×

প্রথম পাতা

অধ্যাপকের পাঁজরের হাড় হাত ভেঙে দিয়েছে পুলিশ

Icon

কাগজ ডেস্ক

প্রকাশ: ০৪ মে ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

অধ্যাপকের পাঁজরের হাড়  হাত ভেঙে দিয়েছে পুলিশ
  • যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভ 
  • ২২০০ বিক্ষোভকারী গ্রেপ্তার
  • অবশেষে মুখ খুললেন বাইডেন
  • বিক্ষোভে সরব কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো

যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভ চলাকালে এক অধ্যাপককে গ্রেপ্তার করার সময় তার পাঁজরের ৯টি হাড় ও একটি হাত ভেঙে দিয়েছে পুলিশ। মিজৌরি অঙ্গরাজ্যের সেন্ট লুইসে ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে এ ঘটনা ঘটেছে। যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকে গত কয়েক সপ্তাহে ২ হাজার ২০০ জনের বেশি বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, মত প্রকাশের অধিকার অবশ্যই রয়েছে। তবে ক্যাম্পাসগুলোয় অবশ্যই শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে। গ্রেপ্তারের সময় পাঁজরের হাড় ও হাত ভেঙে যাওয়া শিক্ষক স্টিভ তামারি সাউদার্ন ইলিনয়েস ইউনিভার্সিটি অ্যাডওয়ার্ডসভিলের ইতিহাসের অধ্যাপক। মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশেষজ্ঞ তিনি। 

এ ঘটনায় ধারণ করা এক ভিডিওতে দেখা যায়, গত শনিবার ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে স্টিভ তামারি দৃশ্যত বিক্ষোভকারীদের ছবি তোলার বা ভিডিও ধারণের চেষ্টা করছিলেন।  এসময় কয়েকজন পুলিশ সদস্য বেপরোয়াভাবে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যান তাকে। গ্রেপ্তার হওয়ার সময় অধ্যাপক তামারি মাটিতে পড়ে গেলে পুলিশের এক সদস্য তাকে হাঁটু দিয়ে আঘাত করতে থাকেন। পরে দুই হাত পিছমোড়া করে হাতকড়া পরানো হয়। এরপর কয়েকজন পুলিশ তার নিস্তেজ হয়ে পড়া শরীর টেনেহিঁচড়ে একটি ভ্যানের দিকে নিয়ে যায় ও মাটিতে উপুড় করে ছুড়ে ফেলে। বিক্ষোভ চলাকালে এই অধ্যাপকের স্ত্রী সান্দ্রা তামারিকেও গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ ঘটনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে গত বৃহস্পতিবার সান্দ্রা একটি পোস্ট দেন। 

তাতে লেখেন, স্টিভ তামারিকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তবে তার ব্যথা রয়েছে ও ভাঙা হাতে অস্ত্রোপচার করতে হবে। এ ঘটনায় একাডেমিক প্রকাশনা ‘দ্য মিডল ইস্ট রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন প্রজেক্ট’ (এমইআরআইপি) এক বিবৃতি দিয়েছে। তাতে বলা হয়, এমইআরআইপির নেতা ও কর্মীরা অধ্যাপক তামারির ওপর হামলা এবং তাকে গ্রেপ্তারের ঘটনা শুনে আতঙ্কিত ও ক্ষুব্ধ। অধ্যাপক তামারি ও তার স্ত্রী দুজনই এ প্রকাশনায় কাজ করেছেন। 

এমইআরআইপি বলেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোয় শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে পুলিশের সহিংসতা দুই সপ্তাহ ধরে উদ্বেগজনক প্রবণতা হয়ে ওঠেছে। কিন্তু স্টিভের সঙ্গে যা করা হয়েছে সেটি চূড়ান্ত পর্যায়ের সহিংস আচরণ, এমনকি তা এ মানও ছাপিয়ে গেছে। আমরা পুলিশের নিষ্ঠুরতা ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ক্যাম্পাসকে সামরিকীকরণের নিন্দা জানাই। 

২২০০ বিক্ষোভকারী গ্রেপ্তার : যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকে গত কয়েক সপ্তাহে ২ হাজার ২০০ জনের বেশি বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এসব ঘটনায় অনেক ক্ষেত্রে সহিংস পন্থার আশ্রয় নেয়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশের গুলি ছোড়ার ঘটনাও ঘটেছে। নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগ গত বৃহস্পতিবার বলেছে, কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হ্যামিলটন হলে গুলি ছোড়ার ঘটনায় কেউ আহত হননি। এক পুলিশ সদস্য তার বন্দুকের সঙ্গে লাগানো ফ্লাশলাইট জ্বালানোর চেষ্টা করছিলেন। তখন একটি গুলি বেরিয়ে হলের দেয়ালে লাগে। তবে ঘটনাটি পর্যালোচনা করে দেখছে ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নির দপ্তর। 

অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত ১৮ এপ্রিলের পর থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ৪০টি বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজে অন্তত অর্ধশত গ্রেপ্তার অভিযান চালানো হয়। এসব অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ২ হাজার ২০০ জনের বেশি বিক্ষোভকারীকে। তাদের মধ্যে শতাধিক বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয় শুধু কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, লস অ্যাঞ্জেলেসে (ইউসিএলএ) গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে ইসরায়েলপন্থি ও ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। পরে ক্যাম্পাসে অভিযান চালায় পুলিশ। সেখান থেকে ২০০ জনের বেশি বিক্ষোভকারীকে আটক করা হয়। 

ইউসিএলএর চ্যান্সেলর জিন ব্লক বলেছেন, প্রায় ৩০০ জন বিক্ষোভকারী স্বেচ্ছায় ক্যাম্পাস থেকে চলে যান। ২০০ জনের বেশি বিক্ষোভকারী পুলিশের আদেশ উপেক্ষা করেন। তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। ইউসিএলএর মতো অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভকারীরাও তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কর্তৃপক্ষের প্রতি ইসরায়েলের সঙ্গে বা গাজা যুদ্ধকে সমর্থনকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ব্যবসা বন্ধের আহ্বান জানাচ্ছেন। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ইসরায়েলি ‘গণহত্যা থেকে বিচ্ছিন্ন’ থাকার আহ্বান জানাচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে শিক্ষার্থীদের এমন ব্যাপক বিক্ষোভ এ শতকে আর দেখা যায়নি। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ইউসিএলএ ক্যাম্পাসে পুলিশের অভিযানের দৃশ্য সরাসরি সম্প্রচার করেছে; যেমনটা করেছে কাতারভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল আল-জাজিরা। ইসরায়েলের বিভিন্ন টেলিভিশন নেটওয়ার্কও লস অ্যাঞ্জেলেসে চালানো অভিযানের দৃশ্য সরাসরি সম্প্রচার করে। ইসরায়েল এ ছাত্র বিক্ষোভকে ইহুদিবিদ্বেষ বলে আখ্যায়িত করেছে। 

তবে ইসরায়েলের সমালোচকরা বলছেন, বিরোধীদের কণ্ঠরুদ্ধ করতেই দেশটির এমন অভিযোগ। চলমান বিক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দু কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুরু হয় গত ১৭ এপ্রিল। তাদের দাবি, গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের অবসান। ফিলিস্তিনের উপত্যকাটিতে গত ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি বাহিনীর নারকীয় অভিযানে এ পর্যন্ত সাড়ে ৩৪ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। তাদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। 

অবশেষে মুখ খুললেন বাইডেন : যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভকারীদের আইনের শাসন বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউস থেকে দেয়া এক টেলিভিশন বিবৃতিতে বাইডেন এই আহ্বান জানান। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ক্যাম্পাসগুলোয় অবশ্যই শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোর এমন উত্তাল পরিস্থিতির মধ্যে এতদিন বিষয়টি নিয়ে চুপ ছিলেন বাইডেন। সর্বশেষ লস অ্যাঞ্জেলেসের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সংঘর্ষের পর এই প্রথম তিনি সরাসরি মন্তব্য করলেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, আমরা একটি কর্তৃত্ববাদী জাতি নই, যেখানে জনগণকে চুপ করিয়ে দিই বা ভিন্নমত দমন করি। তবে আমরা আইনহীন দেশও নই। আমরা একটি সুশীল সমাজ, এবং শৃঙ্খলা অবশ্যই বজায় রাখতে হবে। 

বিক্ষোভে সরব কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো : যুক্তরাষ্ট্রের পর এবার কানাডার কয়েকটি বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভ হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়া এবং অটোয়া ইউনিভার্সিটিসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্প স্থাপন করেছে। তাদের দাবি, ইসরায়েলের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আর্থিক সংশ্লিষ্টতা রয়েছে, যা ইসরায়েলকে গাজা যুদ্ধে সাহায্য করছে। 

এদিকে, এসব ক্যাম্প ভেঙে ফেলার জন্য পুলিশি হস্তক্ষেপের অনুরোধ করেছেন কুইবেকের প্রিমিয়ার ফ্রাঁসোয়া লেগল্ট। মন্ট্রিলের ম্যাকগিল ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পটি ভেঙে ফেলা উচিত বলে মনে করছে কর্তৃপক্ষ। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পুলিশি হস্তক্ষেপের অনুরোধ করলেও বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি আইন প্রয়োগকারীরা। এদিন সন্ধ্যায় প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। 

লেগল্টের একজন মুখপাত্র বলেছেন, আমরা চাই ক্যাম্পটি উচ্ছেদ করা হোক। পুলিশের ওপর আমাদের ভরসা আছে। তাদের কাজ করতে দিন। বৃহস্পতিবার মন্ট্রিলে ইসরায়েলপন্থি পাল্টা প্রতিবাদও হয়েছে। তবে উভয় পক্ষকে আলাদা রাখা হয়েছে। তাদের মধ্যে কোনো সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়নি। বৃহস্পতিবার সকালে টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ডাউনটাউন ক্যাম্পাসের একটি খোলা স্থানে ক্যাম্প স্থাপন করে। সেখানে কয়েক ডজন তাঁবুতে জড়ো হন প্রায় একশ বিক্ষোভকারী। আয়োজকদের একটি বিবৃতিতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় তার বিনিয়োগ, ইসরায়েলি বর্ণবাদ, দখলদারিত্ব এবং ফিলিস্তিনের অবৈধ বসতি স্থাপন থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করা এবং কিছু ইসরায়েলি একাডেমিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তাদের অংশীদারিত্ব শেষ না করা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পিং অব্যাহত থাকবে। কিছু ইহুদি দলের অভিযোগ, বিক্ষোভকারীরা ইহুদিবিরোধী। 

তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করে আয়োজকরা বলছেন, তাদের সঙ্গে যোগ দেয়া বিক্ষোভকারীদের মধ্যে কিছু ইহুদিও রয়েছেন। ক্যাম্প নিয়ে মন্তব্য চাওয়া হলে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর কার্যালয় তার দেয়া মঙ্গলবারের একটি বিবৃতিকে ইঙ্গিত করে। ওই বিবৃতিতে ট্রুডো বলেছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার জায়গা, মতো প্রকাশের স্বাধীনতার জায়গা- তবে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা কেবল নিরাপদবোধ করলেই এটি কাজ করে। এই মুহূর্তে ইহুদি শিক্ষার্থীরা নিরাপদ বোধ করছে না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App