতো কোনো আয়োজনের নিরাপত্তায় স্থানীয় পুলিশকে প্রশিক্ষিত করা হয়েছিল কিনা, তা নিয়ে কথা উঠছে।
এর আগেও সিক্রেট সার্ভিসের ব্যর্থতা সম্পর্কে তুলে ধরেছেন প্রতিনিধি পরিষদের সাবেক সদস্য জেসন চ্যাফেজ। তিনি বলেন, এ মুহূর্তে ট্রাম্প কিংবা প্রেসিডেন্ট বাইডেনের চেয়ে বেশি হুমকিতে আর কেউ নেই। অথচ পেনসিলভেনিয়ার সমাবেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সেটির প্রতিফলন ঘটেনি।
ট্রাম্পকে কি দ্রুত সরিয়ে নেয়া হয়েছিল : হামলার পর সিক্রেট সার্ভিসের যেসব সদস্য ট্রাম্পকে ঘিরে নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তুলেছিলেন তারা প্রশংসা কুড়াচ্ছেন। প্রশংসাকারীদের একজন এ সার্ভিসের সাবেক সদস্য রবার্ট ম্যাকডোনাল্ড বলেন, এ ধরনের পরিস্থিতিতে কী করতে হবে, সে বিষয়ে ঠিক পরিকল্পনা না থাকার পরও তারা খুব ভালো তৎপরতা দেখিয়েছেন।
তবে এ প্রশ্নও উঠছে, হামলার পর ট্রাম্পকে কি দ্রুততার সঙ্গে সিক্রেট সার্ভিসের সদস্যরা মঞ্চ থেকে তার গাড়ির দিকে নিয়ে যেতে পেরেছিলেন? ঘটনার ওপর প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, গুলির ঘটনার পর সিক্রেট সার্ভিসের সদস্যরা দ্রুতই ট্রাম্পকে ঘিরে নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলেন। কিন্তু পরক্ষণেই ট্রাম্পকে মঞ্চ থেকে সরিয়ে নিতে কিছুটা সময় নেন তারা। কেননা তখন ট্রাম্প তার জুতা এগিয়ে দিতে বলছিলেন। সেই সঙ্গে ট্রাম্প তার সমর্থকদের উদ্দেশে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে কিছু বলেন।
সিক্রেট সার্ভিসের একজন প্রবীণ সদস্য নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেন, এ রকম পরিস্থিতিতে ট্রাম্পকে সরিয়ে নিতে তিনি কালক্ষেপণ করতেন না। বলেন, ‘আমি থাকলে, তাকে নতুন জুতা কিনে দেয়ার চিন্তা করতাম।