মাসে সড়কে ১১ ও নৌপথে ১৭ লাখ টাকা আদায়
মেঘনায় সড়ক ও নৌপথে বেপরোয়া চাঁদাবাজি
প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
মেঘনা (কুমিল্লা) প্রতিনিধি : মেঘনায় সড়ক ও নৌপথে ব্যাপক চাঁদাবাজির অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিগত কয়েক বছর ধরে এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে একাধিকবার সংবাদ প্রকাশ করা হলেও চাঁদাবাজি বন্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি স্থানীয় প্রশাসন। তাদের গড়িমসির কারণে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে চাঁদাবাজরা। শক্তিশালী হয়ে উঠেছে চক্রটি।
সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, লাইন নিয়ন্ত্রণের নামে উপজেলার প্রত্যেক স্ট্যান্ডে অটোরিকশা ও সিএনজি থেকে চাঁদা আদায় করছে একটি চক্র। এ এলাকায় প্রায় এক হাজার অটোরিকশা ও সাড়ে তিনশ সিএনজি রয়েছে। প্রতি অটোরিকশা হতে দৈনিক ২০ টাকা করে ২০ হাজার ও মাসে ২৫০ টাকা করে ২ লাখ ৫০ হাজারসহ মোট ৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এছাড়া প্রতি সিএনজি থেকে দৈনিক ২০ টাকা করে ৭ হাজার ও মাসে ৩শ টাকা করে ১ লাখ ৫ হাজারসহ মোট ৩ লাখ ৫ হাজার টাকা আদায় করা হয়। এই দুই যানবাহন থেকে প্রতি মাসে প্রায় ১১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করছে ওই চক্রটি। এছাড়া বহিরাগত অন্যান্য গাড়ি তো আছেই। যা থেকে দৈনিক হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে চক্রটি।
সম্প্রতি উপজেলার মানিকারচর বাজারে প্রকাশ্যে চাঁদা আদায়ের একটি ভিডিও আমাদের হাতে এলে দেখা যায়, একটি ছেলে দিবালোকে পিকআপ ভ্যান আটকে চাঁদা আদায় করছে। গাড়িতে ড্রাইভারের পাশে থাকা প্রত্যক্ষদর্শী মোফাজ্জল হোসেন বলেন, আমরা সোনারগাঁও থেকে ফার্নিচার বানিয়ে পিকআপে করে মানিকারচর বাজার হয়ে রাধানগর যাচ্ছিলাম। অপরিচিত একটি ছেলে এসে আমাদের গাড়ি থামিয়ে চাঁদা দাবি করে। আমি বললাম, কিসের চাঁদা? সে বলল, থানা থেকে ডাক এনেছি। এদিকে সড়কের পাশাপাশি নৌপথেও চলছে নিয়মিত চাঁদাবাজি। মেঘনায় নৌপথে প্রতিদিন প্রায় ১৫টি বাল্কহেড চলাচল করে। প্রতি বাল্কহেড থেকে চাঁদা রাখা হয় ৩ হাজার ৮০০ টাকা। যা মাসে দাঁড়ায় ১৭ লাখ ১০ হাজার টাকা। এছাড়া এসব নদীতে চলাচলরত অন্যান্য নৌযান থেকে ১ হাজার থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করার বিষয়টি একটি চলমান রীতিতে পরিণত হয়েছে। উপজেলার উল্লেখযোগ্য পাড়ারবন্দ, কাঁঠালিয়া, শেখেরগাঁও, চালিভাঙ্গাসহ আরো কয়েকটি এলাকায় নৌপথে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে চাঁদাবাজরা তাদের রামরাজত্ব কায়েম করেছে। এদের ভয়ে মুখ খুলছেন না স্থানীয়রা।
ভুক্তভোগী নজরুল হোসেন বলেন, আমরা দুই দিন ধরে এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করি। আমরা এখন সুনামগঞ্জ থেকে আসছি, যাব দাউদকান্দি। এই নৌপথ দিয়ে আসার পথে অনেক জাগায় এক থেকে ২০০ টাকা করে দিয়ে আসছি। এবার পাড়ারবন্দ ব্রিজের গোড়ায় ৩ হাজার ৮০০ টাকা দিয়ে আসছি। অন্য আরেকটি বাল্কহেডের শের আলীও একই কথা বলেন।
এ বিষয়ে মেঘনা থানার ওসি মুহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, পুলিশ চাঁদা আদায়ে কাউকে সমর্থন করে না। যদি কেউ আমাদের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি করে তার নাম উল্লেখ করে কেউ অভিযোগ দিলে আমরা অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব।
চালিভাঙ্গা নৌপুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এ কে এম আলমগীর জাহান বলেন, মূল নদীতে চাঁদাবাজি হয় না। হয়তো শাখা নদীতে হতে পারে। আমরা কয়েকবার অভিযান চালিয়েছি, তবে চাঁদাবাজদের পাইনি। যদি কেউ আমাদের কাছে অভিযোগ দেয় তাহলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।
এ বিষয়ে মেঘনা উপজেলা চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম তাজের কাছে জানতে চাইলে তিনি মোবাইলে এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য দেননি। বলেন, আপনি অফিসে আসেন। অফিসে এলে কথা হবে।
উল্লেখ্য, গত ২৪ জানুয়ারি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেনু দাসের সভাপতিত্বে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটি, সন্ত্রাস ও নাশকতা কমিটি, মেঘনা নদী দূষণ ও দখলরোধক বিষয়ক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় সংসদ সদস্য আব্দুল মজিদ আইনকে প্রাধান্য দিয়ে ফেব্রুয়ারি মাস থেকে সব প্রকার চাঁদাবাজি বন্ধ করতে মেঘনা উপজেলার আইনশৃঙ্খলা কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন। এমনকি আর চাঁদাবাজি করতে দেয়া হবে না বলে বক্তব্য দেন এই এমপি। এর আগে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মো. সাইফুল্লাহ মিয়া রতন শিকদার উপজেলা ও জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় মেঘনার সড়ক ও নৌপথে চাঁদাবাজি বন্ধের বিষয়ে একাধিকবার আলোচনা করেছেন বলে আমাদের এই প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন।