সাজে ওষ্ঠরঞ্জনী!
সাদিকুর রহমান সাকিব
প্রকাশ: ১৪ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ঠোঁটের সাজ যদি নিখুঁত না হয়, তাহলে পুরো সাজটাই মাটি! কারণ, মুখের এই অংশেই সবচেয়ে উজ্জ্বল রং ব্যবহার করা হয়। আর তাতে কোনও গলদ থাকলে তা নজরেও পড়ে বেশি। তাই লিপস্টিক নিখুঁতভাবে দেওয়া জরুরি। লিপস্টিকের বাংলা হল ওষ্ঠরঞ্জনী। অর্থাৎ অধর ও ওষ্ঠকে রাঙিয়ে তোলে যে জিনিস। কিন্তু এ শব্দের ব্যবহার আলঙ্কারিক প্রয়োগ ছাড়া বিশেষ নেই। বহুল ব্যবহারে লিপস্টিক শব্দটাই ঢুকে পড়েছে বাংলা শব্দভাণ্ডারে।
ইতিহাস থেকে জানা
লিপস্টিক নামের প্রচলন হয়েছে ১৮৮০ সালে। সর্বপ্রথম বাণিজ্যিক লিপস্টিক উৎপাদনে ফ্রান্সের নাম উঠে আসে। ১৮৮০ সালে প্যারিসে সুগন্ধি শিল্পেই তৈরি হয় বাণিজ্যিক লিপস্টিক। ১৮৯০ সালের শেষদিকে ইউরোপ এবং আমেরিকা জুড়ে লিপস্টিক বিক্রি করা শুরু হয় এবং এর প্রসারে বিজ্ঞাপন প্রচারও শুরু হয়। সেসময় লিপস্টিক কাগজের কৌটায় বা টিউবে বিক্রি করা হতো। ১৯১৫ সালে মরিস লেভি সর্বপ্রথম ধাতব কৌটার লিপস্টিক তৈরি করলেন যা ঠেলে উপরে তোলা যায়। তারই হাত ধরে আধুনিক লিপস্টিকের প্রথম ধাপ সম্পন্ন হয়। লিপস্টিকটি ছিল সহজে বহনযোগ্য এবং সাধারণ নারীদের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে।
যা আমরা আজ আধুনিক লিপস্টিক বলে জানি তার নাম সুইভেল-আপ লিপস্টিক। এটি সর্বপ্রথম উদ্ভাবন হয় ১৯২৩ সালে। এই লিপস্টিকের উদ্ভাবক জেমস ব্রুস জুনিয়র এটিকে বলেছিলেন টয়লেট আর্টিকেল।
সাজ নিয়ে নিরীক্ষা অনেকেরই পছন্দ। শুধু বন্ধু বা স্বজনদের পার্টি তো নয়, আজকাল সাজের নতুন নতুন ধারা নিয়েও আগ্রহের কমতি নেই ফ্যাশনসচেতনদের। নিজের নতুন রূপ আবিষ্কার, ছবি তোলা, কনসার্ট, ফ্যাশন শো কিংবা শুধুই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঝকঝকে একটা প্রোফাইল তৈরির জন্যও সাজেন অনেকে।
আন্তর্জাতিক সৌন্দর্যধারায় এসেছে ঠোঁটের সাজের আকর্ষণীয় নানা ট্রিকস। চাইলে তাই সাজে এ ধারা অনুসরণ করা যেতে পারে।
ত্বকের আন্ডারটোন
ত্বকের আন্ডারটোন অর্থাৎ ত্বকের ভেতরকার রং সম্পর্কে জানা লিপস্টিক কেনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আপনি ওয়ার্ম আন্ডারটোনের হলে কমলা বা লালচে রঙ ঘেষা বাদামি, কমলা, খয়েরি টোনের লিপস্টিকগুলোতে চমৎকার দেখাবে। আর কুল আন্ডারটোনের যারা তাদের লাল, বেগুনি, গোলাপি টোনের লিপস্টিকে দারুণ মানায়।
ভিন্ন রঙের ঠোঁট
সাজে বোল্ড স্টেটমেন্ট আনতে চাইলে ঠোঁট সাজানো যেতে পারে দুই রঙে। যারা নিরীক্ষাধর্মী বা সাহসী সাজ পছন্দ করেন, তাদের জন্য এ নতুন বিউটি ট্রেন্ড আদর্শ হতে পারে। পশ্চিমে অনেকেই এখন সম্পূর্ণ বিপরীত দুটি রং দিয়ে নিজেদের ঠোঁট সাজাচ্ছেন। চাইলেই পার্টি পোশাক থেকে দুটি রং বেছে সেই রং দিয়ে ঠোঁট রাঙানো যেতে পারে। আবার একরঙা পোশাক হলে পোশাকের রং এবং এর বিপরীত কোনো রংও বেছে নেওয়া যেতে পারে।
গাঢ় লাল বা মেরুন
ঠোঁটের সাজে লাল বা গাঢ় মেরুন রঙের আবেদন কখনোই কমার নয়। একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে, ঠোঁটে লাল রঙের লিপস্টিক লাগালে ত্বকের উজ্জ্বলতা অনেকাংশে বেড়ে যায়। সাজে পূর্ণতা পেতে লাল রঙের লিপস্টিক বেছে নিতে পারেন।
ত্বকের বেজ মেকআপ মিনিমাল হলেও এ রঙে অনায়াসে ঠোঁট রাঙিয়ে নেওয়া যাবে। এ ক্ষেত্রে চোখের সাজ যথাসম্ভব হালকা রাখার চেষ্টা করতে হবে। তাহলে সাজে একটা স্নিগ্ধ ভারসাম্য বজায় থাকবে।
ফিরে এসেছে মভ
সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম টিকটক বিউটি ইনফ্লুয়েন্সারদের হাত ধরে নতুন করে ট্রেন্ডি হয়েছে মভ লিপস্টিক। এই স্যাত স্যাত বৃষ্টি ভেজা গরমের সকাল বা দুপুরের স্নিগ্ধ সাজের জন্য এ রঙের লিপস্টিক বেছে নেওয়া যেতে পারে। যেকোনো ধরনের হালকা রঙের পোশাকের সঙ্গে মভ বেশ ভালো দেখায়।
লিপ স্টেইন ও টিন্ট
যারা ঠোঁটের সাজ হালকা রাখতে চান, তারা লিপস্টিকের পরিবর্তে বেছে নিতে পারেন লিপ টিন্ট বা স্টেইন। এখন এগুলোর জনপ্রিয়তা অনেক বেশি। লিপ স্টেইন গাঢ় টোনের হয় আর লিপ টিন্ট হয় হালকা টোনের। ঠোঁটে প্রাকৃতিক, শিয়ার পিগমেন্ট আনতে চাইলে এগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে।
নব্বইয়ের বাদামি
গত বছর থেকেই দেখা যাচ্ছে আন্তর্জাতিক বিউটি ট্রেন্ডে নব্বই দশকের মেকআপ ট্রেন্ডের আনাগোনা। সেই ধারাবাহিকতায় এ বছর বেশ জোরেশোরে ফিরে এসেছে ঠোঁটের সাজে বাদামি রং। আন্তর্জাতিক ফ্যাশন উইকের রানওয়ে থেকে টিকটক সবখানেই সাজের এ ধারার জয়জয়কার। এবার ঈদে ঠোঁটের সাজে নানা শেডের বাদামি রং বেছে নেওয়া যেতে পারে। লালের মতো এ রংও সব পোশাকের সঙ্গে মানিয়ে যায়। নব্বই দশকে যেভাবে বাদামি রঙে ঠোঁট সাজানো হতো, সেভাবেও সাজানো যেতে পারে।
এ জন্য প্রথম নিজের পছন্দের শেডের বাদামি রঙের লিপস্টিক বেছে নিতে হবে। এ লিপস্টিক লাগানোর আগে পছন্দের শেডের চেয়ে এক বা দুই শেড গাঢ় রঙের লিপ লাইনার দিয়ে ঠোঁট এঁকে নিতে হবে। সবশেষে লিপস্টিকের ওপর বাদামি বা স্বচ্ছ রঙের লিপগøস লাগাতে হবে।
মডেল : বিদ্যা সিনহা মিম
সূত্র : এলে, ইন স্টাইল, ক্যানভাস ও হালফ্যাশন