জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প ব্যয়ে আদৌ সদ্ব্যবহার হচ্ছে কি?
প্রকাশ: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সঠিক পরিকল্পনার অভাব এবং দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে রাজধানীবাসী জলাবদ্ধতার ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাচ্ছে না। জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি দিতে ঢাকা ওয়াসা, সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন সংস্থা গত ১২ বছরে ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করলেও কার্যকর কোনো সমাধান হয়নি। কারণ হিসেবে নদী, খাল-বিলের মতো প্রাকৃতিক জলাশয় দখল ও ভরাটকে দায়ী করছেন নগর বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি তারা দায়ী করছেন অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণকেও। রাজধানীতে গত মঙ্গলবার ভোর থেকে শুরু হওয়া মুষলধারার বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় বিভিন্ন সড়ক। সকালে পথে নেমেই বিপত্তিতে পড়েন অফিসমুখী ও কর্মজীবী মানুষ এবং স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। গাড়ির ধীরগতির কারণে তৈরি হয় যানজট। অফিসগামী ও কর্মজীবী মানুষও বিড়ম্বনায় পড়েন। ভোরের কাগজের খবরে জানা যায়- মিরপুর, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, পল্লবী, বনানী, ঝিগাতলা, ধানমন্ডি ২৭ নম্বর, শাহজাহানপুর, রাজারবাগ, কাকরাইল, মালিবাগসহ বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টির পানিতে রাস্তা তলিয়ে থাকায় যানবাহন চলাচলে বিঘœ ঘটে। ফলে যানজটের সৃষ্টি হয়। মিরপুর ১০-১৩ নম্বর পর্যন্ত সড়ক ও ফুটপাত পানিতে তলিয়ে যায়। মুষলধারে বৃষ্টি হলে রাজধানীতে এমন চিত্র নিত্যকার। ঢাকা শহর ৮০-৯০ শতাংশ কংক্রিটে আচ্ছাদিত। যেখানে একটি শহরে ৩০-৩৫ শতাংশ সবুজ এবং জলাশয় থাকার কথা, সেটা তো নেই। এমন অবস্থায় নগর তো ডুববে, এটাই স্বাভাবিক। টানা বর্ষণে রাজধানী ও আশপাশের নিচু এলাকা তলিয়ে লাখ লাখ পানিবন্দি মানুষের জীবনে নেমে আসে চরম দুর্দশা। ঢাকার মতো রাজধানী শহরে এ ধরনের জলাবদ্ধতা দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন ও আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন বলছে, চলতি বছরে বর্ষা মৌসুমের আগে জলাবদ্ধতা নিরসনে বেশকিছু কাজ হয়েছে। ঢাকা ওয়াসার কাছ থেকে দীর্ঘ ৩৪ বছর পর শাখা-প্রশাখাসহ ১১টি অচল খাল, বর্জ্যে জমাটবদ্ধ ৫টি বক্স কালভার্ট ও প্রায় ২০০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে নর্দমার মালিকানা নিয়েছে সংস্থাটি। দায়িত্বভার গ্রহণের পর এসব খাল, বক্স-কালভার্ট ও নর্দমা থেকে বর্জ্য অপসারণ, সীমানা নির্ধারণ ও দখলমুক্ত কার্যক্রম শুরু করে। এছাড়া জলাবদ্ধতা নিরসনে নিজস্ব অর্থায়নে ২২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে গত ৩ বছরে ১৩৬টি স্থানে অবকাঠামো নির্মাণ ও উন্নয়ন করেছে ডিএসসিসি। প্রতিটি অর্থবছরেই ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন জলাবদ্ধতা নিরসনে বিপুল পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ রাখে। সে বরাদ্দমাফিক কাজও হয়, কিন্তু ভোগান্তি শেষ হয় না। তাই প্রশ্ন উঠেছে, জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের হাজার হাজার কোটি টাকার আদৌ সদ্ব্যবহার হচ্ছে কিনা। নগরীর জলাবদ্ধতা নিয়ে গণমাধ্যমে লেখালেখি কম হয়নি। সরকারের নানামুখী উদ্যোগ, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পরামর্শ কোনোটাই যেন কাজে আসছে না। আমরা মনে করি, জলাবদ্ধতা নিরসনে রাজধানীর খালগুলো ভূমিকা রাখতে সক্ষম। নগরীর খালগুলো উদ্ধারে কর্তৃপক্ষকে আরো সোচ্চার হতে হবে। শুধু প্রকল্পের মাধ্যমে বিপুল অর্থ ব্যয় করলে জলাবদ্ধতার সমাধান হবে না। বৃষ্টির পানি নেমে যাওয়ার পথকে সব সময় উন্মুক্ত রাখতে হবে। সর্বোপরি জলাবদ্ধতার কারণ চিহ্নিত করে তা বাস্তবায়নে কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে কিনা, সেদিকে কঠোর দৃষ্টি দিতে হবে।