×

প্রথম পাতা

ঢাকায় বৃষ্টি হলেই জলজট এই দুর্ভোগের সমাধান কী

সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে বৃষ্টির পানি দ্রুত নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নিতে হবে

Icon

প্রকাশ: ১৪ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ঢাকায় বৃষ্টি হলেই জলজট এই দুর্ভোগের সমাধান কী

কাগজ প্রতিবেদক : খাল উদ্ধারে অভিযান, নর্দমা পরিষ্কারসহ প্রতি বছর নানা উদ্যোগ নেয়া হলেও ঢাকার জলাবদ্ধতা পরিস্থিতির তেমন উন্নতি নেই। টানা কয়েক ঘণ্টা ভারি বৃষ্টি হলেই ঢাকার বেশকিছু এলাকা পানির নিচে চলে যায়। সবশেষ শুক্রবার সকালের তিন ঘণ্টার ভারি বৃষ্টিপাত চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে জলাবদ্ধতার সংকট। আবহাওয়া অধিদপ্তরের মতে, শুক্রবার তিন ঘণ্টায় ঢাকায় বৃষ্টি হয়েছে ৬০ মিলিমিটার। এই বৃষ্টিতেই রাজধানীর মৌচাক, মালিবাগ, খিলগাঁও, শান্তিনগর, রাজারবাগ, মতিঝিল, আরামবাগ, ধানমন্ডি, গ্রিন রোড, নিউমার্কেট, কাজীপাড়া, দক্ষিণখান, কল্যাণপুর, ফকিরাপুল, সেগুনবাগিচা, বিজয় সরণি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাজধানীর বেশির ভাগ এলাকার সড়ক পানিতে ডুবে যায়। পানি ঢুকেছে অনেক বাসা ও দোকানে। হাঁটু থেকে কোমর পরিমাণ পানি জমে এসব এলাকায়। গত মে মাসের ১১ ও ২৭ তারিখেও কয়েক ঘণ্টার ভারি বর্ষণে এমন জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছিল।

ঢাকার বেশকিছু এলাকায় গতকাল রাত ১১টা পর্যন্তও ছিল শুক্রবারের বৃষ্টির পানি। ফলে পথচারীদের বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। হাঁটু পরিমাণ এমনকি কিছু এলাকায় কোমর পরিমাণ পানি জমে যাওয়ায় বিকল হয়ে যায় অনেক যানবাহন। বিশেষ করে রাজারবাগ, আরামবাগ, গ্রিন রোড, আজিমপুর ও সলিমুল্লাহ মুসলিম হল এলাকায় পানি ছিল গভীর রাত পর্যন্ত। গতকাল শনিবার সকালেও দেখা গেছে এসব এলাকায় হাঁটু পরিমাণ পানি জমে থাকতে।

সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের দাবি, ঢাকা ওয়াসা থেকে দুই সিটি করপোরেশন দায়িত্ব পেয়েই খালের সংস্কার শুরু করে। কিছুদিন পর সেখানে আবার ময়লা পড়ে ভরাট হয়ে যায়। এমনকি খালের ময়লা পাশেই রাখার ফলে সেগুলো আবার খালেই পড়েছে; এমন ঘটনাও আছে। তাছাড়া জনগণ প্রতিনিয়তই খালে ময়লা ফেলছে, তা যেন অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। অনেক নালার মুখ বন্ধ হয়ে গেছে। বৃষ্টির পানি সড়কের নিচের অংশের নালা হয়ে খাল ও নদীতে গিয়ে পড়ে। সেই নালার অবস্থাও করুণ। খালের তলায় মাটি জমে গভীরতা কমে গেছে। পানির ধারণক্ষমতাও কমেছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের দাবি, বিগত ৪ বছরে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ শুরু করেছেন তারা। নানা কর্মযজ্ঞের ফলে ৭০ ভাগ জলাবদ্ধতা কমানো সম্ভব হয়েছে। খাল উদ্ধারে নানা প্রতিবন্ধকতাসহ নানা চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এসব প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করেই আগামী মাস থেকে দক্ষিণ সিটির আরো চারটি খাল উদ্ধারের কাজ শুরু করা হবে। এছাড়া বিভিন্ন এলাকায় নর্দমার লাইন বন্ধ

থাকায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। সেসব সমস্যাও সমাধানের পথে। আর নগরবিদরা বলছেন, শুধু খাল পরিষ্কার করলেই নগরীর জলাবদ্ধতার সমাধান হবে না। বৃষ্টির পানি নর্দমা হয়ে খালের মাধ্যমে নদীতে যাওয়া পর্যন্ত বেশ কয়েকটি ধাপ আছে। এসব জায়গায়ও নজর দিতে হবে।

সম্প্রতি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে ২০২০ সালের পর থেকে ১৬১টি জায়গা আমরা চিহ্নিত করেছি। এর মধ্যে ১৩৬টি জায়গার জলাবদ্ধতা নিরসন হয়েছে। বাকি জায়গাগুলোতে কাজ চলছে। নতুন করে আরো ৫০টি জায়গা চিহ্নিত করেছি। এসব এলাকার মধ্যে নিউমার্কেট, নায়েম সড়ক, ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটসহ আরো কয়েকটি এলাকা আছে। এসব এলাকার নর্দমাগুলোতে পুঞ্জিভূত ময়লা জমে ভরে গেছে। পানি নিষ্কাশনের নর্দমা ছিল পিলখানার ভেতর দিয়ে। ২০০৯ সালে পিলখানা ট্র্যাজেডির পর নর্দমার মুখগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। দেনদরবার করে আমরা বিজিবির অনাপত্তি পেয়েছি। তিনি বলেন, এখন পিলখানার ভেতর দিয়ে নর্দমা করা ও বিকল্প হিসেবে আজিমপুর কবরস্থানের পাশ দিয়ে নর্দমা তৈরি করে তা বুড়িগঙ্গা পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছি। অল্প কিছু দিনের মধ্যে এ কাজ শুরু করতে পারব। ওইসব এলাকা জলাবদ্ধতার হাত থেকেও রক্ষা পাবে।

আগামী মাস থেকে জিরানি, মান্ডা, শ্যামপুর ও কালুনগর খাল দখলমুক্ত করার দৃঢ়তার কথা জানিয়ে মেয়র বলেন, শ্যামপুর খালের একটি অংশ ১০০ ফুট প্রশস্ত হওয়ার কথা থাকলেও আমরা পেয়েছি মাত্র ৮ ফুটের একটি নালা। এরকম চিত্র প্রায় সব জায়গায়। আগামী মাস থেকে আমরা এই ৪ খালের চূড়ান্ত সীমানা নির্ধারণ ও দখল মুক্তের কাজ শুরু করব। যদিও অনেক প্রতিকূলতা, প্রতিবন্ধকতা, চাপ ও প্রভাব রয়েছে। সবার সহযোগিতায় আমরা সেটা করতে পারব। তাহলে আমাদের আর জলাবদ্ধতা হবে না।

আর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে উত্তর সিটির তৎপরতা থেমে নেই। ঢাকার অবৈধ দখল ও দূষণের কবলে পড়ে খালগুলো মরতে বসেছিল। খালগুলো বুঝে পাওয়ার পর থেকে আমরা কাজ করছি। এ বছরও লাউতলা খাল, রামচন্দ্রপুর খাল, গুলশান লেক, প্যারিস বা বাইশটেকি খাল, সুতিভোলা খাল দখলমুক্ত করে পানি প্রবাহ নিশ্চিত করা হয়েছে। রাজউক খাল থেকে ২ লাখ ৫৮ হাজার টন বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে। নিয়মিত সারফেস ড্রেন পরিষ্কার, ড্রেনে পানির লেভেল পরীক্ষা, অতিবৃষ্টির সময় কল্যাণপুর থেকে শক্তিশালী পাম্পের সাহায্যে দ্রুত পানি সরিয়ে নদীতে স্থানান্তর প্রভৃতি কাজ নিয়মিত করা হচ্ছে।

ঢাকায় বারবার জলাবদ্ধতা ও সমাধান কি জানতে চাইলে নগর পরিকল্পনাবিদ বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি ড. আদিল মুহাম্মদ খান ভোরের কাগজকে বলেন, ঢাকার খালগুলোর মালিকানা বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের হাতে ন্যস্ত। জেলা প্রশাসন সব খালের মালিক হলেও ঢাকা ওয়াসা, সিটি করপোরেশন, পানি উন্নয়ন বোর্ড, রাজউকসহ অন্যান্য সংস্থা খালর তত্ত্বাবধানে দীর্ঘদিন নিয়োজিত থাকলেও রক্ষণাবেক্ষণ ও তদারকিতে নগর সংস্থাগুলোর মধ্যে আন্তঃসমন্বয় ছিল না। মোট কথা ঢাকার খালের প্রকৃত অভিভাবক কেউ ছিল না। ঢাকা মহানগরের সম্প্রসারণে খালগুলোকে কেন্দ্র করে যে নগর পরিকল্পনার সম্ভাবনা ছিল, সেটা নষ্ট করে দখল আর দূষণে খাল ও জলাশয়গুলোকে আমরা উন্নয়নের নামে ক্রমাগত ধ্বংস করেছি। ফলে একদিকে যেমন নগরীর পরিবেশ-প্রতিবেশ ধ্বংস হয়েছে, অন্যদিকে নগরায়ণের চাপে শহরের খালগুলো ক্রমান্বয়ে দখলের শিকার হয়েছে। একই সঙ্গে খালগুলোর দৈর্ঘ্য কমে যাওয়ায় ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনার নেটওয়ার্ক হিসেবে নগরের খালগুলো কার্যকারিতা হারিয়েছে বহুলাংশে।

এই নগর পরিকল্পনাবিদ আরো বলেন, সিটি করপোরেশনের আন্তরিকতা থাকলে খালগুলো পুনরুদ্ধার করা সম্ভব। পাশাপাশি খালের আন্তঃসংযোগ নিশ্চিত করতে পরিকল্পনামাফিক প্রকল্প নিলে খালগুলোর অভ্যন্তরীণ নেটওয়ার্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা যাবে। খালের মধ্যে বৃষ্টির পানির ধারণক্ষমতা ও পানিপ্রবাহের পরিমাণ বাড়ানো সম্ভব হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি গ্রেপ্তার

যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি গ্রেপ্তার

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের দ্রুত পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করবো: উপদেষ্টা

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের দ্রুত পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করবো: উপদেষ্টা

ভারতীয় আধিপত্যের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন শেখ হাসিনা

ভারতীয় আধিপত্যের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন শেখ হাসিনা

যানজট নিরসনে পুলিশ ও বিশেষজ্ঞদের সমাধান খোঁজার নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

যানজট নিরসনে পুলিশ ও বিশেষজ্ঞদের সমাধান খোঁজার নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App