×

প্রথম পাতা

যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ অব্যাহত

হার্ভার্ডে উড়ল ফিলিস্তিনি পতাকা

Icon

প্রকাশ: ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

হার্ভার্ডে উড়ল ফিলিস্তিনি পতাকা
কাগজ ডেস্ক : গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে শুরু হওয়া শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়া ক্রমবর্ধমান এই বিক্ষোভ সামাল দিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর্মকর্তারা রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন। শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ ক্রমেই তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। আর এর মধ্যেই বিশ্ব বিখ্যাত হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনি পতাকা উত্তোলন করেছেন বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা। গতকাল এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক পোস্ট ও এনডিটিভি। এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এক সপ্তাহেরও বেশি আগে নিউইয়র্কের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হওয়া এই বিক্ষোভ দ্রুত আমেরিকার অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও ছড়িয়ে পড়েছে। এদিকে গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসনের কারণে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শুরু হওয়া এই ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভ অব্যাহত থাকার পাশাপাশি পুলিশি দমন-পীড়ন এবং গ্রেপ্তার অভিযানও অব্যাহত রয়েছে। এনডিটিভি বলছে, চলমান প্রতিবাদ-বিক্ষোভের মধ্যেই হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভকারীরা ক্যাম্পাসের ভেতরেই ফিলিস্তিনি পতাকা উত্তোলন করেছেন। ক্যাম্পাসের আইভি লিগ স্কুলের সামনে যেখানে এই পতাকা উত্তোলন করা হয় সেই জায়গাটি সাধারণত যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় পতাকার জন্য সংরক্ষিত। এছাড়া তারা ওয়াশিংটন হিলটন হোটেলের ওপরের ফ্লোরের জানালা থেকেও একটি বিশালাকার ফিলিস্তিনি পতাকা উত্তোলন করেছিল। এটি মূলত হোয়াইট হাউস সংবাদদাতা সমিতির বার্ষিক নৈশভোজের স্থান। এদিকে বিক্ষোভের মধ্যেই চারটি পৃথক ক্যাম্পাস থেকে পুলিশ প্রায় ২৭৫ জনসহ মোট ৭০০ জনকে গ্রেপ্তার করেছেন। এর মধ্যে বোস্টনের নর্থ-ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটিতে ১০০ জন, সেন্ট লুইসের ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটিতে ৮০, অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে ৭২ জন এবং ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটি থেকে ২৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া লস অ্যাঞ্জেলেসের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়াতে ইসরায়েলপন্থি এবং ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। গত সপ্তাহে এই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একটি তাঁবুছাউনি স্থাপন করা হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ব্যাপক এই বিক্ষোভ প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। হোয়াইট হাউস বলেছে, চলমান বিক্ষোভ অবশ্যই শান্তিপূর্ণ থাকতে হবে। বিক্ষোভরত ক্যাম্পাসকর্মীরা হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের যুদ্ধে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাচ্ছে এবং কলেজগুলোকে আগ্রাসি এই দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার পাশাপশি গাজার সংঘাত থেকে লাভবান কোম্পানিগুলোর সঙ্গেও সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবি জানাচ্ছেন তারা। এদিকে চলমান এসব বিক্ষোভ মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসকদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। এই অবস্থায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত রবিবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। এ সময় গাজার সীমান্ত শহর রাফাতে ইসরায়েলের সম্ভাব্য আক্রমণের বিষয়ে বাইডেন ‘তার স্পষ্ট অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন’। বাইডেনের অনুষ্ঠানস্থলে বিক্ষোভ : প্রেসিডেন্ট বাইডেন শনিবার রাতে বার্ষিক হোয়াইট হাউস করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের ডিনারে গিয়ে বিক্ষোভের মুখোমুখি হন। ব্যানারধারী বিক্ষোভকারীরা বার্ষিক সমাবেশের স্থান ওয়াশিংটন হিলটনের বাইরে গাজায় সাংবাদিকদের মৃত্যুর বিরুদ্ধে সেøাগান দেন। শত শত বিক্ষোভকারী সাংবাদিকদের ওই অনুষ্ঠান বয়কটে উৎসাহিত করতে এ আয়োজন করেন। এ অবস্থায় বাইডেন পেছনের প্রবেশদ্বার দিয়ে হোটেলে পৌঁছেন বলে জানায় রয়টার্স। বিক্ষোভকারীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা গাজা শিক্ষার্থীদের : যুক্তরাষ্ট্রের বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ফিলিস্তিনি ছাত্ররা রবিবার দক্ষিণ গাজায় সংহতি সমাবেশ করেছে। রাফার শাবোরা শরণার্থী শিবিরে শিশুরা একটি ব্যানার বহন করে, যাতে লেখা ছিল ‘কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আমাদের পাশেই থেক’ এবং ‘আমাদের শিক্ষা ও জীবনের অধিকার লঙ্ঘন একটি যুদ্ধাপরাধ।’ গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আরো ৬৬ ফিলিস্তিনির প্রাণহানি : গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরো অন্তত ৬৬ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছে আরো ১৩৮ জন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে আনাদোলু এজেন্সি এ তথ্য জানিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলি দখলদার (বাহিনী) গাজা উপত্যকায় বসবাসরত পরিবারের ওপর সাতটি গণহত্যা চালিয়েছে। এ হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৬৬ জন নিহত ও ১৩৮ জন আহত হয়েছে। এতে আরো বলা হয়েছে, ‘অনেক মানুষ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় আটকা পড়েছে কারণ উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছে না।’ ফের ইসরায়েলে রকেট ছুড়ল হামাস : ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাসের সশস্ত্র শাখা আল-কাসাম ব্রিগেড বলেছে, লেবাননের দক্ষিণ সীমান্ত থেকে তাদের যোদ্ধারা গতকাল সোমবার উত্তর ইসরায়েলের একটি সামরিক অবস্থানে বেশ কয়েকটি রকেট নিক্ষেপ করেছে। গতকাল সামাজিক মাধ্যম টেলিগ্রামে এক বিবৃতিতে আল-কাসাম ব্রিগেড বলেছে, ‘গাজা এবং অধিকৃত পশ্চিম তীরে জায়নবাদী শত্রæর (ইসরায়েল) গণহত্যার প্রতিক্রিয়া হিসেবে হামাস যোদ্ধারা দক্ষিণ লেবানন থেকে একটি ইসরায়েলি সামরিক অবস্থানের দিকে একটি রকেট ব্যারেজ ছুড়েছে। এদিকে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গণমাধ্যমকে বলেছে, ‘প্রায় ২০টি রকেট লেবানন থেকে ইসরায়েলি ভূখণ্ডে প্রবেশ করে, তবে বেশির ভাগ রকেট আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে ভূপাতিত করা হয়েছে।’ এ হামলায় কোনো আহত বা ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি বলেও দাবি করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। এদিকে হামাসের একটি প্রতিনিধি দল গতকাল সোমবার মিশরে পৌঁছানোর প্রত্যাশিত সময়ে সর্বশেষ রকেট হামলার খবর এলো, যেখানে তারা গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মি মুক্তির জন্য ইসরায়েলের সর্বশেষ প্রস্তাবে সাড়া দেয়ার কথা ছিল। এর আগে গত ২১ এপ্রিল, কাসাম ব্রিগেড উত্তর ইসরায়েলে রকেট হামলার দাবি করেছিল। যা গত জানুয়ারিতে দক্ষিণ বৈরুতে হিজবুল্লাহর শক্তিশালী ঘাঁটিতে ইসরায়েলের হামলায় হামাসের ডেপুটি লিডার সালেহ আল-আরুরি এবং ছয়জন যোদ্ধা নিহত হওয়ার প্রতিক্রিয়া ছিল। যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনায় বসতে মিসরে হামাস নেতারা, ব্লিংকেন সৌদিতে : গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনায় বসতে গতকাল সোমবার মিসরের কায়রোতে গেছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের প্রতিনিধি দল। জিম্মি চুক্তি এবং গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে ইসরায়েলের সর্বশেষ প্রস্তাবের উত্তর দেবে এই দলটি, জানিয়েছে রয়টার্স। গাজায় বিগত প্রায় সাত মাস ধরে চলমান যুদ্ধে বিরতি টানতে মধ্যস্থতার চেষ্টা করছে মিসর, কাতার এবং যুক্তরাষ্ট্র। যুদ্ধবিরতি, হামাসের কব্জায় থাকা জিম্মিদের মুক্তি এবং গাজায় ত্রাণ পৌঁছানোর জন্য বৈশ্বিক চাপ সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত হামাস ও ইসরায়েলের একটি কার্যকরী যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে আসতে পারেনি। বারবারই তাদের আলোচনা ভেস্তে গেছে বিভিন্ন কারণে। এই আলোচনায় হামাস স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছিল, যা মেনে নিতে অস্বীকার করে ইসরায়েল। তবে এবার হয়তো এই আলোচনা আলোর মুখ দেখতে পারে, কারণ হামাস ও ইসরায়েল উভয় পক্ষ থেকেই ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে। রবিবার হামাস জানিয়েছে, ইসরায়েলের সর্বশেষ প্রস্তাব নিয়ে তাদের বড় কোনো আপত্তি নেই। সংবাদ মাধ্যমকে এক হামাস কর্মকর্তা জানান, ইসরায়েলের পক্ষ থেকে নতুন কোনো বাধা না এলে পরিবেশ অনুকূল মনে হচ্ছে। এদিকে ইসরায়েলের দুই কর্মকর্তার বরাত দিয়ে অ্যাক্সিওস সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে, ইসরায়েলের ওই প্রস্তাবে গাজায় শান্তি ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে আলোচনা করা হবে, তবে অবশ্যই সব জিম্মির মুক্তির পর। গাজায় চলমান যুদ্ধ শেষ করার ব্যাপারে এই প্রথম ইঙ্গিত দিল ইসরায়েল। এছাড়া যুদ্ধবিরতির আলোচনার সঙ্গে সম্পৃক্ত এক হামাস সূত্র গণমাধ্যমকে জানিয়েছে, ইসরায়েলের নতুন এই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করতে ইতিবাচক হামাস, এছাড়া স্থায়ী যুদ্ধবিরতি, বাস্তচ্যুত মানুষের পুনর্বাসন, জিম্মি মুক্তি এবং গাজার মুক্তি নিয়ে ইসরায়েলের সঙ্গে একটি সমঝোতায় পৌঁছাতে চায় তারা। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন গতকাল সৌদি আরবের রিয়াদে পৌঁছেছেন। যুদ্ধবিরতি এবং গাজায় ত্রাণ প্রবেশ নিশ্চিত করতে মধ্যপ্রাচ্যে এই সফর শুরু করেছেন তিনি। উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্রগোষ্ঠী হামাস। এদিন ইসরায়েলি ভূখণ্ডে পাঁচ হাজারের বেশি রকেট হামলা চালায় গোষ্ঠীটি। পাশাপাশি ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় ইরেজ সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করে অতর্কিত হামলা চালায় হামাস যোদ্ধারা। তারপর ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী। পরে ২৮ অক্টোবর থেকে অভিযানে যোগ দেয় স্থল বাহিনীও। ৬ মাসের বেশি সময় ধরে চলা ইসরায়েলি বর্বরোচিত হামলায় ইতোমধ্যেই নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এছাড়াও ৭৭ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এছাড়া গাজার হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে, যা গত ৭৫ বছরে ফিলিস্তিনিদের জন্য সবচেয়ে মারাত্মক সংঘর্ষ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। জাতিসংঘের মতে, গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ বাসিন্দা ইসরায়েলি আক্রমণে বাস্তুচ্যুত এবং তাদের সবাই খাদ্য নিরাপত্তাহীন। অন্যদিকে গাজায় ত্রাণ সরবরাহ কমেছে প্রায় অর্ধেক। অন্যদিকে হামাসের হামলায় ইসরায়েলে নিহত হয়েছেন ১ হাজার ২০০ জন। পাশাপাশি ইসরায়েল থেকে প্রায় ২৪০ জনকে জিম্মি হিসেবে গাজায় নিয়ে যায় হামাস।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App