বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মাচায় তরমুজ চাষ ঝিকরগাছায়
প্রকাশ: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
আতাউর রহমান জসি, ঝিকরগাছা (যশোর) থেকে : যশোরের ঝিকরগাছায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মাচায় গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষে সাড়া ফেলেছেন উচ্চশিক্ষিত যুবক সফল কৃষি উদ্যোক্তা কামরুজ্জামান।
ঝিকরগাছা উপজেলার পানিসারা গ্রামের নবীছ উদ্দিন ছেলে কামরুজ্জামান মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর খুলনা আঞ্চলিক অফিসের একজন গবেষণা কর্মকর্তা। পেশায় তিনি একজন সরকারি কর্মকর্তা হলেও জেলা কৃষি প্রশিক্ষণ অফিসার চন্দ্র সানার অনুপ্রেরণায় বর্ষাকালীন থাইল্যান্ড ব্ল্যাক ডন জাতের তরমুজ চাষে ঝুঁকে পড়েন।
তিনি বলেন, খুলনা মা মনি সিডস থেকে বীজ সংগ্রহ করে বিশ শতক জমিতে বাণিজ্যিকভাবে তরমুজ চাষ শুরু করি। এ অঞ্চলে মূলত ব্ল্যাক বেবি, ব্ল্যাক কিং ও ব্ল্যাক ডন জাতের তরমুজের চাষ হয়ে থাকে। এটি একটি দেশীয় ফল, যেটা ১২ মাসই চাষ করা যায়। থাইল্যান্ডের ব্ল্যাকডন জাতের তরমুজ ৬০ দিনেই বাজারজাত করা সম্ভব এবং লাভজনক। ইতোমধ্যে তিনি ৫০০ কেজি তরমুজ বাজারজাত করে ১ হাজার ৬০০ টাকা মন দরে বিক্রি করে বেশ লাভবান হয়েছেন। কালো রঙের তরমুজের ওজন গড়ে ২.৫ থেকে ৩.৫ কেজি। সাইজে ছোট এবং সবার ক্রয়ক্ষমতার নাগালে থাকায় এর চাহিদা খুব বেশি। এই তরমুজ খেতে অনেক সুস্বাদু ও পুষ্টিকর।
সরজমিন দেখা যায়, মাচায় থোকাই থোকাই তরমুজ ঝুলছে এবং সেগুলো লাল জালি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। মূলত তরমুজগুলো যাতে ছিঁড়ে না পড়ে সে কারণে তরমুজগুলো জাল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। দূর-দূরান্ত থেকে পাইকাররা এসে ভিড় জমাচ্ছেন কামরুজ্জামানের বাগানে। তার দেখাদেখি এলাকার অন্য কৃষকরাও এ জাতীয় তরমুজ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।
কৃষি উদ্যোক্তা মো. কামরুজ্জামান বলেন, আমার চাকরির পাশাপশি শখের বসত কৃষিকাজ করি। তারই ধারাবাহিকতায় আমি প্রথমে ইউটিউবে দেখে তরমুজ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠি। অল্প পরিশ্রমে বেশি ফলন ও ভালো দাম পেয়ে এ চাষে আমার আগ্রহ ও উৎসাহ আরো বেড়েছে। তরমুজ চাষে গোবর, ডিএপি সার, পটাশ, জিপসাম, সেচ, বাঁশ, সুতা, কীটনাশক ও লেবারসহ খরচ হয়েছে প্রায় ৩০-৩৫ হাজার টাকা। এছাড়া তিনি ১৩ শতক জমিতে উচ্ছে করলা বেগুন কাঁচামরিচসহ অন্যান্য সবজি চাষ করছেন। তিনি বাড়ির উঠানের পাশে বস্তায় আদা চাষ করে ইতোমধ্যে মানুষের নজর কেড়েছেন। স্থানীয় কৃষি দপ্তরের সহযোগিতার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন পানিসারা ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জনাব অর্ধেন্দু পাঁড়ে এ ব্যাপারে নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তবে কৃষিক্ষেত্রে আর্থিক সহযোগিতা ও কৃষি প্রণোদনা তিনি পান নাই। তিনি বলেন এ তরমুজ চাষে পলিসেডের ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পলিসেড ব্যবহারের ফলে মাটির আর্দ্রতা ঠিক থাকে, আগাছা হয় না, রোগবালাই তুলনামূলকভাবে কম হয়। তিনি বিএডিসির পলিসেড বরাদ্দের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
এ উপজেলায় বর্ষাকালীন মাচায় তরমুজ চাষের তথ্য জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. মাসুদ হোসেন পলাশ বলেন, আমাদের এই উপজেলাতে প্রায় ২ হেক্টর জমিতে ব্ল্যাক গোল্ড হাইব্রিড জাতের রঙিন তরমুজ চাষ হয়। কিছুদিন আগে প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ার কারণে এ অঞ্চলে তরমুজ চাষে একটু সমস্যা হয়েছে। তবে আমাদের এলাকা বেলে-দোঁয়াশ মাটি হওয়ার কারণে খুব একটা অসুবিধা হয় নাই এবং কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কোনো ঘাটতি হবে না।