রিজার্ভ বাড়াতে সরকারের উদ্যোগ
প্রকাশ: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
রিজার্ভ সংকট কাটিয়ে উঠতে উদ্যোগ নিয়েছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। বর্তমান পরিস্থিতিতে রিজার্ভ কীভাবে বাড়ানো যায়, সে বিষয়ে দাতা সংস্থা বা উন্নয়ন সহযোগীদের দ্বারস্থ হচ্ছে সরকার। এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে চলমান ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ প্রকল্পের বাকি কিস্তিগুলো সময়মতো ছাড় করার অনুরোধ করা হয়েছে। একই সঙ্গে সংস্থাটির কাছে আরো ৩ বিলিয়ন ডলার চাওয়ার পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী, ২৮ আগস্ট পর্যন্ত রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৫৯ কোটি বা ২০ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন ডলার। গত জুলাই মাসের একই সময়ে রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার। সেই হিসাবে রিজার্ভ সামান্য কিছু বেড়েছে। এ ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। রিজার্ভ বৃদ্ধির নানামুখী প্রচেষ্টা দেশেও চলমান রয়েছে। ব্যয় সংকোচনে অধিকতর পরিকল্পিত পন্থা অনুসরণ করা হলে রিজার্ভ সমৃদ্ধির পথে এগোবে। এটি সত্য, একটি দেশের আমদানি ব্যয় মেটানো, বাজেট বাস্তবায়ন, বৃহৎ প্রকল্পে অর্থের জোগান, বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ, আর্থিক বিপর্যয় মোকাবিলা, স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন রোধ, মুদ্রানীতি শক্তিশালীকরণসহ নানামুখী অর্থনৈতিক কর্মযজ্ঞে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অর্থ বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিকল্পনা অনুযায়ী সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ভাঙচুরসহ আন্দোলনের কারণে দেশের অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অবশ্য সে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো নিরূপণ করা হয়নি। তবে দীর্ঘদিন থেকে চলে আসা ডলার সংকট এখন আরো তীব্র হয়েছে। ফলে বিপর্যস্ত অর্থনীতির ক্ষত সারিয়ে চাঙ্গা করতে হলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শক্তিশালী করতে হবে। রিজার্ভ সংকটের পেছনে প্রধানত দুইটি কারণ দায়ী; রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও করোনা মহামারি। মূলত করোনা মহামারি পরবর্তী সময় ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক বাজারে জ¦ালানিসহ বিভিন্ন জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি পায়। এতে আমাদের দেশের আমদানি ব্যয়ও বৃদ্ধি পায়। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্যমতে, ২০২০-২১ অর্থবছরের চেয়ে ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রায় ৪৬ শতাংশ আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছিল। এতে ওই সময় ইতিহাসে রেকর্ড পরিমাণ বাণিজ্য ঘাটতির মুখে পড়ে বাংলাদেশ। যার পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল প্রায় ৩৩ দশমিক ২৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। একই বছরে ব্যালান্স অব পেমেন্টে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ১৮ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এতে বৈদেশিক মুদ্রা ডলারের সংকট দেখা দেয়। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে চাহিদামতো বাজারে ডলার ছাড়তে হয়। যার প্রভাব পড়ে রিজার্ভের ওপর। বর্তমানে রিজার্ভের যে অবস্থা, তা আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতির জন্য শঙ্কার। সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন এক ক্রান্তিকাল পার করছে। ডলারের বিপরীতে টাকার মানে ধস নেমেছে। বৈদেশিক বাণিজ্যেও পড়েছে দেশজুড়ে চলা অস্থিরতার প্রভাব। দীর্ঘদিন ধরে চলা ডলার সংকট আরো তীব্র আকার ধারণ করেছে। এমতাবস্থায় রিজার্ভ বৃদ্ধির জন্য আমাদের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া বিদেশি ক্রেতা ও ব্র্যান্ডের কাছে বাংলাদেশি পণ্য পৌঁছানোর জন্য প্রযুক্তি বহুমুখীকরণের দিকে নজর বাড়াতে হবে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধিতে বিনিয়োগ বহুমুখীকরণের দিকেও গুরুত্ব দিতে হবে।