চার বঙ্গকন্যার বিজয়ে উচ্ছ¡াস ‘বাংলা টাউনে’
স্টারমারের কেবিনেটে নেই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কেউ
প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
চার বঙ্গকন্যার বিজয়ে ‘বাংলা টাউনে’ উচ্ছ¡াস
আজিজুল আম্বিয়া, লন্ডন (যুক্তরাজ্য) থেকে : পার্লামেন্ট নির্বাচনে লেবার পার্টির জয়ের পর রাজা চার্লস আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়েছেন দলটির নেতা স্যার কের স্টারমারকে। গতকাল শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী ও সরকার গঠনের দায়িত্ব পাওয়ার নতুন মন্ত্রিসভা গঠন শুরু করেছেন তিনি। ডাউনিং স্ট্রিটে ডাক পাচ্ছেন লেবার নেতারা। গতরাতে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নির্বাচনে জয়ী কোনো ব্রিটিশ-বাংলাদেশি এমপিকে মন্ত্রিসভার দায়িত্ব নেয়ার জন্য ডাকা হয়নি।
স্টারমারের নতুন মন্ত্রিসভায় গুরুত্বপূর্ণ পদ পাওয়া মন্ত্রীদের মধ্যে অ্যাঞ্জেলা রায়নার ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী, র্যাচেল রিভস চ্যান্সেলর, জন হ্যালি প্রতিরক্ষামন্ত্রী, ডেভিড ল্যামি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ইভেট কুপার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, জনাথন রেনল্ডস বাণিজ্যমন্ত্রী, ব্রিজেপ ফিলিপসন শিক্ষামন্ত্রী, ওয়েস স্ট্রিটিং স্বাস্থ্যমন্ত্রী, লিজ কেন্ডাল কর্মসংস্থান ও পেনশনমন্ত্রী, পিটার কাইল বিজ্ঞানমন্ত্রী, লুইস হেই পরিবহনমন্ত্রী, শাবানা মাহমুদ আইনমন্ত্রী ও এড মিলিব্যান্ড জ্বালানিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন।
লেবার পার্টির নতুন মন্ত্রিসভায় এখন পর্যন্ত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত চার এমপির কাউকে ডাকা হয়নি। ব্রিটেনজুড়ে এবার সর্বোচ্চ সংখ্যক ৩৪ জন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বিভিন্ন আসনে প্রার্থী হয়েছিলেন। কিন্তু শেষ
পর্যন্ত গত নির্বাচনে বিজয়ী সেই চারজন ছাড়া আর কেউ জয়ী হতে পারেননি। ব্যালটে প্রমাণ হয়েছে, এবারের নির্বাচনে নতুন কোনো বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থী এমপি হতে ব্যর্থ হয়েছেন।
ব্রিটিশ-বাংলাদেশিরা এখনো যুক্তরাজ্যে কোনো মন্ত্রী পায়নি। কমিউনিটিতে এবার আশা ছিল, লেবার পার্টির মন্ত্রিসভায় প্রথমবারের মতো অন্তত একজন বাংলাদেশি ঠাঁই পেতে পারেন।
বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে ক্রয়েডন কাউন্সিলে লেবার গ্রুপের চেয়ার কাউন্সিলার মো. ইসলাম বলেন, ১৪ বছর পর আমাদের দল ক্ষমতায় এসেছে। এই পরিস্থিতিতে মন্ত্রিসভার শুরুতে সবচেয়ে যোগ্যরা স্থান পাবেন, সেটাই স্বাভাবিক। তবে কেবিনেটে না হলেও অন্য মন্ত্রিসভার পদগুলোতে বাংলাদেশি এমপিদের সিনিয়ররা জায়গা পাবেন বলে আমরা আশাবাদী। ব্যক্তিগতভাবে আমি মন্ত্রিসভার পরবর্তী পুনর্বিন্যাস পর্যন্ত আশাবাদী।
যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট নির্বাচনে জয়লাভ করেছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ৪ প্রার্থী। টানা চতুর্থবার বিজয়ী হয়েছেন বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি টিউলিপ সিদ্দিক। টানা পঞ্চমবার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন রুশনারা আলী। আফসানা বেগম দ্বিতীয়বার জয়লাভ করেছেন। আর টানা চতুর্থবার জয়ী হয়েছেন ড. রূপা হক। তারা সবাই বিরোধী লেবার পার্টির প্রার্থী। ৪ বাঙালি কন্যার বারবার বিজয়ে ব্রিটিশ বাঙালিরা গর্বিত। যুক্তরাজ্যে প্রায় ১০ লাখ বাঙালি রয়েছেন। তারা এই জয়ের জন্য আনন্দ করছেন।
রুশনারা আলী, টিউলিপ সিদ্দিক এবং রূপা হক পূর্বে ছায়া মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এ কারণে তাদের অভিজ্ঞতার কমতি নেই। এবার লেবার সরকার গঠন হচ্ছে, তাই তাদের ক্যাবিনেটে মন্ত্রী হওয়ার জন্য ডাক পড়তে পারে- এমন আশা ছিল অনেকেরই।
টিউলিপ সিদ্দিক : উত্তর-পশ্চিম লন্ডনের হ্যামস্টেড অ্যান্ড হাইগেট আসনে মোট ২৩ হাজার ৪৩২টি ভোট পেয়েছেন টিউলিপ। এই আসনে প্রতিদ্ব›দ্বী কনজারভেটিভ পার্টির ডন উইলিয়ামস ভোট পেয়েছেন মাত্র ৮ হাজার ৪৬২টি। জয়ের প্রতিক্রিয়ায় টিউলিপ সিদ্দিক বলেন, সবাইকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আপনাদের দোয়ায় আমি চতুর্থবার নির্বাচিত হলাম। আমাদের বাংলাদেশি কমিউনিটি আমাকে সবসময় সাপোর্ট করে। আমি খুব গ্রেটফুল, এই বারও তারা আমাকে সাপোর্ট করেছেন।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা ৪১ বছর বয়সি টিউলিপকে লেবার পার্টির অভ্যন্তরে নতুন প্রজন্মের তুমুল সম্ভাবনাময় রাজনীতিবিদ হিসেবে দেখছেন। ২০১৫ সালের নির্বাচনে লেবার পার্টির নিরাপদ বা ‘সেফ সিট’ নয় এমন আসনে মনোনয়ন পেয়ে প্রথমবারই বাজিমাত করেন টিউলিপ। দুবার পার্টির ছায়া মন্ত্রিসভায় স্থান পান তিনি।
বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা ও শফিক সিদ্দিকীর মেয়ে টিউলিপ লন্ডনের মিচামে জন্মগ্রহণ করেন। টিউলিপের শৈশব কেটেছে বাংলাদেশ, ভারত ও সিঙ্গাপুরে। লন্ডনের কিংস কলেজ থেকে পলিটিক্স, পলিসি ও গভর্মেন্ট বিষয়ে তার স্নাতকোত্তর ডিগ্রি রয়েছে।
রুশনারা আলী : লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটসের বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো আসন থেকে এবারের নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন রুশনারা আলী। তিনি পেয়েছেন ১৫ হাজার ৮৯৬ ভোট। তার নিকটতম স্বতন্ত্র প্রার্থী আজমল মাশরুর পেয়েছেন ১৪ হাজার ২০৭ ভোট। ৪ হাজার ৭৭৭ ভোটে তৃতীয় হয়েছেন লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী রাবিনা খান। এ আসনের অপর দুই স্বতন্ত্র বাংলাদেশি প্রার্থী স্যাম উদ্দীন ৩২৫ এবং মো. সুমন আহমদ ৩১৫ ভোট পেয়েছেন।
যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের প্রথম বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এমপি রুশনারা আলী। ২০১০ সালে তিনি প্রথমবার এমপি নির্বাচিত হন। সেবার আন্তর্জাতিক উন্নয়নবিষয়ক ছায়ামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন রুশনারা। এরপর তিনি ২০১৩ সালে ছায়া শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী নিযুক্ত হন।
আফসানা বেগম : পপুলার অ্যান্ড লাইম হাউস আসন থেকে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোটের ব্যবধানে দ্বিতীয়বার বিজয়ী হয়েছেন লেবার পার্টির আফসানা বেগম। মোট ১৮ হাজার ৫৩৫ ভোট পেয়েছে তিনি। আফসানার প্রতিদ্ব›দ্বী গ্রিন পার্টির নাথালি সিলভিয়া বিনফাইট ৫ হাজার ৯৭৫, কনজারভেটিভ পার্টির ফ্রেডি ডউনিং ৪ হাজার ৭৩৮, স্বতন্ত্র প্রার্থী আফসানার সাবেক স্বামী এহতেশামুল হক ৪ হাজার ৫৫৪ ভোট পেয়েছেন।
টাওয়ার হ্যামলেটসের শ্যাডওয়েলে আপসানার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। বাংলাদেশে তার বাবার বাড়ি সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে। আফসানার বাবা মনির উদ্দিন টাওয়ার হ্যামলেটসের কাউন্সিলর ছিলেন।
ড. রূপা হক : লন্ডনের ইলিং সেন্ট্রাল ও অ্যাক্টন আসনে লেবার পার্টির মনোনয়নে ড. রূপা হক ২২ হাজার ৩৪০ ভোট পেয়েছেন। তার প্রতিদ্ব›দ্বী কনজারভেটিভ পার্টির জেমস উইন্ডসর ক্লাইভ পেয়েছেন ৮ হাজার ৩৪৫ ভোট। পুরোদস্তুর রাজনীতিতে নাম লেখানোর আগে ৫২ বছর বয়সি এই ব্রিটিশ বাংলাদেশি কন্যা লন্ডনের কিংসটন বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞানে শিক্ষকতা করতেন। কিংসটন ইউনিভার্সিটিতে সর্বশেষ সিনিয়র লেকচারার হিসেবে কর্মরত ছিলেন এই কলামিস্ট ও লেখক।
১৯৭০ সালে বাংলাদেশ থেকে ব্রিটেনে আসা মোহাম্মদ হক ও রওশন আরা হক দম্পতির তিন কন্যার মধ্যে বড় রূপা হক। তার বাবার বাড়ি পাবনা শহরের কুঠিপাড়ায়। সাদামাটা জীবনযাপন ও বিনয়ী ব্যবহারের জন্য সবার প্রিয় তিনি।