×

প্রথম পাতা

অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকায় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

বিশ্বজুড়ে উদ্বেগের মধ্যে করোনার টিকা প্রত্যাহার

Icon

প্রকাশ: ০৯ মে ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বিশ্বজুড়ে উদ্বেগের মধ্যে করোনার টিকা প্রত্যাহার
কাগজ প্রতিবেদক : বিশ্বজুড়ে উদ্বেগের মধ্যে এবার নিজেদের উৎপাদিত টিকা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা। স¤প্রতি সংস্থাটি এক ঘোষণায় জানিয়েছে- তাদের তৈরি করোনার সব টিকা প্রত্যাহার করে নেয়া হবে। সংস্থাটি স্বেচ্ছায় তাদের করোনাপ্রতিরোধী টিকা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়ার পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোনো দেশে আর এই টিকা ব্যবহার করা যাবে না। এ বছরের ৫ মার্চ টিকা প্রত্যাহারের আবেদন করা হয়েছিল; গত মঙ্গলবার থেকে তা কার্যকর হয়েছে। অ্যাস্ট্রাজেনেকা জানিয়েছে, বাণিজ্যিক কারণে তাদের তৈরি করোনাপ্রতিরোধী টিকা বাজার থেকে সরিয়ে ফেলা হচ্ছে। সংস্থাটি বলছে, এই টিকা আর তৈরি বা সরবরাহ করা হচ্ছে না। বিশ্বে বিভিন্ন সময় দেখা গিয়েছে বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব। হয়েছে মহামারি। সেই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে বিজ্ঞানী ও গবেষকরা আবিষ্কার করেছেন প্রতিষেধক বা টিকা। সবচেয়ে দ্রুততম সময়ে প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়েছে কোভিড-১৯ এর। আর তাই এ নিয়ে যে পরিমাণ গবেষণা হওয়া উচিত ছিল বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন; তা হয়নি বা সময় পাননি বিজ্ঞানীরা। ফলে, কিছু ঘাটতি সেখানে রয়ে গেছে। কোভিড টিকার তালিকায় আছে-ফাইজার ও বায়োএনটেকের তৈরি টিকা, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকা, সিনোফার্ম, মডার্না, সিনোভ্যাক, জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকা। গত কয়েক মাসে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকায় বিরল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার খবর সামনে আসে। এই সংখ্যাটি খুব বেশি না হলেও এ ইস্যুতে শুরু হয়েছে তুমুল আলোচনা। কোথাও কোথাও বিষয়টি গড়িয়েছে আদালত পর্যন্ত। অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকায় যে গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে সে কথা স্বীকার করেছে এই টিকা প্রস্তুতকারী সংস্থাটি। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে আদালতে জমা দেয়া এক নথিতে ওই সংস্থা জানিয়েছিল, তাদের তৈরি করা প্রতিষেধকের কারণে বিরল রোগ ‘থ্রম্বোসিস উইথ থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া সিনড্রোম’ (টিটিএস)-এ আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি আছে। এই রোগে আক্রান্ত হলে রক্তে অণুচক্রিকার পরিমাণ কমে যায় এবং রক্ত জমাট বাঁধে। এ কারণে প্রস্তুতকারী সংস্থাকে গুনতে হতে পারে বিপুল অঙ্কের জরিমানাও। গত ফেব্রুয়ারিতে হাইকোর্টে দায়ের করা আদালতের নথিতে অ্যাস্ট্রাজেনেকা স্বীকার করেছে- তাদের তৈরি টিকা থেকে এ ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে- যা খুবই বিরল। টিটিএসের কারণে শরীরের বিভিন্ন অংশে রক্ত জমাট বেঁধে যায় এবং প্ল্যাটিলেট কমে যায়। যুক্তরাজ্যে এ ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে এখন পর্যন্ত ৮১ জনের মৃত্যু হয়েছে। ব্রিটিশ হাইকোর্টে অ্যাস্ট্রাজেনেকার বিরুদ্ধে বেশ কিছু মামলা হয়েছে। কিন্তু অ্যাস্ট্রাজেনেকা জোর দিয়ে বলেছে, টিকা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের সঙ্গে আদালতের মামলার কোনো সম্পর্ক নেই। তারা বলছে, এটা কাকতালীয় ঘটনা। এদিকে অ্যাস্ট্রাজেনেকা এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা বিশ্বব্যাপী তাদের তৈরি করোনাপ্রতিরোধী টিকার অবদান নিয়ে যথেষ্ট গর্বিত। বিশ্বে করোনা মহামারি শেষ করার ক্ষেত্রে তাদের এই টিকা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। সংস্থাটির দাবি, করোনার প্রথম বছরেই ৬৫ লাখ মানুষের জীবন রক্ষা করেছে তাদের তৈরি টিকা। এছাড়া বিশ্বব্যাপী তারা ৩০০ কোটি ডোজ সরবরাহ করেছে। অ্যাস্ট্রাজেনেকা বলছে, করোনাপ্রতিরোধী একাধিক টিকা তৈরি হওয়ায় সর্বশেষ ভ্যাকসিনগুলো বেশ সহজলভ্য হয়ে উঠেছে। ফলে ভ্যাক্সজেভরিয়ার চাহিদা কমে গেছে- যা আর তৈরি বা সরবরাহ করা হচ্ছে না। তাই, তারা ইউরোপের মধ্যে এই টিকা বাজারজাতের অনুমোদন প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাংলাদেশেও করোনাপ্রতিরোধী টিকা কার্যক্রমে ব্যবহৃত হয়েছে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অর্থায়নে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা প্রথম ডোজ নেয়ার পর ৭৪ শতাংশ এবং দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার পর ৫৫ শতাংশ টিকাগ্রহীতা বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা জানিয়েছেন। তবে এসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া গুরুতর ছিল না। এর মধ্যে ছিল, টিকা নেয়ার স্থানে ব্যথা, জ¦র, মাথাব্যথা এমন সব উপসর্গ। দেশে টিকা অনুমোদন ও প্রয়োগের বিষয়ে সরকারের পরামর্শক হিসেবে কাজ করে টিকাসংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি (নাইট্যাগ)। এই কমিটির সদস্য ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা প্রয়োগ শুরু হয় ২০২১ সালে। এই টিকা গ্রহীতাদের মধ্যে এখনো পর্যন্ত গুরুতর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে বলে জানা যায়নি। এরপরও বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। নাইট্যাগ সভাপতি অধ্যাপক ডা. খান আবুল কালাম আজাদ ভোরের কাগজকে বলেন, নিয়মিতভাবে দেশে এখন করোনা টিকা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। টিকাগ্রহীতাদের মধ্যে রক্ত জমাট বাঁধা বা প্লাটিলেট কমে যাওয়ার মতো গুরুতর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এখনো পর্যন্ত দেখা যায়নি। কিন্তু বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দেখা যাচ্ছে- এমন খবর আমরা পাচ্ছি। সেই দিকটি বিবেচনা করেই দেশে এখন ফাইজার টিকা ছাড়া অন্য কোনো টিকা প্রয়োগ করা হচ্ছে না। মডার্নার টিকায় হৃদযন্ত্রে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়ার তথ্য জানার পর আমরা সেই টিকাটিও প্রয়োগ বন্ধ রেখেছি। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App