পরিচালক যখন অভিনেতা
প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
পরিচালকের ‘অ্যাকশন’ শুনেই ক্যামেরার সামনে নিজেদের মেলে ধরেন অভিনয়শিল্পীরা। কিন্তু মাঝে-মধ্যে পরিচালকদেরও সাধ জাগে কোনো চরিত্রে ডুবে যেতে। অনেকে আবার অনুরোধে ঢেঁকি গিলেও পরিচালক থেকে অভিনেতা বনে যান। পরিচালক হয়েও অভিনয় দিয়ে মুগ্ধ করা ঢালিউড, টালিউড ও বলিউড অঙ্গনের কয়েকজনের খোঁজ জানিয়ে মেলার এই প্রতিবেদন
ঢালিউড
খান আতাউর রহমান
চিত্রপরিচালক হওয়ার আগে ‘আনিস’ নামে বেশকিছু ছবির নায়ক ছিলেন খান আতা। ‘জাগে হুয়া সাভেরা’ তেমনই একটি ছবি। নিজের পরিচালিত ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’ ছবিতে আবার তিনি মোহনলাল। অন্যের পরিচালনায় অজস্র ছবিতে অভিনয় করেছেন দর্শকদের অত্যন্ত পছন্দের এই পরিচালক। কালজয়ী অনেক ছবিতে তার অভিনয়ের স্বাক্ষর বিদ্যমান।
চাষী নজরুল ইসলাম
কখনই কোনো ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেননি চাষী নজরুল ইসলাম। তবে অতিথি চরিত্রে তিনি ছবি করেছেন প্রচুর। পরিচালক হিসেবে ছিলেন খ্যাতিমান। পর্দায় এলেই দর্শক তাকে চিনতে পেরেছেন। পরিচালকদের অনুরোধে অনেক ছবিতেই অভিনয় করা হয়ে যায় মুক্তিযুদ্ধ ও সাহিত্যভিত্তিক ছবির জন্য প্রশংসিত এই নির্মাতার।
দীলিপ বিশ্বাস
দীলিপ বিশ্বাস ছিলেন কমেডি অভিনেতা। প্রচুর ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। এক পর্যায়ে অভিনয় ছেড়ে তিনি পরিচালনাকেই ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নেন। ‘বন্ধু’, ‘দাবী’, ‘আসামী’, ‘আনারকলি’, ‘অস্বীকার’, ‘অপেক্ষা’, ‘অকৃতজ্ঞ’, ‘অজান্তে’র মতো প্রশংসিত, পুরস্কৃত, নন্দিত ছবি পরিচালনা করে নিজের অভিনেতা পরিচয়টিকে চিরতরে মুছে ফেলেন দীলিপ বিশ্বাস।
আমজাদ হোসেন
দেশের তাবৎ পরিচালকদের মধ্যে সবচেয়ে দক্ষ ও জনপ্রিয় অভিনেতা বলতে গেলে আমজাদ হোসেনের কথাই আসবে। দেশের অনেক কালজয়ী ছবির নেপথ্যের এই মানুষটি ‘জীবন থেকে নেয়া’সহ অগণিত ছবিতে অভিনয় করেছেন। পরিচালনায় যেমন কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন, তেমনই অভিনেতা হিসেবেও দর্শকদের কাছে তার আলাদা গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।
শহীদুল ইসলাম খোকন
তিন-চারটি ছবি পরিচালনার পরপরই নায়ক বনে যান খোকন। ‘সন্ত্রাস’, ‘উত্থান পতন’ ছবিতে নায়ক ছিলেন নব্বই দশকের সবচেয়ে মেধাবী এই পরিচালক। একপর্যায়ে নিজের প্রতিটি ছবির একটি দৃশ্যে দেখা যেতে থাকে তাকে। তবে পরিচালকদের অনুরোধে প্রায়শ নিজের চেহারাটিকে বড় পর্দায় নিয়ে আসতেন ‘ভণ্ড’, ‘লম্পট’, ‘অপহরণ’-এর এই নির্মাতা।
কাজী হায়াৎ
কাজী হায়াৎ এখন চলচ্চিত্রের ব্যস্ত অভিনেতা। অথচ বছর কয়েক আগে কেবল নিজের ছবিতেই মুখ দেখাতেন তিনি। কখনো কখনো গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র বেছে নিতেন নিজের জন্য। সেসব চরিত্রের দাবি মিটিয়েই অভিনয় করতেন ‘ত্রাস’, ‘দাঙ্গা’, ‘দেশপ্রেমিক’ ইত্যাদি ছবির এই পরিচালক। আর এতেই একজন নতুন অভিনেতাকে পেয়েছে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি।
কমল সরকার
মূলত কাহিনিকার হলেও এক সময় ‘দাঙ্গাবাজ’, ‘নিষ্পাপ আসামী’ ছবিতে নায়ক হয়েছিলেন কমল সরকার। তারপর নায়ক হিসেবে সফলতা না পাওয়ায় স্ক্রিপ্ট লেখাতেই মনোযোগ দেন। একটি-দুটি ছবিতে তাকে শখের বশে অভিনয় করতে দেখা গেলেও অভিনয়টাকে কখনো পেশা হিসেবে নেননি ‘অন্ধ বিশ্বাস’ ছবির জন্য জাতীয় পুরস্কার পাওয়া এ সংলাপ রচয়িতা।
টালিউড
ঋতুপর্ণ ঘোষ
প্রয়াত এই পরিচালক শেষ জীবনে নাম লেখান অভিনয়ে। নিজের জগতে তিনি ছিলেন শীর্ষে। ঋতুপর্ণকে আরেক অভিনেতা-পরিচালক কৌশিক গাঙ্গুলীর ‘আরেকটি প্রেমের গল্প’ ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায়। ঋতুপর্ণ তার শেষ ছবি ‘সত্যান্বেষি’তে বলিউডের বাঙালি পরিচালক সুজয় ঘোষকেও অভিনয় করিয়ে ছাড়েন।
গৌতম ঘোষ
তিনি জাতীয় পুরস্কারজয়ী চিত্র পরিচালক। ‘পদ্মা নদীর মাঝি’খ্যাত এই নির্মাতা সুদক্ষ অভিনেতাও বটে। তার অভিনয় যোগ্যতার পরিচয় পাওয়া যায় সৃজিত মুখার্জির ‘বাইশে শ্রাবণ’ ছবিতে। একই পরিচালকের ‘চতুষ্কোণ’ ছবিতে অভিনয় করেছেন গৌতম ঘোষ। এখানে আরো একজন চিত্র পরিচালক কাম অভিনেত্রী অপর্ণা সেনকেও
অভিনয় করতে দেখা যায়।
কৌশিক গাঙ্গুলি
নিজের ছবি ‘বাস্তুশাপ’-এ যেমন গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন, তেমনই প্রচুর ছবিতে ছোটখাটো চরিত্রও ফিরিয়ে দেননি। পরিচালক হলেও তিনি অভিনয়টা করেন বেশ গুছিয়ে। ‘শূন্য এ বুকে’, ‘খাদ’, ‘রংমিলান্তি, ‘ল্যাপটপ’, ‘শব্দ’, ‘বাস্তুশাপ’, ‘কথামৃত’-এর মতো নজরকাড়া ছবির এই পরিচালক পরিচালনার পাশাপাশি অভিনয়েও ব্যস্ত সময় পার করছেন।
অরিন্দম শীল
অরিন্দম শীল এই মুহূর্তে টালিগঞ্জের অত্যন্ত আদরণীয় পরিচালক হলেও বছর চারেক আগে অভিনেতা পরিচয়েই তিনি ছিলেন তৃপ্ত। খুব বড় মাপের অভিনেতা না হলেও ব্যস্ত অভিনেতা ছিলেন অরিন্দম। নিজের ছবিতে অভিনয় থেকে বিরত থাকলেও তিনি অভিনয়ে একদম বিরতি নেননি। যদিও নির্মাতা হিসেবে তার ব্যস্ততা এখন একটু বেশিই।
অঞ্জন দত্ত
প্রথম পরিচয় তার সংগীতশিল্পীর হলেও গোড়াতে তিনি অভিনেতা এবং পরিচালক। ‘বং কানেকশন’, ‘চলো লেটস গো’, ‘ম্যাডালি বাঙালি’, ‘দত্ত ভার্সাস দত্ত’, ‘রঞ্জনা আমি আর আসবো না’-এর মতো ছবির পরিচালক একটা সময় চুটিয়ে অভিনয়ও করেছেন। এখন অভিনয়ে সময় দেন কম, তবে ছেড়ে দেননি একেবারেই।
সৃজিত মুখার্জি
টুকটাক অভিনয়ে সব সময় দেখা পাওয়া যায় এই সময়ের অন্যতম নন্দিত পরিচালক সৃজিত মুখার্জির। ‘বাইশে শ্রাবণ’, ‘অটোগ্রাফে’, ‘চতুষ্কোণ’ জুলফিকারের এই পরিচালক খুব বেছে অভিনয় করেন না। ‘বাপি বাড়ি যা’র মতো ছবিতে ছোট চরিত্রেও তাকে পাওয়া গেছে। এক-দুটি দৃশ্যেও অভিনয় করেছেন সৃজিত।
শিবু প্রসাদ
বলতে গেলে এ সময়ে টালিগঞ্জের প্রথম সারির কোনো পরিচালকই অভিনয় করা থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারেননি। এমনকি শিবু প্রসাদও নন। ‘বেলা শেষে’ ছবির পর এই পরিচালক এখন প্রশংসার জোয়ারে ভাসছেন, ভাসছেন সাফল্যের জোয়ারেও। নিজের পরিচালিত ‘রামধনু’ ছবির কেন্দ্রীয় পুরুষ চরিত্রে তার অভিনয় ছিল দারুণ উপভোগ্য। প্রশংসা পেয়েছেন তার অভিনীত ‘হামি’ ও ‘কণ্ঠ’ ছবি দুটিও।
বলিউড
অনুরাগ কাশ্যপ
বলিউডে এই সময়ের সবচেয়ে শক্তিমান নির্মাতাটির নাম অনুরাগ কাশ্যপ। তারকা অভিনেতা তৈরিতে যার হাত সিদ্ধহস্ত। অনেক আনকোরা অভিনেতার কাছ থেকে বের করে এনেছেন অসাধারণ অভিনয়। সেই অনুরাগও নেমে গেলেন অভিনয়ে, তাও আবার মূল ভিলেনের চরিত্র। গত বছর ‘আকিরা’ ছবিতে তিনি ফাটিয়ে দিয়েছেন বলেই দর্শকরা মনে করছেন।
প্রকাশ ঝা
গঙ্গাজল, অপহরণ, সত্যাগ্রহ, চক্রব্যুহের মতো সমসাময়িক ছবি নির্মাণের জন্য সুপরিচিত প্রকাশ ঝা। তিনি যে চমৎকার অভিনেতাও, তা জানা গেল প্রকাশের শেষ ছবি ‘গঙ্গাজল’-এর সিক্যুয়েলে। তিনি যে শুধু দুর্দান্ত অভিনয়ই করেছেন তা নয়। ছবির সবচেয়ে আকর্ষণীয় চরিত্রটি ছিল তারই। ‘জয় গঙ্গাজলে’ পুলিশ চরিত্রটি দর্শকদের মন জয় করেছে।
ফারাহ খান
ম্যায়নে পিয়ার কিয়া ছবির জন্য নাকি অডিশন দিয়েছিলেন কোরিওগ্রাফার-পরিচালক ফারাহ খান! ‘ম্যায় হু না’ ও ‘ওম শান্তি ওম’ ছবির এই সফল পরিচালকের অভিনয় দক্ষতা জানা যায় ‘শিরিন ফরহাদ কি তো নিকাল পড়ি’তে শিরিন চরিত্রে তার মন মাতানো অভিনয়ের পর। সব সময় টিভিতে তার চেহারা দেখা গেলেও কেন্দ্রীয় চরিত্রে ওটাই তার প্রথম অভিনয়।
তিগমাংশু ঢুলিয়া
‘গ্যাংস অব ওয়াসেপুর’ ছবিতে প্রথম তাকে দেখা গেল নিজেকে উজাড় করে অভিনয় করতে। ‘পান সিং তোমার’-এর মতো প্রশংসিত ছবির এই পরিচালক ‘শহীদ’ এবং ‘মাঝি দ্য মাউন্টেনমেন’ ছবিতেও অভিনয় করেছেন। অভিনয়টা তার মনে ধরেছে দর্শকদের এবং সমালোচকদের। তিগমাংশু ঢুলিয়া ভালোভাবেই জানেন কীভাবে অভিনয় করতে হয়।
মহেশ মাঞ্জেরকর
‘বাস্তব’-এর মতো সমালোচক প্রশংসিত ছবি কিংবা ‘অস্তিত্ব’-এর মতো জাতীয় পুরস্কারজয়ী ছবির পরিচালক মহেশ মাঞ্জেরকরের পরিচিতি এখন অভিনেতা হিসেবেই বেশি। ‘কাটে’, ‘মুসাফির’, ‘বাজিরাও মাস্তানি’, ‘সøামডগ মিলিওনেয়ার’, ‘ওয়ান্টেড’, ‘দাবাং’সহ অসংখ্য ছবিতে অভিনয় করেছেন মহেশ। দক্ষ অভিনেতা হিসেবে খ্যাতি রয়েছে তার। বিশেষত নেতিবাচক চরিত্রে তিনি দুর্দান্ত।
করণ জোহর
উপস্থাপক হিসেবে তিনি আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত। অতিথি চরিত্রে অভিনয় করেন ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’ ছবিতে। ‘কুচ কুচ হোতা হ্যায়’ পরিচালকের ভেতর যে অভিনয় প্রতিভাও রয়েছে তা আবিষ্কৃত হয় অনুরাগ কাশ্যপের ‘বোম্বে ভেলভেট’ ছবিতে। অনস্ক্রিনে হরহামেশা তাকে দেখা গেলেও করণ জোহর সেবারই প্রথম রুপালি পর্দায় অভিনয় করেন নেতিবাচক চরিত্রে।
ফারহান আখতার
তার প্রথম পরিচালিত ছবি বদলে দিয়েছিল তরুণদের ছবি দেখার জগৎ। তখনো কারো জানা ছিল না এই ফারহান আখতারই একদিন পোস্টার-বয় হবেন। তাকে দেখতে দর্শকরা ছুটে গেছেন সিনেমা হলে। ‘রক অন’, ‘ভাগ মিলকা ভাগ’, ‘জিন্দেগি না মিলেগি দোবারা’-এর মতো হিট ছবিতে অভিনয় করেছেন তারকা অভিনেতা ফারহান।
- মেলা প্রতিবেদক