গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে জনবল সংকট
সেবাপ্রার্থীদের ভোগান্তি চরমে
প্রকাশ: ২২ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
কাজী ওহিদ, মুকসুদপুর (গোপালগঞ্জ) থেকে : জনবল সংকটে ধীর গতিতে চলছে গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের কর্যক্রম। জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে পাসপোর্ট সংক্রান্ত জরুরি সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষকে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে।
গত সোমবার সকালে সরজমিন গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে দেখা যায়, প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে সেবাগ্রহীতাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা দীর্ঘ সারিতে দাঁড়িয়ে সেবা নিতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। একজন গ্রাহককে নতুন পাসপোর্ট নেয়ার জন্য নির্ধারিত ফি পরিশোধ, অনলাইন আবেদন ফরম ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেয়ার জন্য পাসপোর্ট অফিসের নিচ তলায় ১০১ নম্বর কক্ষের সামনে দাঁড়াতে হয়। এখানে নারী ও পুরুষদের জন্য দুটি পৃথক সারি থাকলেও লোকবল সংকটের কারণে ওই কক্ষে দায়িত্বরত একজন নারী কর্মীকেই নতুন আবেদন জমা নিতে হচ্ছে। নতুন পাসপোর্টের জন্য বিপুলসংখ্যক আবেদনপত্র জমা নিতে তাকে রীতিমতো হিমশিম খেতে দেখা গেছে। পরে সেখান থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে আবেদনকারীকে ১০৩ ও ১০৫ নম্বর কক্ষে পরবর্তী কার্যক্রম (ছবি তোলা, স্বাক্ষর করা, ফিঙ্গার প্রিন্ট ও চোখের মণির ছাপ) সম্পন্ন করার জন্য পাঠানো হচ্ছে। জনবল সংকটে প্রতি কক্ষে দুজনের পরিবর্তে একজনকেই সেবা দিতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে। এছাড়া একজন কর্মচারী অসুস্থ থাকায় ১০৪ নম্বর কক্ষে কাক্সিক্ষত সেবা প্রদান সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে। সেবা নিতে আসা সবাইকেই সারিতে দাঁড়িয়ে সেবা নিতে হচ্ছে। পুলিশ এবং আনসার বাহিনীর সদস্যরা সেবাগ্রহীতাদের সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন। দালালের উপস্থিতি খুব একটা চোখে পড়েনি। অনেকটা দালালমুক্ত পরিবেশে সেবা প্রদান চলছে পাসপোর্ট অফিসে। প্রতিবেদনের তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে বেশ কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী ও তাদের সন্তানদেরকেও সারিতে দাঁড়িয়ে সেবা নিতে দেখা গিয়েছে।
এদিকে পর্যাপ্ত পরিমাণে বসার জায়গা না থাকায় অনেক বয়োবৃদ্ধ ও অসুস্থ রোগীদের দীর্ঘ সারিতে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থেকে বেশ বিরক্তি ও চরম ক্ষোভ প্রকাশ করছেন তারা। আলাপকালে জানা গেছে, জনবল সংকটের কারণে এ দপ্তর থেকে পাসপোর্ট সংক্রান্ত সেবা পেতে তাদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। নতুন পাসপোর্ট করতে আসা একাধিক ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পাসপোর্ট অফিসে নতুন পাসপোর্ট নেয়ার জন্য সকালে বাড়ি থেকে এখানে পৌঁছালেও কার্যক্রম শেষ করে বাড়ি ফিরতে অনেকের রাত হয়ে যায়। বিরক্তির সুরে তারা বলেন, সরকার তো আমাদের বিনা পয়সায় পাসপোর্ট দিচ্ছে না। সরকারের রাজস্ব খাতে অর্থ জমা হচ্ছে। সেই অর্থে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। যদি এই অফিসের শূন্য পদগুলোতে দ্রুত জনবল নিয়োগ দেয়া হয় তাহলে জেলাবাসীর ভোগান্তির শেষ হবে। ভোরে বাড়ি থেকে রওয়ানা দিয়ে গোপালগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসে আবেদন পত্র জমা দিয়ে বাড়ি ফিরতে আমাদের সন্ধ্যা অথবা রাত হয়ে যাচ্ছে। এতই যদি সময় লাগবে তাহলে জেলায় জেলায় পাসপোর্ট অফিস বানিয়ে কী লাভ হলো।
এদিকে গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে নবনিযুক্ত উপপরিচালকের বক্তব্য নিতে তার কক্ষে গিয়ে তাকেও বেশ কর্মব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে। উপপরিচালক মো. নুরুল হুদা বলেন, দুদিন হয়েছে আমি এখানে যোগদান করেছি। আমার এখানে মাত্র ৫ জন স্টাফ নিয়ে প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক সেবাগ্রহীতাকে সেবা দিতে বেগ পেতে হচ্ছে। এর মধ্যেও একজন স্টাফ অসুস্থতার জন্য ছুটিতে থাকায় আরো সমস্যা বেড়েছে। জনবল সংকটের কারণে এমনটি হচ্ছে। আশা করছি দ্রুতই এ সমস্যার সমাধান হবে।