×

প্রথম পাতা

ডানপন্থিদের উত্থানে ইউরোপে উদ্বেগ

ফ্রান্সের নির্বাচনে কট্টর ডানদের ঐতিহাসিক জয়

Icon

প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

 ডানপন্থিদের উত্থানে ইউরোপে উদ্বেগ

কাগজ ডেস্ক : ইউরোপীয় পার্লামেন্ট নির্বাচনের পর এবার ফ্রান্সের পার্লামেন্ট নির্বাচনের প্রথমপর্বে ন্যাশনাল র‌্যালির (আরএন) ঐতিহাসিক সাফল্য এই মহাদেশে চরম ডানপন্থিদের পুনরুত্থানের আশঙ্কা ঘনীভূত করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের দুটি প্রধান দেশ ফ্রান্স ও জার্মানিতে অতি ডানপন্থিদের নাটকীয় উত্থান গোটা ইউরোপের জাতীয় রাজনীতিতে চরম ডানপন্থিদের উজ্জীবিত করেছে। এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের সম্ভাব্য বিজয় ইইউজুড়ে জাতীয়তাবাদী ও জনতুষ্টিবাদীদের উৎসাহিত করবে বলে অনেকে মনে করছেন।

গত রবিবার ফ্রান্সের পার্লামেন্ট নির্বাচনের প্রথম পর্বে অভিবাসনবিরোধী ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সমালোচক মেরিন লো পেনের কট্টর ডানপন্থি দল ন্যাশনাল র‌্যালি (আরএন) জয়ী হয়ে ঐতিহাসিক সাফল্য অর্জন করেছে। তবে নির্বাচনের দুই পর্ব মিলিয়ে শেষ পর্যন্ত আরএন জয় পাবে কিনা, তা আগামী সপ্তাহের রান-অফ ভোটের আগের দিনগুলোতে হতে যাওয়া রাজনৈতিক সমঝোতার ওপর নির্ভর করছে। ফ্রান্সে আরএন নেতৃত্বাধীন সরকার এলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) কোন দিকে যাবে তা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠবে। কারণ ইইউয়ের আরো একত্রীকরণে বাধা দেবে তারা। পাশাপাশি তখন ইইউয়ের ব্যয় পরিকল্পনায় তহবিল জোগানো নিয়েও সংকট তৈরি হতে পারে।

ইইউ নির্বাচনে ডানপন্থিদের কাছে ধরাশায়ী হয়ে আগাম জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণা দেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। উদারপন্থি পণ্ডিতরা এরই মধ্যে ম্যাক্রোঁর এই ঘোষণাকে একটি জুয়া হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তারা ২০১৬ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের ব্রেক্সিট নিয়ে গণভোট করার ও আগাম নির্বাচন দেয়ার সিদ্ধান্তের সঙ্গে ম্যাক্রোঁর আগাম নির্বাচন দেয়াকে তুলনা করেছেন।

ম্যাক্রোঁর মতো জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজের জন্যও এই নির্বাচন দুঃসংবাদ হয়ে এসেছে। নির্বাচনে তার সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি সবচেয়ে বাজে ফল করেছে। অতি ডানপন্থি অলটারনেটিভ ফর জার্মানি (এএফডি) ১৬ শতাংশ ভোট পেয়ে দেশটির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজের দল সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটকে পেছনে ফেলে দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে। অবশ্য ভালো ফল করেছে ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির দল।

অভিবাসীবিরোধী এডিএফ সাবেক পূর্ব জার্মানিতে ও তরুণ ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক সমর্থন পেয়েছে। দলটি এতটাই উগ্র ও প্রতিক্রিয়াশীল যে লো পেনের ন্যাশনাল র‌্যালির মতো চরম ডানপন্থি দলের পক্ষেও তাদের কিছু চরমপন্থি অবস্থান ও বক্তব্য অনুমোদন করা সম্ভব হয় না। ন্যাশনাল র?্যালি স¤প্রতি ইউরোপীয় পার্লামেন্টে আইডেনটিটি অ্যান্ড ডেমোক্র্যাসি (আইডি) গ্রুপিং থেকে জার্মানির এই দলের বহিষ্কারের দাবি করেছে, কারণ দলটির এক বড় নেতা আংশিকভাবে হিটলারের কার্যক্রম সম্পর্কে ইতিবাচক মন্তব্য করেছিলেন।

বিংশ শতাব্দীতে ইউরোপে নাৎসি জার্মানি আর ফ্যাসিস্ট ইতালির বিরুদ্ধে যে ব্যাপক যুদ্ধ হয়েছিল- তারপর সেখানে বেশির ভাগ ভোটারের মনে এ করকম অনুভূতি তৈরি হয়ে যায় যে, চরম ডানপন্থিদের আর কখনো ভোট দেয়া যাবে না। মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলো উগ্র ডানপন্থি দলগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা করতে অস্বীকার করত। কিন্তু সেসব পুরনো ‘ট্যাবু’ এখন আস্তে আস্তে কেটে যাচ্ছে।

মনে হচ্ছে, জাতীয়তাবাদী ও জনতুষ্টিবাদীরা ইইউ সদস্য রাষ্ট্রগুলোয় ও ব্রাসেলসে আরো বেশি ক্ষমতাবান ও প্রভাবশালী হয়ে উঠবেন। তবে এখনো আশাবাদী হওয়ার বেশ কিছু দিক আছে। কারণ, ব্রাসেলসে মধ্যপন্থিদের অবস্থান টিকে থাকা ছাড়া পূর্ব ইইউভুক্ত দেশগুলোয় চরম ডানপন্থিদের ততটা বাড়বাড়ন্ত হয়নি। হাঙ্গেরি ও পোল্যান্ডের মতো ডানপন্থি-প্রধান দেশগুলোয় ডানপন্থি জনতুষ্টিবাদীরা পিছু হটতে

শুরু করেছেন। ঐতিহাসিক রেকর্ড অনুযায়ী এটি কিছুটা অপ্রত্যাশিত। যেসব দেশ ২০০৪ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে যোগ দিয়েছিল, সেগুলো মূলত নেটিভিজম ও অতি ডানপন্থি রাজনীতির আঁতুড়ঘর বলে পরিচিত।

তবে ফ্রান্সে যদি লো পেনের জয় হয় এবং ২০২৭ সালে তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে ম্যাক্রোঁর স্থলাভিষিক্ত হন, তাহলে সেটি অবশ্যই আশঙ্কার বিষয় হবে। প্যারিসভিত্তিক ইনস্টিটিউট মনটেইন-এর ইউরোপ কর্মসূচির পরিচালক জর্জিনা রাইট বলছেন, তিনি মনে করেন মূলধারার রাজনীতি নিয়ে অসন্তোষ সৃষ্টি হওয়ার কারণেই উগ্র-ডানপন্থিদের পুনরুত্থান ঘটছে।

ফ্রান্সে কট্টর ডানপন্থিদের ঐতিহাসিক জয় : ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে গতকাল সোমবার প্রকাশিত আনুষ্ঠানিক ফলাফলে দেখা গেছে, রবিবারের ভোটে আরএন ও এর মিত্ররা ৩৪ শতাংশ ভোট পেয়েছে, ২৮ শতাংশ ভোট পেয়ে তাদের পরেই আছে বামপন্থিদের জোট নিউ পপুলার ফ্রন্ট (এনএফপি) আর প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁর মধ্যপন্থি টুগেদার অ্যালায়েন্স পেয়েছে মাত্র ২০ শতাংশ ভোট।

এ ফলাফল প্রেসিডেন্ট মাক্রোঁর জন্য একটি বড় ধরনের বিপর্যয়। চলতি মাসের প্রথমদিকে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট নির্বাচনে তার মনোনীত প্রার্থীরা আরএনের প্রার্থীদের কাছে পরাজিত হওয়ার পর আগাম এ নির্বাচনের ডাক দিয়েছিলেন মাক্রোঁ। কিন্তু স্বাভাবিক নিয়মে ২০২৭ সালের আগে ফ্রান্সে পার্লামেন্ট নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল না আর এ নিয়ে মিত্ররা মাক্রোঁর ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে আছে।

এ ফলাফল লো পেনের আরএনের সমর্থকদের মাঝে আনন্দের স্রোত বইয়ে দিয়েছে, তারা নেচে গেয়ে উল্লাস করছেন। তবে আগামী রবিবারের রান-অফ ভোটের পর কট্টর ডানপন্থি আরএন ইউরোপন্থি প্রেসিডেন্ট মাক্রোঁর সঙ্গে সহাবস্থান করে সরকার গঠনে সক্ষম হবে কিনা, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।

ফ্রান্সের অনেকের কাছে বহুদিন ধরে অচ্ছুৎ হয়ে থাকা আরএন আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন ক্ষমতার সবচেয়ে কাছাকাছি আছে। যে দলটি বর্ণবাদ ও ইহুদিবিদ্বেষের জন্য পরিচিত সেই আরএনের ভাবমূর্তি এখন স্বচ্ছ করার কথা বলছেন লো পেন, তার এই কৌশল ব্যয়বহুল জীবনযাত্রা ও অভিবাসী নিয়ে মাক্রোঁর ওপর বিরক্ত ভোটারদের ক্ষেত্রে কাজে দিয়েছে।

আগামী সপ্তাহে আরএন জয়ী হয়ে ক্ষমতায় যাবে কিনা, তা নির্ভর করছে মধ্যবর্তী দিনগুলোতে তাদের প্রতিদ্ব›িদ্বরা কী রাজনৈতিক সমঝোতায় পৌঁছায় তার ওপর। অতীতে আরএনকে ক্ষমতার বাইরে রাখতে মধ্য-ডান ও মধ্য-বামপন্থি দলগুলো জোট বেঁধেছিল।

রবিবার রাতে বামপন্থি নিউ পপুলার ফ্রন্ট ও মাক্রোঁর টুগেদার অ্যালায়েন্সের নেতারা পরিষ্কার করে জানিয়ে দেন, আগামী রবিবারের রান-অফে আরএনকে হারাতে যেসব জেলায় তাদের দুই জোটভুক্ত অন্য দলের প্রার্থী ভালো অবস্থানে রয়েছেন তার সমর্থনে তারা নিজ নিজ প্রার্থী প্রত্যাহার করে নেবেন।

প্রথম পর্বের ভোটে কোনো প্রার্থী ৫০ শতাংশ ভোট না পেলে শীর্ষে থাকা দুই প্রতিদ্ব›দ্বী স্বয়ংক্রিয়ভাবে দ্বিতীয় পর্বে প্রতিদ্ব›িদ্বতার যোগ্যতা অর্জন করবেন। তাদের পাশাপাশি যে প্রার্থীদের পক্ষে সাড়ে ১২ শতাংশ নিবন্ধিত ভোটার রয়েছে তারাও দ্বিতীয় পর্বে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করবেন। এই পর্বে সবচেয়ে বেশি ভোট পাওয়া প্রার্থীই জয়ী হবেন। আর দ্বিতীয় পর্বের ভোটে জিতে আরএনের ক্ষমতায় যাওয়ার পথ সুগম হলে দলটির সভাপতি জগদান বাগদেলা (২৮) হবেন ফ্রান্সের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সমবায় ব্যাংককে রোল মডেল হিসেবে গড়ে তুলতে হবে: সমবায় উপদেষ্টা

সমবায় ব্যাংককে রোল মডেল হিসেবে গড়ে তুলতে হবে: সমবায় উপদেষ্টা

যে কারণে আজ জামিন পেলেন না নিরপরাধ বিডিআর সদস্যরা

যে কারণে আজ জামিন পেলেন না নিরপরাধ বিডিআর সদস্যরা

মোবাইলে যেভাবে দেখবেন বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ

মোবাইলে যেভাবে দেখবেন বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ

যে কারণে সবাই ‘দ্য ডেলিভারেন্স’র গ্লেন ক্লোজকে নিয়ে বিরক্ত

যে কারণে সবাই ‘দ্য ডেলিভারেন্স’র গ্লেন ক্লোজকে নিয়ে বিরক্ত

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App