উত্তরাঞ্চলে নদনদীতে বাড়ছে পানি আবারো
প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
হাসান গোর্কি, রংপুর থেকে : ভারি বৃষ্টিপাতের ফলে উত্তরাঞ্চলে তিস্তাসহ বিভিন্ন নদনদীর পানি আবারো বাড়ছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় উত্তরাঞ্চল ও এর উজানে ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টিপাত হতে পারে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
জানা গেছে, উজানের পাহাড়ি ঢলে গতকাল সোমবার রংপুরে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এতে গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল, চর ও দ্বীপ চরের কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় রংপুরের কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি কিছুটা কমে বিপৎসীমার ৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। লালমনিরহাটে তিস্তা নদীর পানি তিস্তা ব্যারাজ এলাকার ডালিয়া পয়েন্টে ৫ সেন্টিমিটার কমে সন্ধ্যা ছয়টায় বিপৎসীমার ৪৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। এর আগে দুপুরে সেখানে পানিপ্রবাহ ছিল বিপৎসীমার ৪৩ সেন্টিমিটার নিচে।
এছাড়া কুড়িগ্রামে তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যা হতে পারে। ইতোমধ্যে নিম্নাঞ্চলসমূহে পানি উঠতে শুরু করেছে। তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার অতিক্রম করলেও দুধকুমার ও ধরলা নদীর পানিও বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে।
দুধকুমার নদের পানি পাটেশ্বরী পয়েন্টে ৯ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৩৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে ও ধরলা নদীর পানি শিমুলবাড়ি পয়েন্টেও ১৫ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ১৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এসব এলাকার মানুষজন আবার দ্বিতীয় দফা বন্যার আশঙ্কায় রয়েছেন। নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে আবাদি ফসল। বৃষ্টি এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে গাইবান্ধায় সব কয়টি নদীর পানি বেড়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় তিস্তা নদীর পানি সুন্দরগঞ্জ পয়েন্টে ৮ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এছাড়া যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট, করতোয়া নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় ১০২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় আবহাওয়া অফিস। জুনে রংপুরে এবার স্বাভাবিকের চেয়ে ৮৫ মিলিমিটার বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। আবহাওয়া অফিস জানায়, জুন মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৪১৮ মিলিমিটার, তবে বৃষ্টিপাত হয়েছে ৫০৩ মিলিমিটার। এ মাসে মোট ১৯ দিন বৃষ্টিপাত হয়েছে এর মধ্যে ১৯ জুন সবচেয়ে বেশি ১২১.৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে গতকাল সোমবার তিস্তা নদীর ভাঙন ও বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তরাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মাহবুব রহমানের নেতৃত্বে প্রকৌশলীরা গঙ্গাচড়া উপজেলার কোলকোন্দ ইউনিয়নের বিনবিনার চর, মটুকপুর, চিলাখাল, নোহালী ইউনিয়নের চর নোহালী, মিনাবাজারসহ তিস্তার ভাঙন ও বন্যাকবলিত বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন। এ সময় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম ও স্থানীয় প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
গত ১৫ দিন ধরে উজানের পাহাড়ি ঢলে নদীর পানি বাড়া-কমায় গঙ্গাচড়ায় নদী তীরবর্তী এলাকার মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল ও ঘরবাড়ি ভাঙন হুমকির মুখে পড়েছে।