×

প্রথম পাতা

ডিম নিয়ে কারসাজি, হালিতে বাড়ল ২০ টাকা

Icon

মরিয়ম সেঁজুতি

প্রকাশ: ০৮ মে ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ডিম নিয়ে কারসাজি, হালিতে বাড়ল ২০ টাকা

গত ৫-৬ দিনের ব্যবধানে হালিতে ডিমের দাম বেড়েছে ২০ টাকা পর্যন্ত

কিছুদিন স্বস্তিতে পার হওয়ার পর আবারো বেড়েছে ডিমের দাম। গত ৫-৬ দিনের ব্যবধানে হালিতে ডিমের দাম বেড়েছে ২০ টাকা পর্যন্ত। কোনো কারণ ছাড়াই কারসাজির মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা ডিমের দাম বাড়িয়েছেন বলে অভিযোগ ভোক্তাদের। খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, ৫-৬ দিন ধরে পাইকারি বাজারে দাম একটু একটু করে বেড়েছে। ফলে খুচরায় এর প্রভাব পড়ছে। 

পাইকারি বিক্রেতারা জানিয়েছেন, ডিম উৎপাদনে ঘাটতি তৈরি হয়েছে। রোজার মধ্যে প্রতি ডজন ডিমের দাম নেমেছিল ১১৫ থেকে ১২০ টাকায়। ঈদের পরও এ দরেই পাওয়া গেছে ডিম। গত রবিবার ঢাকার কারওয়ান বাজার, কমলাপুর এজিবি কলোনি বাজার, মালিবাগ, খিলগাঁও, শান্তিনগর বাজারে দেখা গেছে, ফার্মের প্রতি ডজন বাদামি ডিম ১৪৫-১৫০ টাকা আর সাদা ডিম ১৩৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। যদিও ৫ দিন আগে বাদামি ডিমের ডজন ১২০ থেকে ১২৫ ও সাদা ডিম ১১৫ থেকে ১২০ টাকায় কেনা গেছে।

সেই হিসাবে বাদামি ডিম ডজনে ১০ থেকে ২০ আর সাদা ডিমে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে।  দর বাড়ার ব্যাপারে কারওয়ান বাজারের ডিম ব্যবসায়ী জয়নাল হোসেন বলেন, ৪-৫ দিন ধরে পাইকারি বাজারে ডিমের দাম বাড়তির দিকে। প্রতিদিন প্রতি ১০০ পিস ডিমে ২০ থেকে ৩০ টাকা করে বাড়ছে। এজন্য খুচরা বাজারেও দাম বাড়তে শুরু করেছে।

রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, আকারভেদে ফার্মের মুরগির ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা দরে। আর সুপারশপগুলোয় তা বিক্রি হচ্ছে ১৭০-১৮০ টাকায়। ঢাকায় ডিমের বড় দুটি পাইকারি বাজারের একটি কারওয়ান বাজারসংলগ্ন তেজগাঁও রেলস্টেশন, অন্যটি পুরান ঢাকার কাপ্তানবাজার। এই দুই বাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সোমবার পাইকারিতে ১০০ বাদামি ডিম বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ২০ থেকে ১ হাজার ৩০ টাকায়। ১০০ সাদা ডিম পাইকারিতে ৯৬০ থেকে ১০০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

 প্রান্তিক খামারিদের অভিযোগ, ঢাকার তেজগাঁওয়ে ডিম সিন্ডিকেট রয়েছে। তারা প্রান্তিক খামারির ডিম কম দামে কিনে মজুত করে এখন বাড়তি দরে বিক্রি করছেন। ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে এবং মোবাইল ফোনে এসএমএস করে সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানো হয়। প্রান্তিক খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার ভোরের কাগজকে বলেন, গত ৫ দিনে পাইকারিতে তারা প্রতি ১০০ সাদা ডিমে ১৮০ টাকা এবং ১০০ বাদামি ডিমে ১৫০ টাকা বাড়িয়েছেন। অথচ খামারির কাছ থেকে এই ডিম কয়েকদিন আগে প্রতি পিস ২ থেকে ৩ টাকা কম দামে কিনে নিয়েছেন তারা। শুধু তা-ই নয়, এ সিন্ডিকেট ফেসবুক পেজের মাধ্যমে ডিমের আগাম বাড়তি দরের ঘোষণা দিয়ে দেয়। এতে সারাদেশের ব্যবসায়ীরা ডিম কেনা শুরু করেন। ফলে দাম বেড়ে যায়। 

সুমন হাওলাদার বলেন, ডিম সিন্ডিকেটের কারণে বাজারে যৌক্তিক মূল্য থাকে না। তেজগাঁও ডিমের বাজার একটি বড় সিন্ডিকেট। তারা সপ্তাহে ৩-৪ দিন ডিমের দাম বাড়িয়ে তাদের কোল্ডস্টোরেজের জমানো ডিমগুলো বাজারে ছেড়ে দেয়। আবার ইউটার্ন নিয়ে দাম কমাতে থাকে। এভাবে তারা সারা বছর বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখে। কারণ সময়ে সময়ে ডিমের উৎপাদন খরচ বাড়ে বা কমে না। শীতের সময়ে তারা ডিমের দাম বেশি কমিয়ে নিজেরা সংরক্ষণ করে।

তিনি আরো বলেন, গত ৪ এপ্রিল পাইকারিতে ডিমের দাম ছিল ৭ টাকা। এক মাসের ব্যবধানে গত ৪ মে সেই ডিমের দাম সাড়ে ১০ টাকা। অর্থাৎ ওই ডিম ব্যবসায়ীরা কোল্ডস্টোরেজ করে প্রতি ডিমে ৩ টাকা ব্যবসা করল। অর্থাৎ ১ কোটি ডিম বিক্রি করে বাড়তি লাভ পাচ্ছে ৩ কোটি টাকা। তেজগাঁও থেকে যে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা হয় সেটা সারাদেশেই কার্যকর হয়। 

এদিকে, তেজগাঁওয়ের ওপর নির্ভর করলে সাধারণ খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, অন্যদিকে ভোক্তাও ন্যায্য দামে ডিম পায় না। চলতি মাসেই প্রতি ১০০ ডিমে গত ২ মে ১০ টাকা, ৩ মে ৩০ টাকা, ৪ মে ৫০ টাকা এবং ৫ মে ৬০ টাকা বেড়েছে। তবে পোল্ট্রি ব্যবসায়ী নেতা সুমন হাওলাদারের এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তেজগাঁওয়ের ডিম ব্যবসায়ী আল আমিন ট্রেডার্সের পরিচালক মো. আল-আমিন। 

ভোরের কাগজকে তিনি বলেন, সাপ্লাই চেইনে যখন কোনো ব্যাঘাত ঘটে তখন তা বাজারের ওপরেও প্রভাব ফেলে। রোজার পর থেকে এ পর্যন্ত ডিমের ব্যবসায় আমার প্রায় ৩ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। এর কারণ হচ্ছে, রমজান মাসে ডিমের দাম প্রায় অর্ধেকে নেমে গিয়েছিল। তখন একটা ক্রাইসিস গেছে। এরপর কয়েকদিনের প্রচণ্ড গরম। অতি গরমে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ মুরগির উৎপাদন কমে গেছে। খামারিদের অনেক মুরগি মারা গেছে। সেখান থেকে মূলত ডিমেরও কিছুটা ক্রাইসিস দেখা দিয়েছে।আশা করছি কয়েকদিনের মধ্যে ডিমের দাম আবার কমে যাবে।

এ আড়তদার বলেন, গত ৫ দিনে ডিমের দাম অনেক বেড়েছে। ৫ দিন আগে ১০০ ডিম পাইকারিতে ৮৪০-৮৫০ টাকায় বিক্রি হতো। তা এখন ১০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মুরগি কমে যাওয়ায় ডিমের উৎপাদনও কমেছে। এখন আবার আবহাওয়া একটু ঠাণ্ডা রয়েছে। তাই ডিমের দাম যেমন হুট করে বেড়েছে, তেমনি হুট করেই কমে যাবে। 

তেজগাঁওয়ের ব্যবসায়ীরা ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে- এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আল-আমিন বলেন, কারো কাছে ক্ষমতা থাকলে সে কখনো ক্ষতি গুনতে চাইবে না। সুতরাং আমার হাতে দাম নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা থাকলে আমি ক্ষতি গুনব না। তিনি বলেন, একটা সময় তেজগাঁও ডিমের হাব হিসেবে পরিচিত ছিল। সে সময় এখান থেকে সারাদেশে ডিমের দাম নিয়ন্ত্রণ হতো। ক্ষমতা এককেন্দ্রিক থাকলে মেন্যুপুলেশনের সুযোগ থাকে। এখন ডিজিটালাইজেশনের যুগ। মানুষ ঘরে বসেই ডিম কিনতে পারে। যখন ক্ষমতা ভাগ হয়ে যায় তখন সিন্ডিকেট করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। আল-আমিন বলেন, ২০১৫ সালে এখানে প্রায় ১০০ আড়তদার ছিলেন, যা বর্তমানে মাত্র ২৭ জনে নেমে এসেছে। যদি আমাদের হাতে এত ক্ষমতাই থাকত তবে এত আড়তদার চলে যেতেন না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App