×

প্রথম পাতা

মাওয়ায় সুধী সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী

পদ্মা সেতু বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ঘুরিয়ে দিয়েছে

Icon

প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

পদ্মা সেতু বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ঘুরিয়ে দিয়েছে

কাগজ প্রতিবেদক : পদ্মা সেতু টাকার অঙ্কে বিবেচনার জিনিস নয়; এমন মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এই সেতু গর্বের সেতু। এই একটা প্রকল্প দেশের ভাবমূর্তি ঘুরিয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশকে এখন আন্তর্জাতিকভাবে সমীহ করে চলে। এখন আমরা বুক ফুলিয়ে গর্বের সঙ্গে বিশ্বে চলছি। আগামী দিনে যত বাধাই আসুক, অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। গতকাল শুক্রবার বিকালে মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতু প্রকল্পের সমাপনী উপলক্ষে সুধী সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যারা ভেবেছিল তাদের সহায়তা ছাড়া বাংলাদেশ চলতেই পারবে না, সেই ধারণাটা বদলে গেছে। সেই ধারণা আর নেই। আগে যারা কথায় কথায় খবরদারি করত, পদ্মা সেতু নির্মাণের পর তাদের মানসিকতা বদলে গেছে। পদ্মা সেতুর জন্য আজ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের আর্থসামাজিক দ্বার উন্মোচিত হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আয় দিয়ে পদ্মা সেতুকে বিচার করব না। এটা আমাদের গর্বের সেতু, টাকার অঙ্ক দিয়ে বিচারের নয়। এই একটা সিদ্ধান্ত, বাংলাদেশকে সেই মর্যাদা দিয়েছে। বাংলাদেশের জনগণ একটা মর্যাদার আসনে

অধিষ্ঠিত হয়েছে। তিনি বলেন, এই সেতু নির্মাণের ফলে বাংলাদেশের মানুষ আজ মাথা উঁচু করে সারাবিশ্বে চলতে পারে, এটি সবচেয়ে বড় পাওয়া এই সেতু থেকে। ২০৪১ সালের বাংলাদেশ হবে উন্নত সমৃদ্ধ এবং স্মার্ট- এই প্রত্যয়ে সরকারপ্রধান বলেন, লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে পাওয়া এই স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়নি। সফল হয়েছে। আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ব। বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ হিসেবে গড়ে তুলব।

পদ্মা সেতু হওয়ার সুফল বলতে গিয়ে তিনি বলেন, পদ্মাপাড়ের মানুষ আমরা সবসময় কষ্ট ভোগ করতাম আসতে-যেতে। প্রথমে ১৯৫২ সালে দাদার সঙ্গে আমরা ঢাকায় যেতে নৌকায় পার হই এই পদ্মা। চার দিন চার রাত লেগেছিল। তখন আব্বা (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) জেলে। এই যাতায়াতে কত মানুষের জীবন গেছে। বিভিন্ন সেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। আজকে আর কোনো সেবাবঞ্চিত হয় না।

শেখ হাসিনা বলেন, এই পদ্মা সেতু নির্মাণে অনেক দুর্যোগ এসেছে। অনেক ঝড়ঝাপটা পার করে পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে হয়েছে। দেশবাসী পাশে ছিল বলেই জ্ঞানী-গুণীদের বাধা সত্ত্বেও সব অতিক্রম করে পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে পেরেছি। সবাই না করেছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই জটিল স্থাপনা আমরা নির্মাণ করতে পেরেছি। সেতু নির্মাণে জড়িত সব শ্রমিক-কর্মকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতেই আমি আজ এখানে এসেছি। সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী প্রয়াত আবুল হোসেন, প্রয়াত জামিলুর রেজা চৌধুরীসহ সবাইকে স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাজানের পর বিশ্বের সবচেয়ে খরস্রোতা নদী পদ্মা। এই উত্তাল পদ্মা সেতু নির্মাণে যারা কাজ করেছে, বিভিন্ন বাহিনীর ব্যক্তি, বিশেষজ্ঞ, বিশেষ করে নির্মাণ শ্রমিকদের কৃতজ্ঞতা জানাই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাধারণত কোনো প্রকল্প শেষ হলে কোনো অনুষ্ঠান হয় না। কিন্তু পদ্মা সেতুর বিষয়টি একেবারেই আলাদা। যারা এই কাজের সঙ্গে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে ছিলেন, তাদের কৃতজ্ঞতা জানাতেই এই অনুষ্ঠান।

এমডি পদের জন্য একজন নোবেলজয়ী এত লালায়িত কেন : সরকারপ্রধান বলেন, একটা ব্যাংকের এমডির পদের জন্য একজন নোবেলজয়ী এত লালায়িত কেন, সেই প্রশ্নের উত্তর আজও পেলাম না। হুমকি দেয়া হয়েছিল, এমডি পদ না থাকলে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বন্ধ হয়ে যাবে। তিনি বলেন, পদ্মা সেতুতে কথিত দুর্নীতির প্রমাণ চেয়েছিলাম আমি। মন্ত্রী-উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে বলেছিলেন তারা। আমি করিনি। পদ্মা সেতু নিজেদের টাকায় করব। শেখ হাসিনা বলেন, ড. ইউনূসকে নিয়ে কোনো মার্কিনির কথা শুনব না। দেখাও করব না। বলে দিয়েছিলাম তাদের। এমডি পদে থাকতে পারল না বলে হিলারি ক্লিনটনের মাধ্যমে সেতুর টাকা বন্ধ করল। মালয়েশিয়া সরকার পদ্মা সেতুতে টাকা দিতে চেয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিজেদের টাকায় করেছি এটা।

শেখ হাসিনা বলেন, ক্ষমতা ছিল না বিদেশে গেছি, তখন বাংলাদেশের নামটা শুনলে কেউ জিজ্ঞাসা করত, এটা কি ভারতের কোনো অংশ? জিজ্ঞেস করত, এদেশে তো শুধু ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ¡াস, বন্যা, দুর্ভিক্ষ লেগে থাকে। মিসকিন হিসেবে আমাদের হিসেব করা হতো। যেটা আমাদের জন্য অত্যন্ত কষ্ট, ব্যথার ছিল। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীনতা। আর সেই স্বাধীন জাতি হিসেবে আমাদের মর্যাদা থাকবে না, আমরা মাথা তুলে কথা বলতে পারব না, আমাদের আত্মমর্যাদাবোধ থাকবে না, এটা কি ধরনের বাংলাদেশ?

দেশের সম্পদ বিক্রি করে উন্নয়ন চায় না আওয়ামী লীগ : দেশের সম্পদ বিক্রি করে দেশের উন্নয়ন আওয়ামী লীগ চায় না বলে মন্তব্য করেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিইনি বলে ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসতে পারিনি। বড় বড় দেশের নারাজিতে যা হয়, তাই হয়েছিল আমারও। কেননা, দেশের সম্পদ বেচতে রাজি হইনি। আমি জাতির পিতার কন্যা। দেশের সম্পদ বিক্রি করে ক্ষমতায় বসতে পারি না।

পদ্মা সেতুর উত্তর থানাসংলগ্ন মাঠে এই সমাপনী অনুষ্ঠান ও সুধী সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। এই একই মাঠে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন ও রেল সংযোগ প্রকল্পের অনুষ্ঠান হয়েছিল। গতকাল সমাপনী অনুষ্ঠান উপলক্ষে বিকাল ৩টা থেকে আমন্ত্রিত অতিথিরা অনুষ্ঠানস্থলে আসেন। বিকাল ৩টা ৫৩ মিনিটে মঞ্চে উঠেন প্রধানমন্ত্রী। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এতে সভাপতিত্ব করেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সেতু বিভাগের সচিব মো. মনজুর হোসেন। অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। প্রকল্পের বিস্তারিত তুলে ধরেন পদ্মা বহুমুখী সেতুর প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম। অনুষ্ঠানের শুরুতেই পদ্মা সেতুর থিমসং প্রচার করা হয়। এছাড়া পদ্মা সেতুর ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়। সুধী সমাবেশে সেতুমন্ত্রীর ও সেতু মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা স্মারক দেয়া হয়।

প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের ২৫ জুন পদ্মা সেতুতে যান চলাচলের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর থেকে গত দুবছর সেতুর উপর দিয়ে এক কোটি ২৭ লাখ যানবাহন পারাপার হয়েছে। গত ২৯ জুন পর্যন্ত রাজস্ব আদায় হয়েছে এক হাজার ৬৬১ কোটি টাকা। প্রতিদিন গড়ে ১৯ হাজার যান চলাচল করেছে এই সেতুতে। দৈনিক গড়ে দুই কোটি ৩০ লাখ টাকার টোল আদায় হয়েছে বলেও মন্ত্রিপরিষদের সমন্বয় ও সংস্কার বিভাগের সচিব মাহমুদুল হোসাইন খান জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) পদ্মা বহুমুখী সেতুর প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শেষ করতে মোট বরাদ্দ থেকে ১ হাজার ৮৩৫ কোটি ৬৮ লাখ টাকা কম খরচ হয়েছে। আমরা ওই টাকা নিয়ম অনুযায়ী সরকারি কোষাগারে জমা দেব।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

ঠিকানা বদল করছেন দীপিকা-রণবীর

ঠিকানা বদল করছেন দীপিকা-রণবীর

হাসানের জোড়া শিকারে দারুণ সকাল বাংলাদেশের

হাসানের জোড়া শিকারে দারুণ সকাল বাংলাদেশের

আন্দোলনের সময় হওয়া মামলা তুলে নেয়ার দাবি শিক্ষার্থীদের

আন্দোলনের সময় হওয়া মামলা তুলে নেয়ার দাবি শিক্ষার্থীদের

৪২ বছর আগের স্মৃতি ফেরালেন শান্ত

৪২ বছর আগের স্মৃতি ফেরালেন শান্ত

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App