×

প্রথম পাতা

যান্ত্রিকীকরণ-সমবায়ভিত্তিক কৃষির পথে এগোচ্ছে দেশ

Icon

প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

যান্ত্রিকীকরণ-সমবায়ভিত্তিক কৃষির পথে এগোচ্ছে দেশ

হরলাল রায় সাগর : পাশাপাশি কৃষি জমির মালিক বা চাষিদের নিয়ে করা হবে একটি দল (গ্রুপ)। তাদের নিয়েই গঠন করা হবে সমবায়। দলে ৫০ জন কৃষক বা তার বেশি হতে পারে। আর এক দলের কৃষকদের আওতায় থাকবে ৫০ একরেরও বেশি জমি। এ জমিতে একই সময়ে একই জাতের অথবা একই সময়ে উৎপাদন হয় এমন ফসল চাষাবাদ করা হবে। সমান তালে চলবে ফসলের চাষ, আধুনিক ব্যবস্থাপনা। ক্ষেতের ফসল একসঙ্গে পাকবে বা তোলার উপযোগী হবে। এ পদ্ধতিতে জমি চাষাবাদের প্রতিটি স্তরে থাকবে বিদ্যমান আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহার। শুধু চাষ নয়, ধানসহ ফসল রোপণ করা, পরিচর্যা, সেচ-সার-বালাইনাশক প্রয়োগ, ফসল তোলা বা কাটা, ঝাড়াই-মাড়াইসহ সব কিছু হবে যন্ত্রের মাধ্যমে। কৃষক সমবায় দলকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ আর্থিক সহায়তা দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এটাই হলো সমলয় ও সমবায়ভিত্তিক কৃষি উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনার ধরন। এ পদ্ধতিতে বদলে যাচ্ছে দেশের ফসল উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম।

কৃষি খাতে উদ্ভূত বাস্তব পরিস্থিতি ও ক্রমবর্ধমান খাদ্য চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়নে সমবায়ভিত্তিক কৃষি উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। যা বস্তবায়নে কার্যক্রম শুরু করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। এর একটি অংশ হচ্ছে কৃষির সমলয় পদ্ধতির চাষাবাদ। ইতোমধ্যে চাষাবাদ শুরু হয়েছে এবং এ সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়নের কাজও চলছে। সরকারের নেয়া এ পদ্ধতি বাস্তবায়ন হলে সনাতনী কৃষি ব্যবস্থা থেকে বাণিজ্যিক ও যান্ত্রিক কৃষিতে রূপান্তর ঘটবে। ফলন বাড়াতেও যুক্ত করা হবে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার। এতে চাষাবাদে খরচ কম হবে। শ্রমশক্তি কমবে, শস্যের উৎপাদন বা ফলন হবে বেশি। কৃষক আত্মনির্ভরশীল হবে, তৈরি হবে উদ্যোক্তা। কৃষি খাত আরো সমৃদ্ধ হবে বলে মনে করছেন কৃষিবিদ ও কৃষি প্রকৌশলীরা।

চ্যালেঞ্জ : জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা কারণে দেশের কৃষি এখন বহুমুখী চ্যালেঞ্জে পড়েছে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন, দ্রুত নগরায়ন ও শিল্পায়নের কারণে দেশের কৃষি জমি কমে যাচ্ছে। কৃষি জমির মালিকানা কমে যাচ্ছে; অর্থাৎ মালিকানা কৃষকের হাতে থাকছে না। অনিয়মিত কৃষকের সংখ্যা বাড়ছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসেবে, কমতে কমতে দেশে আবদযোগ্য জমির পমিাণ দাঁড়িয়েছে ৮৮ লাখ ২৯ হেক্টরে।

এখনো ৪ লাখ ৩১ হেক্টর জমি পতিত পড়ে আছে। কমে গিয়ে বর্তমানে কৃষি পরিবারের সংখ্যা এক কোটি ৬৮ লাখ ৮১ হাজার ৭৫৭-এ ঠেকেছে। দেশের জনসংখ্যা বাড়ছে। এ পরিস্থিতিতে বাড়তি মানুষের খাদ্য ঠিক রাখতে শতভাগ যন্ত্রের ব্যবহার বা আধুনিক কৃষি ব্যবস্থাপনা শতভাগ নিশ্চিত করা ছাড়া বিকল্প নেই। পাশাপাশি শস্যের উন্নত জাত কিংবা ঘাত সহিষ্ণু জাত যেমন- খরা, তাপমাত্রা, লবণাক্ততা, বন্যা ও জলমগ্ন সহিষ্ণু জাত উদ্ভাবনে নতুন প্রযুক্তি দরকার। এজন্য দক্ষ বিজ্ঞানী সৃষ্টিরও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

বিদ্যমান কৃষক দল : কৃষি সংস্থাগুলো সূত্রে জানা গেছে, দেশে ইতোমধ্যে বিভিন্ন ধরনের কৃষিভিত্তিক কৃষক সমবায় সংগঠন রয়েছে। বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের (বিআরডিবি) আওতায় দেশের প্রত্যেক জেলা-উপজেলায় কৃষি সমবায় গ্রুপ রয়েছে। একইভাবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) আওতায় নিরাপদ সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যে আইপিএম গ্রুপ, পুষ্টি জাতীয় ফল উৎপাদনের লক্ষ্যে সিআইজি বা আইসিএম গ্রুপ, আইএফএমসি ও এনএটিপিসহ মাঠ পর্যায়ে কৃষিভিত্তিক বিভিন্ন ধরণের কৃষক দল বা সংগঠন রয়েছে। অর্থাৎ মাঠ পর্যায়ে বিদ্যমান কৃষক গ্রুপগুলো একেকটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যভিত্তিক সৃষ্টি করা হয়েছে। বিআরডিবি জানিয়েছে, সারাদেশে সংস্থাটির অন্তত ৫০ হাজার কৃষক সমবায় সমিতি রয়েছে। তবে এর মধ্যে পাঁচভাগের প্রায় চারভাগ সমিতিই অকার্যকর। সংশ্লিষ্ট গ্রুপ গঠনের মূল উদ্দেশ্য প্রদর্শনী আকারে নিরাপদ সবজি বা ফল বাগান করে মাঠ স্কুলের মাধ্যমে চাষাবাদের কলাকৌশলসমূহ কৃষকদের মধ্যে সম্প্রসারণ করা। অবশ্য এসব কৃষক দলগুলোর সদস্যরা সবাই পাশাপাশি জমির মালিক নন।

কৃষি শ্রমশক্তি ও পশুশক্তি কমছে, বাড়ছে শিল্প শ্রমশক্তি : সাম্প্রতিককালে কৃষি শ্রমিকের সংখ্যা কমছে। এক সময়ে মাঠে-কৃষি কাজে দেশের ৮০ শতাংশ জনশক্তি নিয়োজিত ছিল। বর্তমানে তা কমে ৪৫ দশমিক ৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে বলে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর শ্রমশক্তির সমীক্ষায় (২০২২) উঠে এসেছে। সমীক্ষার তথ্যানুযায়ী, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে কৃষি খাতে শ্রমশক্তি ছিল ৩ কোটি ১৭ লাখ ৮০ হাজার। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে কৃষকের সংখ্যা ছিল ৩ কোটি ৩৩ লাখ ৬০ হাজার। বছরের ব্যবধানে কৃষকের সংখ্যা কমেছে ১৫ লাখ ৮০ হাজার।

বাংলাদেশে শিল্প-কারখানা ও নগরায়নের দ্রুত বিকাশ ঘটছে। এতে কৃষি প্রকৌশলীরা আশঙ্কা করছেন, ২০৩০ সাল নাগাদ কৃষি শ্রমিকের ২০ শতাংশ শিল্প শ্রমিকে রূপান্তর হবে। ফলে কৃষি শ্রমিক দাঁড়াবে ২৫ শতাংশে। ইতোমধ্যে দেশে একশত অর্থনৈতিক অঞ্চল করা হয়েছে। গড়ে উঠছে শিল্প-কারখানা। এতে ব্যাপক চাহিদা তৈরি হচ্ছে শ্রমিকের। যা এক সময়ের ঐতিহ্য কৃষির জন্য এক অশনি সংকেত। বর্তমানেই মাঠে কৃষি শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। গত কয়েক বছর ধরে কৃষি শ্রমিকের অভাব প্রচণ্ডভাবে দৃশ্যমান হয়েছে। ধীরে ধীরে প্রান্তিক ও ভূমিহীন শ্রেণির জনশক্তি শিল্প শ্রমে চলে যাবে। তখনই টিকে থাকার লড়াইয়ে সমবায়ভিত্তিক কৃষি উদ্যোক্তা তৈরি হবে বলে আশা করছেন কৃষিবিদ ও কৃষি প্রকৌশলীরা।

যেতে হবে যন্ত্রশক্তিতে : ইতোমধ্যে কৃষিতে পশুশক্তির ব্যবহারও অনেক কমে গেছে। এর জায়গায় চলে এসেছে নানা ধরণের যন্ত্রশক্তি। এ পরিস্থিতিতে কৃষি প্রধান বাংলাদেশের ফসল উৎপাদন ব্যবস্থাকে সচল রাখতে ঘাটতি শ্রমিকের শ্রমশক্তি ও পশুশক্তির রূপান্তর যন্ত্রশক্তির মাধ্যমে হতে হবে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ভবিষ্যৎ বাস্তবতা অনুধাবন করেই দূরদৃষ্টিসম্পন্ন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৃষিতে যন্ত্রশক্তির ব্যবহার ও সমবায়ভিত্তিক চাষাবাদ ব্যবস্থা কার্যক্রম গ্রহণ করেছেন। কৃষিতে শুধু আধুনিকায়নই নয়; ফসলের বেশি ফলনেও প্রযুক্তির সম্মিলন ঘটাতে চান তিনি। গত ২১ মে গণভবনে অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিনেটর পেনি ওং সৌজন্য সাক্ষাৎকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের কৃষি উৎপাদন বাড়াতে অস্ট্রেলিয়ার প্রযুক্তিগত সহযোগিতা কামনা করেন।

কয়েকজন কৃষি প্রকৌশলী জানান, দেশের কৃষিতে বর্তমানে যন্ত্রশক্তির ব্যবহার প্রতি একরে ৩ দশমিক ১ কিলোওয়াট প্রায়। সরকার কৃষি ও গবেষণায় বিনিয়োগ বাড়িয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৮ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর কৃষিতে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়। এ লক্ষ্যে ২০০৯ সাল থেকে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্প হাতে নেয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। এ প্রকল্পের পরিধি আরো বাড়ানো হয়েছে। চলমান প্রকল্পেই বর্তমানে ৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি বরাদ্দ করা হয়েছে। ভর্তুকি মূল্যে যন্ত্রপাতি দেয়ার এ প্রকল্পে সীমাহীন দুর্নীতির খবর প্রকাশিত হলেও সুফলও ভোগ করছেন কৃষকরা। এছাড়া টেকসই ও বাণিজ্যিক কৃষি নিশ্চিতে ইতিহাসের বড় প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকার ‘প্রোগ্রাম অন অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড রুরাল ট্রান্সফরমেশন ফর নিউট্রিশন এন্টারপ্রেনরশিপ অ্যান্ড রেসিলিয়েন্স (পার্টনার)’ প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে।

কৃষি প্রকৌশলীরা জানান, যে দেশ কৃষিতে যত উন্নত, সেই দেশের কৃষিতে প্রতি একরে যন্ত্রপাতির ব্যবহার বেশি। উন্নত দেশের সমবায়ভিত্তিক কৃষির ক্ষেত্রে দেখা যায়, একটা সেবা কেন্দ্রের মাধ্যমে সব ধরনের কৃষি উৎপাদন সংশ্লিষ্ট যান্ত্রিক ও অন্যান্য ব্যবস্থাপনায় ভাড়াভিত্তিক (কাস্টম হেয়ারি) সেবা দেয়ার সুযোগ রয়েছে। এটি সম্ভব সংশ্লিষ্ট অধিকাংশ দেশে কৃষি জমি নিয়ন্ত্রণকর্তা রাষ্ট্র। কিন্তু আমাদের দেশের কৃষকরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রান্তিক, ভূমিহীন, বর্গাচাষি ও ক্ষুদ্র চাষি। কাজেই ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি হওয়ায় কৃষক তার পছন্দ মতো ফসল উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনা করে থাকেন। তবে সনাতনী ব্যবস্থা থেকেও তারা বেরিয়ে আসছেন। এক্ষেত্রে সমস্যাসমূহ থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে কৃষি মন্ত্রণালয় ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর শ্রমশক্তি ও পশুশক্তির বিকল্প হিসাবে ফসল মাঠভিত্তিক বিস্তর জমির চাষ কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। অর্থাৎ আইল উঠিয়ে দিয়ে খণ্ড খণ্ড জমি একত্র করে সংশ্লিষ্ট কৃষকদের নিয়ে একই জাতীয় ফসল, একই সময়ে (সমলয়) চাষাবাদের মাধ্যমে উৎপাদন ব্যবস্থার সব স্তরে কৃষি যন্ত্র ব্যবহার করা হবে। এতে উৎপাদন ব্যয় কমবে, ফসলের গুণগত মান বাড়বে এবং উৎপাদন বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ইতোমধ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সমলয় পদ্ধতিতে চলতি বছরে বোরো ও আউশ ধান চাষ বাস্তবায়ন করছে। এর মধ্যে ৬৪ জেলায় বোরোতে ১২২টি এবং আউশে ৪০টি ব্লকে চাষাবাদ হচ্ছে। এছাড়া একটি প্রকল্পের মাধ্যমে ১০টি গ্রামে ১০টি সমিতি গঠন করে ৫০ একর করে ১০টি প্লটে ফসল চাষাবাদের উদ্যোগ নিয়েছে সমবায় অধিদপ্তর।

বিশেষজ্ঞদের মতামত : এ বিষয়ে সাবেক কৃষি সচিব আনোয়ার ফারুক ভোরের কাগজকে বলেন, কৃষিতে ভালো হয় কমিউনিটি অ্যাপ্রোচে কাজ করা। যেমন- যারা মাছ চাষ করে তাদের নিয়ে একটি গ্রুপ করা, যারা ধান চাষ করবে, যারা সবজি চাষ করবে, যারা বিপণন করবে, এভাবে আলাদা আলাদ দল বা সংগঠন করতে হবে। এ পদ্ধতিটা সমবায়ের কাছাকাছি, তবে বাণিজ্যিক হতে হবে। কারণ লাভ না থাকলে কেউ এ সংগঠনে যাবে না, সুবিধা না হলে কোনো কৃষক টাকা বিনিয়োগ করবে না। তিনি বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও কমিউনিটি অ্যাপ্রোচ সফল হয়েছে।

আনোয়ার ফারুক বলেন, কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণের জন্য সমলয় চাষাবাদ খুবই সফল হতে পারে। এ উদ্যোগটা অত্যন্ত ভালো; কার্যকর হবে, যদি এটা যথাযথভাবে ব্যবস্থাপনা করা যায়। এ পদ্ধতিতে উৎপাদন বাড়বে। কিন্তু বিপণন ব্যবস্থায় সুবিধা হবে না। বিপণন সমস্যা থেকেই যাবে। আর মার্কেটিং যদি করতেই হয়; সেক্ষেত্রে কো-অপারেটিভগুলোকে বাণিজ্যিকভাবে উন্নীত করতে হবে। এজন্য সরকারকে কো-অপারেটিভ আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন করে কীভাবে কমিউনিটি অ্যাপ্রোচে নেয়া যায় সে বিষয়ে দেখতে হবে। এটা স্বেচ্ছাসেবী হিসাবে না করে বাণিজ্যিক সংগঠন হিসেবে করলে কৃষকরা ব্যবসা করে খেতে পারবেন। এতে তারা ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার সুযোগ পাবেন। কিন্তু সমবায় সংগঠনকে ঋণ দেয়ার কোনো সুযোগ নাই।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) মহাপরিচালক কৃষিবিদ বাদল চন্দ্র বিশ্বাস ভোরের কাগজকে বলেন, বঙ্গবন্ধুর সমবায়ভিত্তিক কৃষি ব্যবস্থাপনার চেতনাটা বাস্তবায়ন করা যায় কিনা সে বিষয়ে প্রাথমিক নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিআরডিবিতে বিদ্যমান সমবায় গ্রুপের সঙ্গে যৌথভাবে সাধারণ কৃষিতেও কৃষকদের সংগঠিত (সমবায়) করে যান্ত্রিক সহযোগিতা ও প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। কোন জায়গায়, কোন আদলে করতে পারি- এটা চিন্তার মধ্যে আছে। ডিএই তো আলাদাভাবে সমবায়ের মতোই সমলয়ের মাধ্যমে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। এছাড়া আরো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জায়গায় গ্রুপ করে; যেমন, ট্রেতে চারা উৎপাদন, ধান রোপণ ও ধান কাটা (এসব যন্ত্র আছে) প্রভৃতি করা যেতে পারে। কৃষি বিভাগের আলাদাভাবে এ আদলে সমবায় কার্যক্রমের চিন্তাভাবনা চলছে। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে একটি সভা হয়েছে। এখন বিআরডিবির সঙ্গে বসে গুছিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পের উপপ্রকল্প পরিচালক কৃষি প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম শেখ বলেন, যদি ফসল উৎপাদনে মাঠের চাষাবাদ সংশ্লিষ্ট কৃষকদের নিয়ে সমবায়ভিত্তিক গ্রুপ গঠন করে বিভিন্ন ধরনের কারিগরি ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা দেয়া যায়; তাহলে কৃষি সমবায় দল গঠনের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনা লাভজনক ও বাণিজ্যিকীকরণ সম্ভব হবে। দলটি অবশ্যই ফসল উৎপাদনে একই জায়গার অর্থাৎ পাশাপাশি জমির কৃষক, বর্গাচাষি বা মালিকদের নিয়ে করতে হবে। এতে যে সুবিধা পাওয়া যাবে তা হলো- সরকার বিপুল অঙ্ক ভর্তুকি দিলেও একজন কৃষকের পক্ষে সব ধরনের যন্ত্র কেনা সম্ভব নয়; তাই দলবদ্ধভাবে সব যন্ত্র কেনা সহজ হবে। এজন্য যন্ত্র ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণের প্রশিক্ষণ দিয়ে কৃষকদের দক্ষ করে গড়ে তোলা হবে বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর ভোরের কাগজকে বলেন, কৃষিতে যন্ত্রের ব্যবহার করা হলেও নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে সঠিকভাবে এগুনো যাচ্ছে না। কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণের দিকে যেতে হলে সমলয় পদ্ধতির চাষাবাদে যেতে হবে। কারণ যন্ত্রগুলো ক্ষেতে নেয়ার জন্য পর্যাপ্ত রাস্তা ও ক্ষেত থাকে না। যন্ত্রের অনেক দাম থাকায় তা ধনী কৃষক বা অন্যদের হাতে চলে যায়। প্রান্তিক বা সত্যিকারের কৃষক এ সুবিধা নিতে পারছে না। এসব অভিজ্ঞতা থেকে কৃষকদের সংগঠিত করে সমলয় চাষাবাদে যাওয়া হচ্ছে। আর সমলয়ে গেলে তা সমবায়ভিত্তিক হতে হবে। এটা সঠিকভাবে করতে পারলে কৃষির উৎপাদন যেমন বাড়বে, তেমন লাভজনক ও বাণিজ্যিক হবে। তিনি বলেন- জাপান, ভারত, কোরিয়া, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ায় সমলয় ও সমবায় পদ্ধতিতে চাষাবাদ করছেন কৃষকরা। তাদের পদ্ধতিগুলো স্টাডি করছি। এ বিষয়ে সাধারণ মানুষকে স্পষ্ট ধারণা দিতে হবে, তাদেরকে যুক্ত করতে হবে। অল্প জায়গায় বেশি মানুষের খাদ্য যোগন দিতে কৃষিতে এ পদ্ধতি উৎকৃষ্ট হবে হবে বলে প্রত্যাশা তার।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

১৩ সেপ্টেম্বর: সারাদিন যা যা ঘটলো

১৩ সেপ্টেম্বর: সারাদিন যা যা ঘটলো

ডোনাল্ড লু’র নেতৃত্বে আজ ঢাকায় আসছে মার্কিন প্রতিনিধিদল

ডোনাল্ড লু’র নেতৃত্বে আজ ঢাকায় আসছে মার্কিন প্রতিনিধিদল

রাজধানীতে ট্রাফিক পুলিশকে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাত

রাজধানীতে ট্রাফিক পুলিশকে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাত

বিএনপি নেতা আশফাকের নেতৃত্বে বায়রার ইসি বৈঠকে হামলা-ভাঙচুর

বিএনপি নেতা আশফাকের নেতৃত্বে বায়রার ইসি বৈঠকে হামলা-ভাঙচুর

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App