×

প্রথম পাতা

সরকারের যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত

নিম্নমাধ্যমিক পর্যন্ত ফ্রি শিক্ষা

Icon

অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য

প্রকাশ: ০৬ মে ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

নিম্নমাধ্যমিক পর্যন্ত ফ্রি শিক্ষা
নিম্নমাধ্যমিক স্তরে অবৈতনিক শিক্ষা চালুর চিন্তাভাবনা করছে সরকার। এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে শিক্ষার্থীরা ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বিনামূল্যে বা নামমাত্র মূল্যে পড়াশোনা করতে পারবে। বর্তমানে প্রাথমিক স্তরে অবৈতনিক শিক্ষা চালু রয়েছে। এর ফলে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করতে শিক্ষার্থীদের কোনো টাকা খরচ করতে হয় না। সরকারই তাদের খরচ জুগিয়ে দেয়। পাশাপাশি জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ এর আলোকে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা চালুকরণেও জোর দেয়া হয়েছে। 

গতকাল রবিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের সভাপতিত্বে আয়োজিত এক সভায় এমন নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সভায় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী, সচিব ছাড়াও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী, সচিব এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন। প্রসঙ্গত, ২০১০ সালের জাতীয় শিক্ষানীতিতে বলা হয়েছে, প্রাথমিক শিক্ষার মেয়াদ পাঁচ বছর থেকে বাড়িয়ে আট বছর অর্থাৎ অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা হবে। কিন্তু গত ১৩ বছরেও এর পুরো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। 

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ে যেতে প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছে। ঝরে পড়ার নানা কারণও চিহ্নিত হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- লেখাপড়ার খরচ বেড়ে যাওয়ায় বহু অভিভাবক তার সন্তানকে নুরানি মাদ্রাসা ও কওমি মাদ্রাসায় ভর্তি করে দিচ্ছেন। সেখানে পড়াশোনার কোনো খরচ নেই, উল্টো খাবার পাওয়া যায়। গত কয়েক বছরে সাধারণ শিক্ষা থেকে মাত্রাতিরিক্ত হারে মাদ্রাসাশিক্ষায় বহু শিক্ষার্থী চলে যাওয়ায় কর্তৃপক্ষ ভাবতে শুরু করে। সাধারণ শিক্ষার হার বাড়াতে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বিনামূল্যে পড়াশোনা করাতে চায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ভোরের কাগজকে বলেন, লেখাপড়ার পেছনে একজন শিক্ষার্থীর দুই ধরনের ব্যয় আছে। একটি প্রাতিষ্ঠানিক, অন্যটি পারিবারিক। পারিবারিক ব্যয়ের মধ্যে আছে খাতা, কলম, জামা-কাপড় প্রভৃতি। অবৈতনিক শিক্ষার ধারণায় সরকার প্রাতিষ্ঠানিক খরচ বহন করবে। গত ১৪ বছরে বিনামূল্যে পাঠ্যবই দেয়াসহ নানা ক্ষেত্রে প্রণোদনা দিয়েছে শেখ হাসিনা সরকার। এর সুফলও মিলেছে। মাধ্যমিকে জেন্ডার সমতা শুধু নিশ্চিতই হয়নি, ছাত্রীর সংখ্যা এখন বেশি। সেই ধারাবাহিকতায় এবার অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বিনামূল্যে শিক্ষাদান করতে চায় সরকার। 

প্রসঙ্গত, ২০২৬ সালের মধ্যে পর্যায়ক্রমে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষাদানের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ২০১৯ সালেই একটি খসড়া বাস্তবায়ন কৌশলপত্র তৈরি করা হয়েছিল। পরে আর এটি নিয়ে নড়াচড়া হয়নি। এখন অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বিনামূল্যে পড়াশোনা করানো হলে নিশ্চয়ই সুফল পাওয়া যাবে। বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল গত জানুয়ারিতে দায়িত্ব নিয়েই বলেছিলেন, শিক্ষানীতি-২০১০ এর আলোকে নিম্নমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাকে অবৈতনিক অথবা স্বল্পমূল্যে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হবে। টাকার জন্য কোনো শিক্ষার্থী যাতে নিম্নমাধ্যমিক থেকে ঝরে না পড়ে সেই প্রয়াস থাকবে আমাদের। সেই কথা বলার চার মাসের মাথায় মন্ত্রী অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষা বাস্তবায়নে কাজ শুরু করলেন। 

জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ ভোরের কাগজকে বলেন, অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষার বিষয়ে পর্যালোচনা করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিবকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি এটি কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায় তা নিয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটিও গঠনের কথা সভায় আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, প্রাথমিক স্কুলে চালু হওয়া অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা এমনিতেই অবৈতনিক। মাধ্যমিক স্কুলে কোন প্রক্রিয়ায় অবৈতনিক করা হবে- তা কমিটির মাধ্যমে জানা যাবে। তবে কাজটি সভার মাধ্যমে মাত্র শুরু হলো। আরো কিছুদিন না গেলে এর গতিপ্রকৃতি নিয়ে বিস্তারিত বলা যাবে না বলে জানান তিনি। 

এদিকে গতকালের বৈঠক শেষে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা সরকারের রাজনৈতিক অঙ্গীকার বাস্তবায়নে মৌলিক ন্যূনতম শিক্ষা অধিকারের ধাপ প্রাথমিক থেকে নিম্নমাধ্যমিক স্তরে উত্তরণের লক্ষ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় একযোগে কাজ করবে। বর্তমানে প্রাথমিক থেকে নিম্নমাধ্যমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ব্যয় বৃদ্ধি ও নানা আর্থসামাজিক কারণ ও প্রক্রিয়াগত কারণে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার রোধ করতে নিম্নমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক বা নামমাত্র ব্যয়ে করার ব্যবস্থা করার বিষয়ে শিক্ষানীতি-২০১০ এ বর্ণিত অঙ্গীকার বাস্তবায়নে গতকাল এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় সম্মত হয়েছে দুই মন্ত্রণালয়। এই লক্ষ্যে, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের অবৈতনিক শিক্ষা তথা পাঠদান কার্যক্রম ৬ষ্ঠ, ৭ম ও ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত বিস্তৃত করবে এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় নিম্নমাধ্যমিক পর্যায়ে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষাব্যয় কমিয়ে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিতে কাজ করবে। 

সভায় উপস্থিত একাধিক সূত্র জানিয়েছে, অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষা বাস্তবায়ন করতে গতকাল রবিবার যৌথ বৈঠকে বসে এই দুই মন্ত্রণালয়। অবৈতনিক শিক্ষা করলে যেমন সুবিধা রয়েছে ঠিক তেমনি অনেক অসুবিধাও রয়েছে। শিক্ষানীতির আলোকে ইতোমধ্যেই ৬৯৭টি বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাস চলছে। ২০২১ সালের মধ্যে সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তা পুরোপুরি বাস্তবায়নের কথা ছিল। কিন্তু প্রকল্পটি নিয়ে শুরুতে তোড়জোড় থাকলেও পরে পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে দেখা দেয় যোজন যোজন ফারাক। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে অবকাঠামো ও শিক্ষক সংকটের কারনে ‘গলার কাটা’ হয়ে পড়ে বিদ্যালয়গুলো। 

এছাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন। আর ষষ্ঠ থেকে ওপরের স্তরের শিক্ষা কার্যক্রম দেখভাল করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ হিসেবে ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির শিক্ষা কার্যক্রম দেখভাল করার কথা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের। দুই মন্ত্রণালয় একযোগে কাজটি করতে পারেনি। আবার অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত এক মন্ত্রণালয়ের অধীনেও নেয়া হয়নি। সবমিলিয়ে এই প্রক্রিয়ায় দেখা দেয় ‘জগাখিচুড়ি’ অবস্থা। তাই এবার কীভাবে এই অবৈতনিক প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করা হবে সেজন্য একটি কমিটি করে নীতিমালা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। শিগগির এই কমিটি করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। 

এ প্রসঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, সরকারের শিক্ষানীতির আলোকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত অবতৈনিকভাবে পাঠদান করার জন্য আমরা অনেক আগেই কার্যক্রম শুরু করেছি। ইতোমধ্যে ৬৯৭টি বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীত করা হয়েছে। শিগগিরই আরো ১৫৪টি স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান শুরু হবে। এছাড়া স¤প্রতি আমরা মাঠপর্যায় থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছি। তারা বলেন, সরকারের এই নীতি আরো অনেক আগের। আমরা প্রক্রিয়া শুরু করলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নানা অসহযোগিতার কারণে তা করতে পারিনি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় মনে করে, অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত আমাদের মন্ত্রণালয়ের অধীনে চলে এলে তাদের ক্ষমতা কমে যাবে। 

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ্ রেজওয়ান হায়াত ভোরের কাগজকে বলেন, পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের বিনা বেতনে যেমন পড়ানো হয়, তেমনি অন্যান্য সাপোর্ট দিচ্ছে সরকার। বিনামূল্যে পাঠ্যবই দেয়া ছাড়াও শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি দেয়া হচ্ছে, অর্থাৎ পূর্ণাঙ্গভাবে অবৈতনিক। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক করলে সরকার পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত যেভাবে সাপোর্ট দেয় ঠিক সেভাবেই নিম্নমাধ্যমিকেও সাপোর্ট দেবে। এছাড়া আমাদের যে ৬৯৭টি বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি চলমান রয়েছে সেখানে এই শিক্ষা অবৈতনিক। আমাদের শিক্ষক রয়েছে, তবে তাদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। 

জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফরিদ আহাম্মদ ভোরের কাগজকে বলেন, শিক্ষানীতির আলোকে আমরা ইতোমধ্যেই কাজ শুরু করেছি। আজকের বৈঠকেও অবৈতনিকের বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ বিশেষজ্ঞরা নানা মত দিয়েছেন। আমরা বৈঠকের রেজুলেশন হাতে পেলে পরবর্তী কাজ শুরু করব। তিনি বলেন, স্মার্ট প্রাথমিক শিক্ষার জন্য এর মধ্যে ৮১ ভাগ অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। আগামী ৩ বছরের মধ্যে অন্তত ১০ হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। ফলে এসব বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা এমনিতেই অবৈতনিক হয়ে যাবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত নয়, দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষার লক্ষ্য অর্জনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গবেষক দল ২০১৯ সালেই বিস্তারিত গবেষণা করেছেন। গবেষণায় ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর পেছনের ব্যয় আলাদাভাবে নির্ধারণ করা হয়। এরপর সারাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শ্রেণিভিত্তিক মোট কত টাকা সরকার ব্যয় করবে তাও বের করা হয়েছিল। এ সংক্রান্ত বাস্তবায়ন কৌশলপত্রে বলা হয়েছিল, অবৈতনিক শিক্ষা বাস্তবায়ন করা হলে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোনো টিউশন ও অন্যান্য ফি আদায় করা হবে না। এর পরিবর্তে সরকার দুইভাবে টিউশন ফি সংস্থান করবে। একটি হচ্ছে, প্রত্যেক স্কুল-মাদ্রাসা একই হারে টিউশন ফি নেবে। সেই ফির অর্থ সরকার শিক্ষার্থীর কাছে পাঠাবে। শিক্ষার্থী তা স্কুলে জমা দেবে। অথবা ধার্য টিউশন ফি সরকার সরাসরি প্রতিষ্ঠানে পাঠাবে। এক্ষেত্রে সরকার যে টিউশন ফি নির্ধারণ করেছে, সেটি হচ্ছে- ষষ্ঠ শ্রেণিতে ১০০ সপ্তমে ১৫০ টাকা। অষ্টম শ্রেণি প্রস্তাবিত ফি ২০০ টাকা। নবম ও দশম শ্রেণিতে যথাক্রমে ৩০০ ও ৫০০ টাকা। একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণিতে ৫০০ টাকা। এই ফি হারের নাম দেয়া হয়েছে ‘এসডিজির জন্য প্রস্তাবিত’। 

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, উল্লিখিত এসডিজির জন্য প্রস্তাবিত টিউশন ফি কিংবা সমন্বিত উপবৃত্তির জন্য প্রস্তাবিত হারে অনুদানে আপাতত অবৈতনিক শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা যায়। ২০২৬ সালের মধ্যে সরকার দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের টিউশন ও সেশন ফিসহ প্রতিষ্ঠানের সব ধরনের ব্যয় বহন করবে। বাস্তবায়ন কৌশলপত্রে দেখা যায়, সরকার যদি টিউশন ফি প্রদান করে তাহলে ২০১৯ সালে কেবল ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা অবৈতনিক শিক্ষার সুযোগ পাবে। এ ক্ষেত্রে এসব শিক্ষার্থী বাবদ ৪ কোটি ৯ লাখ ৩৩ হাজার টাকা খরচ হবে। যদি পরের বছর সপ্তম শ্রেণি অন্তর্ভুক্ত করা হয়; তাহলে দুই শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য মোট খরচ হবে ১০ কোটি ১৭ লাখ ১৯ হাজার টাকা। ২০২১ সালের মধ্যে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষা চালুর কথা বলা আছে বাস্তবায়ন কৌশলপত্রে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হলে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত তিন শ্রেণিতে কেবল ফি বাবদ দিতে হবে ১৮ কোটি ১৭ লাখ ৫ হাজার টাকা। ওই কৌশলপত্রে আরো বলা হয়েছিল, ২০৩০ সালে বাংলাদেশে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত নিম্নমাধ্যমিকে শিক্ষার্থী হবে ১ কোটি ৪ লাখ ৯৬ হাজার ৪৭৪। প্রতিবছর ১০ শতাংশ হারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাড়ানোর প্রস্তাবও আছে এতে। 

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে (দশম শ্রেণি পর্যন্ত) শিক্ষার্থী কর্তৃক অন্যান্য ভাতা হিসেবে দেয়া অর্থের প্রায় ৬৯ শতাংশ টাকার জোগান আসে নিম্নমাধ্যমিক স্তর থেকে। সে ক্ষেত্রে নিম্নমাধ্যমিক স্তরে সরকারি খরচে শিক্ষার প্রাতিষ্ঠানিক ব্যয় নির্বাহ করতে ২০১৯ সালেই নিম্নমাধ্যমিকের ৩০ হাজার ৩৫৮টি প্রতিষ্ঠানে ৪২ কোটি ৯৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা সরকারিভাবে বরাদ্দ করার কথা বলা হয়েছিল। ২০২১ সালে এর পরিমাণ বেড়ে ৪৪ কোটি ৩৯ লাখ ৫৫ হাজার টাকা, ২০২৫ সালে ৪৭ কোটি ৪২ হাজার ৬২ হাজার টাকার কথা বলা হয়েছিল। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবনায় নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী এবং তাদের পেছনে সম্ভাব্য ব্যয়ের চিত্রও তুলে এতে বলা হয়েছিল, ২০১৬ সালের নবম-দশম শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ছিল ৩৮ লাখ ৫০ হাজার ৮শ’। 

২০২১ সালে এই সংখ্যা হবে ৪৩ লাখ ৩৪ হাজার ১০৯ জন। ২০২৫ সালে হবে ৪৮ লাখ ৭৮ হাজার ৭৮ জন। আর ২০৩০ সালে দাঁড়াবে ৫৬ লাখ ৫৫ হাজার ৩০ জনে। একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের আয়ের ৩১ শতাংশ আসে এই দুই শ্রেণির শিক্ষার্থীদের দেয়া বিভিন্ন ধরনের ফি থেকে। কৌশলপত্রে বলা হয়েছিল, ২০২৬ সালে যখন দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষা বাস্তবায়ন হবে, তখন ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষা চালু করতে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যয় হিসেবে খরচ করতে হবে ৯২ কোটি ১০ লাখ ২৩ হাজার টাকা। সরকার বর্তমানে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে এমপিও বাবদ অর্থ দিচ্ছে। 

এছাড়া শিক্ষার্থীদের টিউশন ফিসহ অন্যান্য খরচ মেটাতে উপবৃত্তি বাবদ মোটা অংকের অর্থ ব্যয় করে। প্রতিষ্ঠানগুলো এর বাইরে ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ টিউশনসহ অন্যান্য ফি বাবদ আদায় করে। কিন্তু সেই অর্থের প্রায় সবই প্রতিষ্ঠান নিজেদের মতো করে ব্যয় করে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, যদি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা অর্থের সদ্ব্যবহার করা যায় এবং এর সঙ্গে এমপিও ও উপবৃত্তির অর্থ যোগ করা যায়- তাহলে সহজেই অবৈতনিক শিক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারের কোষাগার থেকে খুব সামান্যই ব্যয় করতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App