গাজী টায়ারে আগুন নিয়ে তদন্ত কমিটি
৩টি ফ্লোর ধসে যাওয়ায় উদ্ধারকাজ সম্ভব নয়
প্রকাশ: ২৯ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি : নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার রূপসী এলাকায় অবস্থিত গাজী টায়ার কারখানার ছয় তলা ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এখনো নিখোঁজদের স্বজনরা কারখানার সামনে অবস্থান নিয়ে অপেক্ষা করছেন। গতকাল বুধবার বিকালে নারায়ণগঞ্জ জেলা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হামিদুর রহমানের নেতৃত্বে ৮ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটির সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
পরিদর্শন শেষে সংবাদ সম্মেলনে নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হামিদুর রহমান বলেন, আমি ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে কথা বলেছি তারা উদ্ধার কার্যক্রম চালাতে পারবেন কিনা। তারা জানিয়েছেন, ৪র্থ, ৫ম ও ৬ষ্ঠ তলার ফ্লোর ধসে গেছে এবং এখনো আগুন রয়েছে। এ মুহূর্তে উদ্ধার কার্যক্রম সম্ভব নয়। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৮ সদস্যর একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমরা তদন্ত কমিটি প্রাথমিকভাবে পরিদর্শনে এসেছি। আমরা দেখি, পরবর্তীতে আমরা একটি প্রতিবেদন আকারে দেব।
তিনি আরো বলেন, অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে টেকনিশিয়ানরা আমাদের মতামত দেবে। এছাড়া স্থানীয় পর্যায়ে যারা ফায়ার সার্ভিসের দায়িত্বে রয়েছেন তারা উদ্ধার কার্যক্রম চালাতে পারবেন কিনা তা জানাবেন। নয়তো আরো যারা দক্ষ টেকনিশিয়ান রয়েছে তাদের সহযোগিতা নিয়ে কার্যক্রম চালাব। আমরা আশা করি ১০ দিনের মধ্যে একটি তদন্ত রিপোর্ট দিতে পারব।
নিখোঁজদের বিষয়ে তিনি বলেন, নিখোঁজদের নাম ঠিকানা লিপিবদ্ধ করে রাখছি। আমরা আসলে কয়জন ভেতরে ছিল বা কয়জন মারা গেছেন আমরা সঠিকভাবে বলতে পারছি না। ফায়ার সার্ভিসের ড্রোন দিয়ে দেখা হয়েছে। লাশ কিন্তু দেখেনি। আমরা মনে করছি, যেভাবে কেমিক্যাল পোড়ানো হয়েছে, আদৌ লাশ থেকে থাকলেও সেভাবে আর পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ ২১ থেকে ২২ ঘণ্টা আগুন জ¦লেছে, ততক্ষণে লাশের কিছু পাওয়ার মতো অবস্থা নেই। আপনারা বুঝতেই পারছেন ৩ থেকে ৪ ঘণ্টার মধ্যেই একটি লাশ কয়লা হয়ে যাওয়ার কথা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহযোগিতাও নেয়া হবে। ভেতরে কী হয়েছে বা বর্তমানে কী আছে এ বিষয়টি উদ্ঘাটনের চেষ্টা করব।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, শতাধিকের বেশি লোকজন ভেতরে ছিল বলে আমরা স্থানীয়ভাবে জানতে পেরেছি। তবে যারা নিখোঁজ রয়েছেন, স্বজনদের পক্ষ থেকে তাদের নাম-ঠিকানা লিপিবদ্ধ করা হচ্ছে। যারা নিখোঁজ রয়েছে তাদের ব্যাপারে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন তদন্ত কমিটির সদস্য নারায়ণগঞ্জ ‘গ’ সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ গণপূর্ত বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শক অধিদপ্তরের উপমহাব্যবস্থাপক রাজিব চন্দ্র ঘোষ, নারায়ণগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ-১ এর উপমহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী হরেন্দ্র নাথ বর্মন, নারায়ণগঞ্জ-২ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক আব্দুল মান্নান ও রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আহসান মাহমুদ রাসেল।
জানা গেছে, সাবেক পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী এবং সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীরের মালিকানাধীন রূপসী এলাকায় গাজী টায়ার কারখানা ও কর্ণগোপ এলাকায় গাজী পাইপ এবং ট্যাংক কারখানা রয়েছে। এ দুটি প্রতিষ্ঠানে প্রায় ২৫ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হওয়ার পর বিক্ষুব্ধ শত শত মানুষ লাঠিসোটা নিয়ে দুটি কারখানায় ভাঙচুর ও মালামাল লুটপাট শুরু করেন। একপর্যায়ে ওই দুটি কারখানায় আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। ২৫ আগস্ট রবিবার সন্ধ্যার দিকে কয়েকশ মানুষ লাঠিসোটা নিয়ে গাজী টায়ার কারখানায় ঢুকে আবারো ভাঙচুর ও লুটপাট শুরু করে। এ সময় দুটি পক্ষের মাঝে হাতাহাতি ও মারপিটের ঘটনা ঘটে। একটি পক্ষ ভবন ত্যাগ করলে ভবনের প্রবেশ গেট বন্ধ হয়ে যায়। একপর্যায়ে পুরো ভবনে আগুন লেগে যায়। এ আগুন পুরো ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। ভবনের ভেতরে আটকা পড়া অনেকেই স্বজনদের ফোন করে বাঁচানোর জন্য আকুতি জানায় বলে বেশ কয়েকজন স্বজন দাবি করেছেন।
খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট টানা ৩ দিন চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ১৭৬ জন ব্যক্তি নিখোঁজ রয়েছে বলে স্বজনরা দাবি করেছেন। বেশির ভাগ নিখোঁজদের বাড়ি উপজেলার মিকুলী, রূপসী কাজিপাড়া, ছাতিয়ান, মুগরাকুল, কাহিনা, বরপা, মাসাবো, তারাব, বরাব, মুড়াপাড়াসহ আশপাশের এলাকায়।