×

সম্পাদকীয় ও মুক্তচিন্তা

বন্যা মোকাবিলায় প্রয়োজন স্থায়ী সমাধান

Icon

নুসরাত সুলতানা

প্রকাশ: ৩০ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

 বন্যা মোকাবিলায় প্রয়োজন স্থায়ী সমাধান

বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে বন্যা অন্যতম। ভূপ্রকৃতিগত অবস্থা, আন্তর্জাতিক নদীতে পানি বণ্টন সমস্যা, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, নদীগুলোর অবৈধ ভোগদখল, জলবায়ুগত পরিবর্তন ইত্যাদি কারণে বাংলাদেশে প্রতি বছরই বন্যাকবলিত হয়ে ৬০ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়। চলতি বছরেও সিলেট বিভাগে ৭ বার বন্যা হয়েছে। আর স¤প্রতি ভারত ত্রিপুরার ডাম্বুর বাঁধের স্লুইস গেট না জানিয়ে খুলে দেয়ায় আকস্মিক বন্যার কবলে পড়ে ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, খাগড়াছড়ি, ল²ীপুরসহ দেশের ১২টি জেলা। স্মরণকালে এমন ভয়াবহ বন্যায় ৫০ লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়াসহ এখন পর্যন্ত ৫২ জন মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। তার সঙ্গে তিস্তা নদীর ফারাক্কা বাঁধ খুলে দেয়ায় প্রতিদিনে ১১ লাখ কিউসেক পানি দেশে প্রবেশ করবে এতে উত্তরবঙ্গেও বন্যার আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে। গত বছরও তিস্তার ফারাক্কা বাঁধ খুলে দেয়ায় ফ্লাশ ফ্লাডের সম্মুখীন হয় উত্তরবঙ্গের মানুষ এবং ৮ বার তিস্তা এলাকায় বন্যা হয়। শুধু ফারাক্কা কিংবা ডাম্বুর বাঁধ না বিভিন্ন মাধ্যমে জানা গেছে, বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে ৫৪টি প্রধান নদী রয়েছেন যার সবটির উৎস ভারতে আর ভারতে ৪৭টি নদীর ওপরই প্রায় ৫ শতাধিক ছোট-বড় বাঁধ কিংবা নদীর গতিপথ নিয়ন্ত্রক স্থাপন করেছে। বাংলাদেশ ভারতের এই নদীর পানি বণ্টন নিয়ে যৌথ কমিটি গঠন করা হয়েছে কিন্তু তা শুধু ফারাক্কা বাঁধে পানির ন্যায্য হিস্যা নিয়ে চুক্তি করা হয়। বিভিন্ন সময়ে নানা চুক্তি করার পরও ভারত নিজেদের খেয়াল খুশিমতো বাঁধ খুলে দেয়, বন্ধ করে। শুষ্ক মৌসুমে যখন নদীতে পানির প্রয়োজন তখন ভারত বাঁধ বন্ধ রাখে যাতে করে বাংলাদেশে খরা দেখা দেয়াসহ কৃষি কাজের ক্ষতি এবং অধিক অর্থ ব্যয় করে সেচ কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়। এমনকি নদী তার স্বাভাবিক গতিপ্রকৃতি হারিয়ে ফেলে। আর যখন তাদের দেশে বন্যার শঙ্কা দেখা যায় তখন কোন পূর্ব সতর্কতা কিংবা চুক্তির পরোয়া না করেই বাঁধ খুলে দেয় ফলস্বরূপ বর্তমানে এমন ভয়াবহ বন্যার কবলে দেশ। দেশে অতিবৃষ্টিপাতে পানিবন্দি মানুষ তার ওপর বাঁধ খুলে দেয়ায় উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। ত্রাণ এবং উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনায় দেশের সর্বস্তরের মানুষ এগিয়ে এসেছে বন্যার্তদের পাশে। কিন্তু ক্রমাগত উজানের ঢল এবং বৃষ্টিপাতের কারণে অনেক জায়গায় পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে। পানির স্রোতে গোমতী নদীর বাঁধ, নোয়াখালী মুছাপুর বাঁধসহ কিছু জায়গায় বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় পানি লোকালয়ে ঢুকে নতুন করে অনেক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রে পানি ঢুকে যাওয়ায় অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থার আরো অবনতি হয়। ত্রাণ বিতরণেও সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। বাইরের জেলা থেকে কেউ ত্রাণ নিয়ে আসলে যোগাযোগ অভাবে এবং সঠিক বন্যাকবলিত এলাকা চিহ্নিত করতে না পেরে অনেক বন্যাকবলিতরা সাহায্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এমনকি এলাকার অনেক জায়গায় দেখা যাচ্ছে নিজের পরিচিতদের ত্রাণ প্রদান করছে, কেউ ত্রাণ দিতে চাইলে ও নিজের লোকদের দেখিয়ে দেয়া হয় ত্রাণ প্রদান করতে। এতে এক জায়গায় যারা ত্রাণ পায় তারা বারবার পেতে থাকে, অনেক জায়গায় কেউ একবারও পায় না। ত্রাণ বিতরণে এই অসামঞ্জস্য দূর করতে হবে। বারবার বন্যার কারণে অর্থনৈতিকভাবে দেশ ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের এখন সময় এসেছে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলা এবং আন্তর্জাতিক নদীর পানি বণ্টন নিয়ে স্থায়ী সমাধানে পৌঁছানো। দেশের অভ্যন্তরে কাঠামোগত সঠিক পরিকল্পনা, নদী অবৈধ দখলমুক্ত করাসহ ভারতের সঙ্গে পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে অতিদ্রুত সমাধানে যাওয়া উচিত। এভাবে ভাটির দেশকে বারবার বিপর্যয়ের মুখে ফেলে দেয়াও আন্তর্জাতিক পানিপ্রবাহ আইনের বিপরীত। তাই আন্তর্জাতিক আইনের সহায়তা নিয়ে সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ করে বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতি কমিয়ে আনতে হবে।

নুসরাত সুলতানা : শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

১৯ সেপ্টেম্বর: সারাদিন যা যা ঘটলো

১৯ সেপ্টেম্বর: সারাদিন যা যা ঘটলো

দফায় দফায় পিটিয়ে মেরে ফেলা হয় জাবির সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকে

দফায় দফায় পিটিয়ে মেরে ফেলা হয় জাবির সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকে

সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান গ্রেপ্তার

সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান গ্রেপ্তার

‘মব জাস্টিস’ নিয়ে নিজেদের অবস্থান জানালেন সমন্বয়ক নাহিদ, সারজিস ও হাসনাত

‘মব জাস্টিস’ নিয়ে নিজেদের অবস্থান জানালেন সমন্বয়ক নাহিদ, সারজিস ও হাসনাত

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত
নির্বাহী সম্পাদক: এ কে সরকার

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App